অ্যান্টার্কটিকার ৪৮৯২ মিটার উঁচু ভিনসন ম্যাসিফ ছুঁতেই ‘সপ্তশৃঙ্গ’ জয়ের কৃতিত্বের অধিকারী হলেন ভারতের মুর্শিদাবাদের সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। ‘সপ্তশৃঙ্গ’ বলতে ধরা হয় এশিয়ার এভারেস্ট, দক্ষিণ আমেরিকার আকোঙ্কাগুয়া, উত্তর আমেরিকায় ডেনালি, আফ্রিকার কিলিমাঞ্জারো, ইউরোপের এলব্রুস, অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন ম্যাসিফ, অস্ট্রেলিয়ার কার্সটেঞ্জ পিরামিড। সীমানা ও প্লেটগত কারণে ওশিয়ানিয়ার কসকিউস্কো ও ইউরোপের মঁ ব্লাঁকেও অনেকে ‘সপ্তশৃঙ্গ’-এর সম্মান দেন। এতদিন সত্যরূপের দখলে ছিল না ভিনসন ম্যাসিফ। ১৬ ডিসেম্বর তা পূরণ করে ফেলেন তিনি। এর আগে ভারতের সামরিক বাঙালি হিসেবে প্রথম সপ্তশৃঙ্গ জয় করেন সত্যব্রত দাস। সত্যরূপ সিদ্ধান্ত প্রথম অসামরিক বাঙালি হিসেবে ওই কৃতিত্ব অর্জন করায় খুশির হাওয়া মুর্শিদাবাদে। সত্যরূপের মা গায়ত্রী সংবাদমাধ্যমে জানান, ‘১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৫টায় শৃঙ্গ ছোঁয় সত্যরূপ। শনিবার সকাল ৯টায় স্যাটেলাইট কমিউনিকেটরের মাধ্যমে বাড়িতে ফোন করে বিষয়টি জানায়। কিন্তু তার আগে ১৫ ডিসেম্বর রাত জেগে ওই জিপিএস স্যাটেলাইট কমিউকেটরের সঙ্গে ডেলোর-মে লিঙ্ক করে ওর গতিবিধি লক্ষ্য করেছি। বেস ক্যাম্প থেকে রওনা দিয়ে কত নম্বর ক্যাম্পে রয়েছে, কোন ক্যাম্পে বিশ্রাম নিচ্ছে এবং শৃঙ্গ ছুঁইতে কত মিটার বাকি রয়েছে সবটাই জানতে 
পারছিলাম। কিন্তু শৃঙ্গ না ছোঁয়া পর্যন্ত টেনশনে ছিলাম। কারণ সেখানে এখন আবহাওয়া ভীষণ খারাপ চলছে। শেষ পর্যন্ত স্যাটেলাইট কমিউকেটর থেকে বুঝতে পারি ও শৃঙ্গ ছুঁয়েছে। পরে ফোন করে শৃঙ্গ ছোঁয়ার কথা জানানোর পাশাপাশি শরীর ভালো থাকার কথা জানায় সে।’ কলকাতার ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা সত্যরূপ গত ৩০ নভেম্বর বাড়ি থেকে রওনা দেন। গায়ত্রী দেবী জানিয়েছেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় এক সময় ওর গতিবিধি জানা যাচ্ছিল না। তখন পরিবারের সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। কারণ এখন সেখানে মাইনাস ৪০-৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা এবং তার আগে সত্যরূপ মেসেজ করে জানায় যে, ৯০-১০০ কি.মি. বেগে ঝড় বইছে। রাশিয়ান অভিযাত্রীদের তিনটি তাঁবু উড়ে যায়। ওরা তাঁবুর চারপাশে বরফ কেটে দেয়াল তুলে দেওয়ায় কোনোরকমে বেঁচে যায়। তা-ও ঝড়ে ওদের তাঁবু ভেঙে যায়। তবে এই অভিযানে সত্যরূপের খরচ প্রায় ৭০ লাখ টাকা। তার মধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৩৫ লাখ টাকা এবং স্পন্সরশিপ থেকে পেয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। কিন্তু ১০ লাখ টাকা কম পড়ে। তখন ফেসবুকে বন্ধুদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। তাতে চেনা-অচেনা অসংখ্য মানুষ সাহায্য করেন। সত্যরূপ সিদ্ধান্তের দলে রয়েছেন ছয়জন। তার মধ্যে নিউজিল্যান্ডের তিনজন ও অস্ট্রেলিয়ার দুজন। সপ্তশৃঙ্গ জয়ের পরপরই দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ জীবন্ত আগ্নেয়গিরির শিখর ছুঁয়েছেন সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। এটি দক্ষিণ আমেরিকার চিলি-আর্জেন্টিনা সীমান্ত লাগোয়া ‘ওজোস ডেল সালাডো’ চিলির সর্বোচ্চ পর্বত তো বটেই, পশ্চিম ও দক্ষিণ গোলার্ধের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতও। উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,৮৯৩ মিটার অর্থাৎ ২২,৫১৫ ফুট। ১৫ জানুয়ারি ভারতের সময় রাত ১০টা নাগাদ পর্বতশৃঙ্গে পৌঁছে যান সত্যরূপ। প্রথম অ্যান্টার্কটিকার ‘ভিনসন ম্যাসিফ’ জয়, তারপর দক্ষিণ মেরু এবং সব শেষে পৃথিবীর সর্বোচ্চ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি।
