শনিবার, ১৯ মে, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বমানের সার্ফিং সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

বিশ্বমানের সার্ফিং সম্ভাবনায় বাংলাদেশ

বিশ্বজুড়ে সার্ফিংয়ের জয়জয়কার। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে নারী-পুরুষ সমানতালে সার্ফিং করছেন। এজন্য কক্সবাজারই সার্ফিংয়ের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য স্থান। পরবর্তীতে এ সার্ফিং সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সৈকতের ঢেউয়ের সঙ্গে সার্ফিংয়ে লড়াই করছেন নারী-পুরুষ। এদিকে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কক্সবাজার সার্ফিংয়ের জন্যও বেশ উপযুক্ত। গিরি তটিনীর শ্যামসুন্দর বনবীথিকা, সাগর আর উদার আকাশের মনোরম ভালোবাসায় সিক্ত কক্সবাজার। এখানে রয়েছে সাগরের স্বচ্ছ নীলাভ জলরাশি। পানির নিচে নেই ধারালো কিছু কিংবা প্রবাল। সেই সঙ্গে নেই ভয়ঙ্কর সামুদ্রিক প্রাণীর কোনো ঝুঁকি। আর এসব সুবিধাই কক্সবাজারকে করে তুলেছে সার্ফিংয়ের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্রসৈকতে বহু আগে থেকে সার্ফিং চালু থাকলেও বাংলাদেশে সার্ফিংয়ের শুরুটা ২০০০ সালে। তবে দেরিতে হলেও এখন বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে বিদেশি মাত্রই মূল ঝোঁক থাকে সার্ফিংকে ঘিরে। আসলে সার্ফিংটা কক্সবাজারে এখনো নতুনের পর্যায়ে রয়েছে। নতুন হলেও এর বেশ সম্ভাবনা দেখছেন সার্ফাররা। সম্ভাবনার কথা বলছেন ঘুরতে আসা বিদেশি পর্যটক ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের কর্মকর্তারাও। সাধারণত কক্সবাজার বিচের কলাতলী, সুগন্ধা, লাবণী ও শৈবাল পয়েন্টে দিনভর সার্ফাররা মগ্ন থাকেন জলক্রীড়ায়। গর্জন তোলা সমুদ্রের ঢেউ বেয়ে লাফিয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর জলনৃত্য উপভোগ কিংবা সৈকতে আসা পর্যটকদের চিত্তবিনোদন খোরাকই শুধু নয়, সমুদ্রে নামা মানুষের জীবন রক্ষাকারী হিসেবেও কাজ করছেন সার্ফাররা। কেউ কেউ আবার একেবারেই লাইফ সেভিংয়ের কাজ করছেন। অল্প সময়েই কক্সবাজারের শতাধিক সার্ফার জাতীয়ভাবে পরিচিত করে তুলেছেন নিজেদের। বাংলাদেশ সার্ফিং ফেডারেশন গত কয়েক বছর ধরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা আয়োজন করে আসছে। এতে প্রায় শতাধিক সার্ফার নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ২০ জনের অধিক নারী সার্ফারও রয়েছেন। এদের অধিকাংশের পরিবারেই ‘নুন আনতে পানতা ফুরায়’ অবস্থা। কক্সবাজারের সার্ফার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একেকটি সার্ফিং বোট যেন অন্যরকম পাওয়া। হতদরিদ্র পরিবারের এসব সন্তানই এখন লাল সবুজের পতাকার সার্ফিং আইকন। কক্সবাজারে সার্ফিংয়ের যাত্রা শুরুর গল্পটাও নেহায়েত মন্দ নয়। ১৯৯৬ সালে সার্ফিং বোট নিয়ে কক্সবাজারের উত্তাল তরঙ্গে দোল খেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন লোন সার্ফার টম বাওয়ার্ডের নেতৃত্বে আসা একদল অসি-মার্কিন সার্ফার, তারা এদেশীয়দেরও অভিভূত করেছিলেন সে সময়। বিদেশি সার্ফারদের এই ঢেউয়ের নৃত্য দেখেই শখ জাগে বর্তমানে সার্ফিং আইকন হিসেবে পরিচিত জাফর আলমের। তারপর সাধনায় তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের প্রথম সার্ফার। পরে ২০০০ সালের দিকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সৈকতের অনেক শিশু হকার সার্ফিংয়ে যোগ দেয়। সৈকত বালিয়াড়ির একেকজন সার্ফার যেন একেকজন সাগরযোদ্ধা। এতেই মিলছে তাদের রুজি রোজগার, সার্ফিংটা জাফর, শাহাদাতদের বেঁচে থাকার অনুসঙ্গ হয়ে উঠেছে।

চতুর্থ জাতীয় সার্ফিং সম্পন্ন

বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএ) আয়োজিত দুই দিনব্যাপী ‘চতুর্থ  জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা ২০১৮ সম্প্রতি কক্সবাজারে শেষ হয়েছে। পুরুষ ও মহিলা বিভাগে শতাধিক সার্ফার টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেন। পুরুষ বিভাগের শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখেছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কামাল। এ নিয়ে চতুর্থবার তিনি চ্যাম্পিয়ন হন। মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন রিফা। পুরস্কার হিসেবে উভয়েই নগদ ২০ হাজার করে টাকা, একটি করে সার্ফিং বোট  ও ট্রফি লাভ করেছেন।

সর্বশেষ খবর