শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
তামাদির

সৌদিতে প্রথম নারী উপমন্ত্রী

শনিবারের সকাল ডেস্ক

 সৌদিতে প্রথম নারী উপমন্ত্রী

ড. তামাদের বিনতে ইউসুফ আল রাম্মাহ দেশটির ধারাবাহিক নারী অধিকার প্রাপ্তিকে আবারও প্রমাণ করলেন। হঠাৎ করে নারী অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে এই উদ্যোগ অনেকের কাছেই সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু তাতে কী যায় আসে, উপমন্ত্রীর পদের জন্য যোগ্যতা প্রমাণে তাকে যে সুযোগ দেওয়া হলো তা অবশ্যই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদাহরণ বলা যায়

সৌদি-আরবে প্রথমবারের মতো একজন নারী উপমন্ত্রীর পদে  নিয়োগ দিয়েছেন সৌদি-আরবের বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ। ড. তামাদের বিনতে ইউসুফ আল রাম্মাহ এই পদে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি দেশটির শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। সৌদি সাম্রাজ্যে এত উচ্চপদস্থ নিয়োগে তিনিই প্রথম নারী। স্বভাবতই ঘটনাটি সে দেশের জন্য একটি ইতিহাস সৃষ্টি করল।

খুব শিগগিরই ড. তামাদের বিনতে ইউসুফ আল রাম্মাহ দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। উচ্চশিক্ষিত তামাদের  দেশের বাইরে থেকে সম্পন্ন করেছেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে রেডিওলোজি অ্যান্ড মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ২০০৭ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ওয়ালেস ব্যাঙ্গর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তবে কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়, রিয়াদ থেকে তার স্নাতক ডিগ্রি লাভ হয়।

উপমন্ত্রীর পদ পাওয়ার আগে তিনি কিং সৌদ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এ ছাড়াও তিনি কর্মজীবনে মানবসেবামূলক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন অঙ্গনে  উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি, রিয়াদের অ্যাপ্লাইড মেডিকেল সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে ছাত্রনেতার ভূমিকায় থেকেছেন। একই বিভাগে কোয়ালিটি ও ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের সদস্য ছিলেন তিনি। একইসঙ্গে জাহরা ব্রেস্ট ক্যান্সার সোসাইটি, রিয়াদের সদস্য হিসেবে নিজের ভূমিকা রাখেন।

২০১৬ সালের শুরু থেকেই তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি হিসেবে দেশটিতে দায়িত্ব পালন করে আসছেন বলে জানা গেছে। কি কারণে মন্ত্রিসভাসহ সেনাবাহিনীর মধ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বিশ্বের কাছে সৌদি আরব রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার একটি দেশ হিসেবেই পরিচিত। এই দেশে আগের যে কোনো সময়ে নারীরা থেকেছে অভিভাকত্ব ব্যবস্থায়। যে ব্যবস্থায় একজন নারী তার পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোনো ধরনের  সামাজিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। এখন পর্যন্ত পাসপোর্ট করা, বিদেশ ভ্রমণ, বিয়ে, ব্যাংক হিসাব খোলা, কোনো ধরনের সার্জারি করা এমনকি কারাগারে সাজা ভোগ শেষে বাইরে বের হওয়ার জন্যও নারীকে অবশ্যই তার পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া হয়। কিন্তু দিন বদলের গান শুরু হয়েছে সে দেশেও। এক সময় বদলে যাবে অনেক কিছুই। বর্তমানে দেশটির নারীদের নিজ নিজ অধিকার বাস্তবায়ন হচ্ছে বৃহত্তর পরিসরে। ধাপে ধাপে অধিকার পাওয়া সৌদি নারীরা বর্তমানে ফতোয়া দেওয়ার অধিকার রাখেন।

আগের দিনে কল্পনারও বাইরে ছিল পুরুষের অনুমতি ব্যতীত নারীর ব্যবসা পরিচালনা। কিন্তু বর্তমানে সে অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারী। শুধু তাই নয় সেনাবাহিনীতে যোগদান, নিজস্ব পরিচয়পত্র বহন, ভোটাধিকার ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়েদের মোবাইল ব্যবহারের অনুমতি, স্টেডিয়ামে বসে ফুটবল খেলা দেখা, গাড়ি চালানোর মতো দুঃসাহসিক অধিকার পেয়েছেন সৌদি নারীরা। নারী হিসেবে ড. তামাদের বিনতে ইউসুফ আল রাম্মাহ দেশটির ধারাবাহিক নারী অধিকার প্রাপ্তিকে আবারও প্রমাণ করলেন। হঠাৎ করে নারী অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে এই উদ্যোগ অনেকের কাছেই সমালোচিত হয়েছে। কিন্তু তাতে কি যাই আসে, উপমন্ত্রীর পদের জন্য যোগ্যতা প্রমাণে তাকে যে সুযোগ দেওয়া হলো তা অবশ্যই নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদাহরণ বলা যায়।

সম্প্রতি সৌদি প্রশাসন বেশ কয়েকজন উপমন্ত্রীকে বরখাস্ত করেছে। এরমধ্যে ছিল মিলিটারি প্রধান, এয়ার ডিফেন্স, ভূমি প্রধান, ঊর্ধ্বতন প্রতিরক্ষা প্রধান ও গৃহায়ন মন্ত্রী। সৌদি আরবের প্রশাসনিক গঠন পরিবর্তন, দেশের উত্তোলিত তেল রপ্তানি নীতি, নতুন চাকরির পদ সৃষ্টি এবং রক্ষণশীল জীবন পদ্ধতির পরিবর্তনে সে দেশের ক্রাউন প্রিন্স প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ধরা হচ্ছে তারই প্রতিফলন হিসেবে অভ্যন্তরীণ এসব পরিবর্তন এসেছে। প্রথা অনুযায়ী গৃহীত এসব পরিবর্তন সম্পর্কে নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রধান দুই মসজিদ এবং গণমাধ্যম।

তেলভিত্তিক অর্থনীতি আর ধর্মীয় নেতাদের পরামর্শের ওপর ভর করে দেশটির অর্থনীতি পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এই রীতি থেকে কিছুটা বের হয়ে এসেছেন দেশটির ৩২ বছর বয়স্ক ক্রাউন প্রিন্স সালমান। ভিশন-২০৩০ কে সামনে রেখে তিনি দেশটিকে আরও বেশি আধুনিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এর মূলমন্ত্র জাতীয়তাবাদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন। পরিবর্তনের এই ধারা শুরু হয়েছে গত বছর থেকেই।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতাসীন যুবক সৌদি আরবের কাছে ক্রাউন প্রিন্সের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনে সক্ষম। সৌদি আরবকে তিনি তারুণ্যনির্ভর দেশে পরিণত করছেন।

 

সর্বশেষ খবর