শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্ব মূকাভিনয় সম্মেলনে মৌসুমী ও শামীম

মনির হোসেন

বিশ্ব মূকাভিনয় সম্মেলনে মৌসুমী ও শামীম

পৃথিবীর সব মানুষ যদি ভিন্নতা আর বৈরিতা ভেঙে শুধু একটি ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় তবে সেটা কোনো ভাষা হবে? হ্যাঁ, অবশ্যই তা হবে ইশারায় ভাব প্রকাশ বা অঙ্গভঙ্গির ভাষা। এটি জগতের আদি ও অকৃত্রিম, শাশ্বত ও সর্বজনীন ভাষা। কালের পরম্পরায় দেহের আর শরীরের এই ভাষাকে শিল্পে সংজ্ঞায়িত করা হয় মূকাভিনয় বলে। এই তো! বেশ কিছুদিন আগে এই মূকাভিনয় শিল্পের আন্তর্জাতিক সম্মেলন দেখা গেছে সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডে। ওয়ার্ল্ড মাইম অর্গানাইজেশনের আয়োজিত এই সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে এশিয়ার চারটি দেশ বাংলাদেশ, জাপান, চীন এবং শ্রীলঙ্কা। এতে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন মূকাভিনেতা, নির্দেশক, প্রশিক্ষক ও ঢাকার রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টারের পরিচালক নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী এবং গাজীপুরের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দলের সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল হাসান শামীম। শহীদুল হাসান নিজেও একজন মূকাভিনেতা, নির্দেশক ও প্রশিক্ষক। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে মূকাভিনেতা ফারজানা তুলে ধরেন বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস এবং শহীদুল হাসান উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের মূকাভিনয়ের ইতিহাস ও চর্চারীতিবিষয়ক একটি গবেষণা প্রবন্ধ।

মূকাভিনয়ের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শহীদুল হাসান জানান, ‘ছেলেবেলা থেকেই আমি চার্লি চ্যাপলিনের ভক্ত। তার নির্বাক অভিনয় আমার খুব ভাবায়। কথা না বলেও কত কিছু বুঝানো যায়! এটা যেন এক বিস্ময়। সেই থেকেই মূকাভিনয়ের নেশা চেপেছে এবং এখন অবধি চলছে। ‘৯৯ সালে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত পক্ষ কালব্যাপী প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করি। যেখানে প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী যার সঙ্গে আমি এ আন্তর্জাতিক মূকাভিনয় সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি।’

২০০০ সালে শহীদুল হাসান শামীম গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল। এর মধ্য দিয়েই গাজীপুরে শুরু হয় মূকাভিনয় চর্চার। দলটির ১৬ নাটক করেছে যা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও ৪০০-এর বেশিবার মঞ্চস্থ হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল চ্যাপলিন মূকাভিনয় উৎসব আয়োজন করে আসছে। যেখানে দেশের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকেও বিভিন্ন দল অংশ গ্রহণ করে। তার স্বপ্ন একটি মূকাভিনয় প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট করা। যার নাম দিতে চান বাংলাদেশ পেন্টোমাইম ইনস্টিটিউট। শামীম মূকাভিনয়ের শিক্ষা নেন  কিংবদন্তি মূকাভিনয় শিল্পী জিল্লুর রহমান জন, কাজী মশহুরুল হুদা, ভারতের পদ্মশ্রী নিরঞ্জন গোস্বামী, শ্রী বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ও অঞ্জন দেবের মতো বিখ্যাত মূকাভিনেতাদের কাছ থেকে। নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। বাবা, মা, নানা, নানী সবাই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৩ সালে ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাটক ও নাটকতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন ১৯৯৮ সালে। সঙ্গে ভারত উপমহাদেশের মূকাভিনয়ের প্রবক্তা শ্রী যোগেশ দত্ত পরিচালিত ‘যোগেশ মাইম একাডেমি’তে ১৯৯৩ সালে ভর্তি হন এবং চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশে প্রথম ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে পক্ষ কালব্যাপী মূকাভিনয় কর্মশালার মুখ্য প্রশিক্ষক হিসেবে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষ করেন। ঢাকায় ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মূকাভিনয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও চর্চা কেন্দ্র ‘রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টার’। তিনি নিজের উদ্যোগে ‘রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টার’ হতে ২০১৫ সাল হতে বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মূকাভিনয় মেলার আয়োজন করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ফারজানা ‘রূপঙ্কর কালচারাল সেন্টার’ হতে নিজ উদ্যোগে ও অর্থায়নে বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় মূকাভিনয় কর্মশালার এক প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পের পরিচালক ফারজানা নিজে, সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন মোহাম্মদ শহিদুল হাসান শামীম এবং মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ডাবলু। ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের আওতায় ৬টি জেলায় মূকাভিনয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। নাদেজদা ফারজানা মৌসুমী ও শহীদুল হাসান শামীম মনে করেন এ মূকাভিনয় শিল্প সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর