শিরোনাম
শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
উদ্যোগ

স্বপ্নতরীর স্বপ্নযাত্রা

সঞ্জিত সাহা, নরসিংদী

স্বপ্নতরীর স্বপ্নযাত্রা

মানুষের কল্যাণ করতে হলে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন ভালো মন-মানসিকতার। প্রয়োজন একটি ভালো উদ্যোগের। সে জন্যই বলা হয় সৎ চিন্তা, সৎ উদ্যোগ আর সৎ চেষ্টা থাকলে মানুষের কল্যাণ সম্ভব। এমন উদ্দেশ্য নিয়েই স্বপ্নের বীজ বুনেছেন নরসিংদীর একঝাঁক তরুণ। মানবকল্যাণে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, অসাম্প্রদায়িক, অলাভজনক ও পদবিহীন সেবামূলক সামাজিক সংগঠন স্বপ্নতরী যাত্রা শুরু করে।

সময়টা ছিল ২০১৫ সালের ১ জুন। নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার কামরাবো গ্রামের তরুণ তানবীর আহাম্মেদের মাথায় এলো দেশ ও দশের জন্য কিছু একটা করার। কী করা যায়? তাই নিয়ে স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা। সেই থেকে তানবীরের বন্ধু আবদুল্লাহ আল মামুন, সুমন আহাম্মেদ, আসিফ ইকবাল ও মনির হোসেন স্বপ্নতরী সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নেন। শুরুতে পাঁচ সদস্য নিয়ে সংগঠনের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ৬৯ জন! নরসিংদী শিবপুর, কামরাবো বাজার (স্কুলসংলগ্ন) এলাকায় সংগঠনের কার্যালয় নেওয়া হয়।

স্বপ্নতরীর অর্থায়ন স্বপ্নতরীর সদস্যরাই করে থাকেন। কারও কাছ থেকে কোনো প্রকার অনুদান নেওয়া হয় না। প্রত্যেক সদস্য প্রতি মাসে ১০০ টাকা ও কর্মজীবী সদস্যরা মাসে ২০০ টাকা করে স্বপ্নতরীর ফান্ডে জমা দেন। সাধারণ মানুষের কল্যাণ করার জন্য ফান্ড থেকে একটি অটোরিকশা কিনে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ১৫০ টাকা আয় হয়। সে টাকা স্বপ্নতরীর ফান্ডে জমা হয়। তাছাড়া নতুন কেউ স্বপ্নতরীর সংগঠনের সদস্য হতে চাইলে ছাত্রদের ক্ষেত্রে ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, আর চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ১ হাজার টাকা করে জমা দিয়ে সদস্য হওয়া সম্ভব।

স্বপ্নতরী সংগঠন থেকে যেসব সেবাসমূহ পাওয়া যায় তা হলো  ‘আঁধারে আলো’ নামে স্বপ্নতরীর একটি শাখা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও এলাকাবাসীর প্রয়োজনে ফ্রি ব্লাড ডোনেট করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে স্পিড ব্রেকার রং করে দেওয়া হয়। অর্থের অভাবে যারা পড়াশোনা করতে পারে না তাদের বইপত্র কিনে দেওয়া হয়। ভর্তির টাকা জোগান দিয়ে স্কুল-কলেজমুখী করা হয়। বসতহীনদের বসতঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়। শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। তাছাড়া প্রতি ঈদে দরিদ্রদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করা হয়। এতিমখানায় সহযোগিতা করা হয়। যেসব মাদ্রাসা ও এতিমখানায় লোডশেডিংয়ের জন্য পড়াশোনার সমস্যা হয়, সেসব এতিমখানা থেকে স্বপ্নতরীর কাছে একটি আইপিএসের আবেদন করলে দেওয়া হয়। এলাকায় বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে সম্মাননা প্রদানসহ শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সবই হচ্ছে স্বপ্নতরীর সদস্যদের উদ্যোগে।

নরসিংদী শিবপুর জামগড় এলাকার মো. আবদুল হাসিমের শিশু ছেলে সানজিদ জন্মের পর থেকে চোখে দেখত না। অর্থের অভাবে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না তার বাবা। স্বপ্নতরী থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে সানজিদের চোখের অপারেশন করে চোখের আলো ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সানজিদের বাবা আবদুল হাসিম বলেন, ‘স্বপ্নতরীর সহায়তায় আমার ছেলে এখন পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছে। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।’

একইভাবে নোয়াখালীর সুবর্ণচর চরবাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মো. কামাল উদ্দিনের লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা করায় সংগঠনটি। স্বপ্নতরী সংগঠনে নিবেদিতপ্রাণ তরুণরা কেউ শিল্পপতি নন, তবু তারা প্রত্যেকে নিজেদের শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও দিনের কিছুটা সময় সাধারণ মানুষকে নিয়ে ভাবেন। তাদের এ ভাবনা থেকেই তারা নিজেদের উপার্জিত আয় দিয়ে সাধারণ মানুষের উপকার করে যাচ্ছেন। স্বপ্নতরীর  ফেসবুক পেজ : fb.com/shopnotori1424.

সর্বশেষ খবর