শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যাকারিয়ার হাতে সৌদি পুরস্কার

মোহাম্মদ আল-আমীন, সৌদি আরব

যাকারিয়ার হাতে সৌদি পুরস্কার

আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের কৃতিত্ব। সে কৃতিত্ব ভূষিত হয়েছে নানা সম্মাননা পদকেও। এই তালিকায় আরেকটি সম্মাননা পদক যুক্ত করেছেন বাংলাদেশি কৃতী সন্তান সৌদি আরবের আল কোরআন মিউজিয়ামের সহকারী ইনচার্জ ও বাংলা বিভাগের প্রধান যাকারিয়া মাহমুদ। পদকের মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের নামটি আরেকবার সমুজ্জ্বল হওয়ার প্রয়াস পেল। তিনি সৌদি আরবের মদিনা মনোয়ারার গভর্নর সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের ছেলে যুবরাজ ড. ফয়সাল বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের কাছ থেকে বিশেষ সম্মাননা পদক পেলেন।

দাওয়াহ, আলোচনা, অনুবাদ, হাজীদের বিভিন্ন সেবা ও মিউজিয়ামের বিভিন্ন উন্নয়নকল্পে বিশেষ অবদানের জন্য একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে যাকারিয়া মাহমুদ এ সম্মাননা অর্জন করেন। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পদকটি পেলেন। নিজের যোগ্যতা আর কর্মশক্তিকে তিনি একটি গণ্ডির মধ্যে বন্দী না রেখে নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত রেখেছেন। শিক্ষা, গবেষণা ও সেবামূলক কাজের পাশাপাশি যাকারিয়া মাহমুদ লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। ডেইলি মাই নিউজ, মাই ইসলাম ও প্রবাসীকাল ডটকমের পত্রিকাগুলো তারই প্রকাশনা ও সম্পাদনায় পরিচালিত। তিনি বর্তমানে মদিনা সাংবাদিক পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

যাকারিয়া মাহমুদকে এ সম্মাননা দেন আসমাউল হুসনা ও আল কোরআন মিউজিয়ামের প্রধান পৃষ্ঠপোষক মদিনা মনোয়ারার গভর্নর, যুবরাজ ড. ফয়সাল বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ। সম্প্রতি মসজিদে নববীর পশ্চিম পাশের ১৩ নম্বর গেটে অবস্থিত আসমাউল হুসনা মিউজিয়ামের ভিআইপি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ড. হাতেম বিন হাসান আল মারজুকি, মসজিদে নববীর পরিচালনা কর্তৃপক্ষের প্রধান, আওকাফে ব্যাংক আল রাজেহির প্রধান, মিউজিয়ামের জেনারেল সুপারভাইজার, পরিচালক ও স্থানীয় প্রশাসন এবং সরকারের বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা।

যাকারিয়া মাহমুদ বর্তমানে মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচারব্যবস্থা এবং ইসলামী রাষ্ট্র বিজ্ঞানের ওপর এমফিল গবেষক। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী আইনের ওপর ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি বাংলাদেশের ঢাকার ফরিদাবাদ মাদ্রাসা থেকে পবিত্র হিফজুল কোরআন, লালবাগ মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস ও যাত্রাবাড়ী মাদ্রাসা থেকে তাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা কোর্স সম্পন্ন করেন। এতে তার মুফতির সনদ লাভ হয়। এ ছাড়াও যাকারিয়া মাহমুদ ইসলামী অর্থনীতি, আরবি ভাষা ও সাহিত্য এবং পবিত্র কোরআনুল কারিমের তাফসিরের ওপর বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশি এ স্কলার মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের আগে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রামে লেখাপড়া করেন। সেখান থেকে রাজকীয় সৌদি আরব সরকারের স্কলারশিপ অর্জন করে ২০০৮ সালে উচ্চশিক্ষায় মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান।

যাকারিয়া মাহমুদের বাবা মুহাম্মাদ হাবীবুল্লাহ, মা মৃত আমিনা খাতুন। চার ভাই বোনের মধ্যে যাকারিয়া মাহমুদ চতুর্থ। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায় হলেও তিনি ঢাকার মিরপুরে স্থায়ীভাবে সপরিবারে বসবাস করতেন। বর্তমানে তিনি সপরিবারে মদিনা মনোয়ারায় আছেন। মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্কলারশিপের অধীনে তার ও তার পরিবারের যাবতীয় খরচপত্রাদি দিয়ে থাকে।

ব্যক্তিজীবনে যাকারিয়া মাহমুদ বিবাহিত। স্ত্রী দাওরায়ে হাদিস (এমএ) পাস। এই দম্পতির দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে যাহ্রা-ই-বেহেশতী। বাবার মতো মেয়েও দেখিয়ে চলেছেন মেধার স্বাক্ষর। মাত্র সাত বছর বয়সে সাত মাসে মদিনা মনোয়ারা থেকে পবিত্র কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেছে। যাকারিয়ার স্ত্রীও কম নন, মাত্র চার মাসে মদিনা মনোয়ারা থেকে পবিত্র কোরআনের হাফেজ হয়েছেন। যাকারিয়া মাহমুদের স্ত্রী বর্তমানে মানাহিল ইন্টারন্যাশনাল গার্লস মাদ্রাসা মদিনার শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত।

সর্বশেষ খবর