শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা
উসাইন বোল্ট

মুদি দোকান থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন

আবদুল কাদের

মুদি দোকান থেকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন

ওসাইন বোল্ট পাঁচবার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এ ছাড়া তিনবার অলিম্পিক স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং দলীয় সঙ্গীদের নিয়ে চারবার ১০০ মিটার রিলে দৌড়ে বিশ্বরেকর্ড ও অলিম্পিক রেকর্ডের অধিকারী। ক্রীড়াপ্রেমী ব্যক্তিবর্গ মনে করেন যে, বোল্ট পৃথিবীর সর্বকালের দ্রুততম মানব হিসেবে পরিচিত। তিনি ১০০ মিটার দৌড় ৯.৫৮ সেকেন্ডে এবং ২০০ মিটার দৌড় ১৯.১৯ সেকেন্ডে শেষ করেন। বোল্ট নিজের করা বিশ্বরেকর্ড ২০১০ সালে ভেঙে ফেলেন। ২০১৬ সালের রিও অলিম্পিকে ৯টি সোনা জয় করেন—

 

পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন মানুষ ওসাইন বোল্ট। ৯.৬৯ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন। তার পূর্ববর্তী দ্রুতগতির রেকর্ড ছিল ৯.৭২ সেকেন্ড। তিনি পাঁচবার বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। নিজেই আবার নিজের রেকর্ড ভাঙেন। রেকর্ড ভাঙা গড়ার খেলায় নিজেকে অতিমানবের পর্যায়ে ফেলে দিয়েছেন এই গতিমানব। 

 

জন্ম ও পরিবার

ওসাইন বোল্ট জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৬ সালের ২১ আগস্ট। জ্যামাইকার ছোট শহর শেরউড কনটেন্ট নামের ছোট্ট গ্রামে জন্ম নেন এই গতিমানব। সেখানেই বাবা ওয়েলেসলি, মা জেনিফার বোল্ট, ভাই সাদেকি ও বোন শেরিনকে নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বেড়ে ওঠা। শুরুতে খুব গরিব ছিলেন উসাইন বোল্ট ও তার পরিবার। তার বাবা ছিলেন সামান্য মুদি দোকানদার। বাবার সঙ্গে মাও দোকান চালাতে সাহায্য করতেন। একটু বড় হওয়ার পর থেকেই উসাইন বোল্টকেও চাল-ডাল বিক্রি করতে হয়েছিল বাবা-মায়ের সঙ্গে। এই মুদি  দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই কোনোরকমে চলতো তাদের সংসার।

 

ছেলেবেলা ও দৌড়বিদ হয়ে ওঠা

ছোট বেলায় ভাই ও বন্ধুদের সঙ্গে গ্রামের রাস্তায় ক্রিকেট ও ফুটবল  খেলে সময় কাটত বোল্টের। এই দুটি খেলার প্রতিই বোল্টের প্রচণ্ড ভালো লাগা রয়েছে। খেলতেনও ভালো। তবে যে কোনো খেলার মাধ্যেই সারাক্ষণ দৌড়ের উপরেই থাকতেন ওসাইন বোল্ট। একটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার, বোল্ট ক্রিকেট, ফুটবল যখন যেটা পেতেন সেটাই খেলতেন।  ওয়েলডেসিয়া প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র ছিলেন। সেই স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্প্রিন্ট ট্র্যাকে ১ম পা পড়ে বোল্টের। হ্যাঁ, শুরুতেই বাজিমাত করেন বোল্ট। ১০০ মিটারে স্কুলের সেরা দৌড়বিদ হন তিনি। সব রকম খেলায় পারদর্শী ছিলেন ওসাইন বোল্ট। তবে ছোটবেলা থেকে ক্রিকেটের দিকেই এগোচ্ছিলেন বোল্ট। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর বোল্টের ক্ষিপ্রগতি চোখে পড়ে তার ক্রিকেট কোচের। তার অনুপ্রেরণায় দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন বোল্ট। বোল্টের প্রতিভা বুঝতে পেরে অলিম্পিকের সাবেক এক স্প্রিন্টারও বোল্টকে পরামর্শ দেন অ্যাথলেটিক্সে  মনোযোগ দেওয়ার জন্য। জ্যামাইকার হয়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলের ইভেন্টে প্রথম অংশ নেন ২০০১ সালে। প্রথমবার অংশ নিয়েই ২০০ ও ৪০০ মিটারে জিতে নেন রুপা। এরপর থেকে বোল্ট নিজের প্রতি প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। একই বছর হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব যুব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে তার প্রমাণও রাখেন ওসাইন বোল্ট। ২০০ মিটারে অংশ নেন তিনি। কিন্তু ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও তখন পর্যন্ত ক্যারিয়ার সেরা টাইমিং ২১ দশমিক ৭৩ সে. করেন। এরপর থেকে আর তার দুই পা ছুটে চলছে তো চলছেই। গড়ে চলেছেন একের পর এক অনন্য কীর্তি।

 

অনন্য কীর্তি

তিনবার ২০০ মিটার স্প্রিন্ট জয়ী বিশ্বের প্রথম অ্যাথলেট উসাইন বোল্ট। দুইবার করে জিতেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল জনসন ও ক্যালভিন স্মিথ। দুইবার ১০০ ও ২০০ মিটারের ‘ডাবল’ জয়ের একমাত্র কীর্তিও বোল্টের। ৫টি ব্যক্তিগত স্বর্ণ জিতে বোল্ট স্পর্শ করেছেন আরও দুই কিংবদন্তি কার্ল লুইস ও কেনেনিসা বেকেলেকে। মাইকেল জনসন ও সের্গেই বুবকা অবশ্য এগিয়ে। এ দুজন জিতেছেন ৬টি করে ব্যক্তিগত স্বর্ণপদক। ৮টি স্বর্ণ জয়ের বিরল রেকর্ডও ওসাইন বোল্টের। এই রেকর্ডে বোল্টের সঙ্গী কার্ল লুইস ও মাইকেল জনসন। কার্ল লুইস তিনটি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে জিতেছিলেন ৮টি স্বর্ণ। মাইকেল জনসনকে ৮টি স্বর্ণ জিততে খেলতে হয়েছিল ৫টি আসর। মস্কোতে ৩টি স্বর্ণ জিতে উসাইন বোল্ট স্পর্শ করেছেন এই দুজনকে। মেয়েদের মধ্যে অবশ্য ৮টি স্বর্ণ আছে মার্কিন স্প্রিন্টার অ্যালিসন ফেলিক্সের।

 

অবসরের ঘোষণা

২০১৬ সালে অনুষ্ঠেয় রিও ডি জেনিরো অলিম্পিকের পর ট্র্যাক থেকে বিদায় নেবেন বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন ওসাইন বোল্ট। এতে তার ভক্তরা ব্যাথিত হলে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন উসাইন বোল্ট। ২০১৬ সালে অবসর তিনি। অংশ নেন ২০১৭ সালের লন্ডন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও। অবসর প্রশ্নে আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন এই দ্রুততম মানব। ওসাইন বোল্ট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বলেন, ‘রিওর পরই অবসর নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভক্তরা চায়, আমি যেন অন্তত আরও একটা বছর খেলে যাই। আমার স্পন্সররা একই মত দিয়েছে। কোচও বলেছেন, এটা করা যেতে পারে।

 

বিশ্বচ্যাম্পিয়নের খাওয়া-দাওয়া

বোল্টের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় ২০০৮ সালের  বেইজিং অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য সেখানে ১০ দিন ছিলেন। প্রথম দিন তিনি মধ্যাহ্ন ভোজে ২০টি মুরগির একটি প্যাকেট নেন। এরপর রাতের খাবারেও একই রকম ২০টি মুরগির আরেকটি প্যাকেট সাবাড় করেন। কিন্তু পরের দিন থেকেই তার মুরগি আসক্তি প্রবল আকার ধারণ করে। সকালের নাস্তায় তিনি ২০ মুরগির দুটি প্যাকেট সাবাড়ের পর মধ্যাহ্ন ভোজে একটা এবং সন্ধ্যায় আরও দুটি প্যাকেট ভক্ষণ করেন। এই মুরগিগুলোর সঙ্গে তিনি অ্যাপল পাই এবং কিছু সবজিও নিতেন।

 

পাঁচবার বর্ষসেরা

উসাইন বোল্ট সর্বমোট পাঁচ বার বর্ষসেরা অ্যাথলেট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে টানা তিনবার তিনি বর্ষসেরা পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৮, ২০০৯, ২০১১, ২০১২ ও ২০১৩ এই পাঁচ বছর তিনি বর্ষসেরার পুরস্কার জয় করেন। মাঝখানে ২০১০ সালে হেরে যান দৌড়বিদ ডেভিড রুডিশার কাছে।

সর্বশেষ খবর