শনিবার, ৫ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

শাকিলের ট্রিগারে নতুন স্বপ্ন

শনিবারের সকাল ডেস্ক

শাকিলের ট্রিগারে নতুন স্বপ্ন

বিশ্বমানের যে কোনো প্রতিযোগিতার আসরে পুরস্কার অর্জনই দেশের জন্য গৌরবের। ১১ এপ্রিল ছেলেদের ৫০ মিটার পিস্তলে রুপা জিতে সেই গৌরবে আরেকটি পালক জুড়ে দিলেন শাকিল আহমেদ। ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের একই ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি গুয়াহাটির কাহিলিপাড়া শুটিং রেঞ্জে সেদিন ইতিহাস গড়েছিলেন তরুণ শাকিল আহমেদ। বাংলাদেশের ইতিহাসে জিতেছিলেন ফ্রি পিস্তল গেমসে প্রথম আন্তর্জাতিক সোনা। সেটা নিঃসন্দেহে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ছিল।

 

ফাইনালে ২২০.৫ স্কোর করে রুপা জিতেছেন খুলনার ছেলে শাকিল। ২২৭.২ পয়েন্ট পেয়ে গেমস রেকর্ড গড়ে সোনাজয়ী অস্ট্রেলিয়ার ড্যানিয়েল রেফাকোলি। আর এই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ উঠেছে ভারতের ওমপ্রকাশ মিথারওয়ালের গলায়। ওমপ্রকাশের স্কোর ২০১.১। এবারের প্রতিযোগিতায় ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে অংশ নিয়েছিলেন শাকিল। কিন্তু সেদিন খুব বেশি ভালো করতে পারেননি। ফাইনালে উঠলেও ষষ্ঠ হয়ে প্রতিযোগিতা শেষ করেন। কিন্তু নিজের প্রিয় ইভেন্টে আর সেই সুযোগ হাতছাড়া করেননি। যখন শেষ দিকের শটে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করলেন ভারতের শুটার ওমপ্রকাশ, মুহূর্তেই টেলিভিশন ক্যামেরার ফোকাস ঘুরে গেল শাকিলের দিকে। পদক জয়ের মঞ্চে ওঠার পর ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ‘শাকিল, দ্য ন্যাশনাল হিরো অব হিজ কান্ট্রি।’

 

কথাটি মোটেও মিথ্যা ছিল না। কারণ  গেমসের অন্যান্য খেলায় বাংলাদেশের ছিল শুধুই ব্যর্থতা, সেখানে এই শুটিংই বাংলাদেশকে বারবার গর্ব করার উপলক্ষ্য এনে দিচ্ছে। শাকিল বাছাইয়ে ৫৪৫ স্কোর গড়ে চতুর্থ হয়ে ফাইনালে ওঠেন। পঞ্চম শট পর্যন্ত ৪৫.৯ স্কোর নিয়ে পঞ্চম স্থানে ছিলেন। ১২ শট পর উঠে আসেন তৃতীয় স্থানে। ১৮ শট পরও ১৬৫.৮ স্কোর নিয়ে তৃতীয় স্থানেই ছিলেন।

 

এই ইভেন্টে সোনাজয়ী রেফাকোলি শাকিলের চেয়ে বরাবরই এগিয়ে ছিলেন। আর শেষ দুই শটের আগে যেখানে  রেফাকোলির স্কোর ছিল ২০৮.৭, সেখানে শাকিলের ২০২.২। শুধু অস্ট্রেলিয়ান শুটারের বাজে স্কোরেই হয়তো সোনা  জেতার সম্ভাবনা থাকত শাকিলের। কিন্তু একাধিক কমনওয়েলথ গেমস ও তিনবার অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়া অভিজ্ঞ  রেফাকোলি সেই সুযোগটা দিলেনই না। ২০০৬ মেলবোর্ন কমনওয়েলথ গেমসে এই ইভেন্টে (৫০ মিটার পিস্তল পেয়ারস)  ডেভিড মুরের সঙ্গে জুটি গড়ে সোনাজয়ী ফোকোলি মারলেন ৯.২। আর শাকিল ৮.৭ পয়েন্ট করে জিতলেন রুপা।

 

শাকিলকে দিয়েই পিস্তলে নবযুগের সূচনা  দেখেছে বাংলাদেশ। রাইফেলের চেয়ে পিস্তলের গুলি তুলনামূলক ব্যয়বহুল। এ জন্য অতীতে পিস্তলের অনুশীলন হতো কম। সাফল্যও সেভাবে ধরা দেয়নি। কিন্তু এবার ফেডারেশন ও সেনাবাহিনী অনুশীলনে কার্পণ্য রাখেনি। সাফল্যও আসছে এতে। এর আগে বাংলাদেশকে সেই ১৯৯০ অকল্যান্ড কমনওয়েলথ গেমসে ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে সোনা জিতিয়েছিলেন আতিকুর রহমান ও আবদুস সাত্তার নিনি। এরপর থেকে পিস্তল ইভেন্ট কখনো সেভাবে আলোচনায় ছিল না। কিন্তু শাকিলের হাত ধরে পিস্তলে আসছে আন্তর্জাতিক সাফল্য। এসএ গেমস, কমনওয়েলথ গেমসের পর নিশ্চয় শাকিলের পিস্তল একদিন নিশানা খুঁজে পাবে অলিম্পিকেও।

সর্বশেষ খবর