শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঘুরে বেড়াই

নিঝুম দ্বীপের হাতছানি

নিঝুম দ্বীপের হাতছানি

নিঝুম দ্বীপ! চারদিকে সমুদ্র, নদীর মোহনা, কেওড়া বন আর সহস্র হরিণের অভয়াশ্রম এই নিঝুম অরণ্য! অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে নিঝুম দ্বীপ হলো একটি ছোট্ট দ্বীপ। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নিঝুম দ্বীপ। দ্বীপটির প্রাচীন নাম চর ওসমান। ওসমান নামের এক ব্যক্তি মহিষের পাল নিয়ে সর্বপ্রথম এই দ্বীপে বসবাস শুরু করেন। চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে এটি গঠিত। ১৪০৫০ একরের নিঝুম দ্বীপে স্বাধীনতার আগে কেউ বসবাস করত না। দ্বীপটি সম্পূর্ণ নীরব হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই ম্যানগ্রোভ বনটি বাংলাদেশের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র

 

কেন যাবেন

নিঝুম দ্বীপ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ দ্বীপটি বাংলাদেশের প্রাণ। নিঝুম দ্বীপের মূল আকর্ষণ হচ্ছে হরিণের পাল। এখানে প্রায় ৪০ হাজারের মতো হরিণ রয়েছে। নিঝুম দ্বীপে যাবেন আর হরিণ দেখবেন না, তা কি হয়। হরিণ দেখতে হলে এখানে নিঃশব্দে চলাচল করতে হবে। হৈচৈ বা সামান্য আওয়াজে হরিণ পালিয়ে যায়। নিঝুম দ্বীপে বন্য কুকুর ছাড়া আর কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। সকালে ঘুম থেকে জেগে শুনতে পাবেন অসংখ্য পাখির কলতান। নির্মল সূর্যোদয়। দুপুরের রোদে বনের ভিতরের রূপ দারুণভাবে আকর্ষিত করে পর্যটককে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে হবে ট্রেন বা চেয়ার কোচ বাসে। ট্রেনে নোয়াখালী স্টেশনে আর বাসে সোনাপুর জিরো পয়েন্টে নামতে হবে। সেখান থেকে আরেকটি বাসে বা সিএনজি অটোরিকশায় চেয়ারম্যান ঘাট যাবেন। চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সি-ট্রাকে করে হাতিয়া হয়ে নলচিরা ঘাট। সেখান থেকে জাহাজমারা বাজার পর্যন্ত পুরোটাই নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার ঘাট।

 থাকা-খাওয়া

নিঝুম রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। নামার বাজারে তেমন ভালো কোনো খাবার হোটেল নেই। যেগুলো আছে সেগুলোতে খেতে পারেন, তবে আগেই কথা বলে নেবেন। এ ছাড়া নামাবাজারে থাকার জন্য ‘নিঝুম রিসোর্ট’ রয়েছে।

দর্শনীয় স্থান

পাখির মেলা, বন্য কুকুর আর সাপের অভয়ারণ্য এই বনের সবুজ ঘাস চিরে সারা দিন দৌড়ে বেড়ায় চিত্রা হরিণের দল। গাছের ফাঁকে একচিলতে সোনালি ঝিলিক! হরিণের পাল! দেখতে অসাধারণ। হরিণের মায়াবী চোখ দেখে যে কেউ বিমোহিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। হরিণ দেখে অনেকেই স্তব্ধ হয়ে যায় কিন্তু আবার হঠাৎ করেই উধাও। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে লুকোচুরি! এখানে বিকাল আসে মায়াবী রূপ নিয়ে। সন্ধায় দূর ‘কবিরার চর’রের ওপর দিয়ে সূর্য যখন অস্ত যাবে, সেই দৃশ্য নিশ্চিতভাবেই আপনার দেখা শ্রেষ্ঠ সূর্যাস্ত হবে! এখানে রাত নামে আরও বিপুল সৌন্দর্য আর ঐশ্বর্য নিয়ে। বনের ওপর দিয়ে থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদের আলো এসে আপনার দেহ-মন জুড়িয়ে দেবে। সেই দৃশ্য স্বর্গীয়, সেই অনুভূতি অপার্থিব! আসলে এরকমই মনে হবে নিঝুম দ্বীপের রূপ-সৌন্দর্য দেখে। নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই বললেই চলে। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ এর কম হবে না। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এ ছাড়াও শীত মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুকায়। এসব স্থানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এ ছাড়াও রয়েছে প্রায় ৪৩ প্রজাতির লতাগুল্ম এবং ২১ প্রজাতির অন্যান্য গাছ। উচ্ছ্বাস, উচ্ছলতা আর রোমাঞ্চে যারা জীবনকে অর্থবহ করতে চান তারা নিঝুম দ্বীপকে ঘিরে, সে আশা ষোলোকলা পূর্ণ করতে পারেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর