শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

লাকপা রির চূড়ায় বাংলাদেশ

শনিবারের সকাল ডেস্ক

লাকপা রির চূড়ায় বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো হিমালয় পর্বতমালার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লাকপা রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন বাংলাদেশের তিন অভিযাত্রী। বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড কং ক্লাবের পর্বতারোহী এম এ মুহিত, বাহলুল মজনু ও শায়লা পারভীন গত ১৭ মে ২৩ হাজার ১১৩ ফুট উচ্চতার লাকপা রি শৃঙ্গে পৌঁছান। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রেকিং ক্লাব ও স্পন্সর প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের হাতে পতাকা প্রত্যর্পণ করেন তিন অভিযাত্রী। অভিযাত্রীরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এই অভিযানে মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এসেছেন তারা। 

হিমালয় পর্বতমালার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত লাকপা রি পর্বতশৃঙ্গে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে এলেন এই তিন অভিযাত্রী।

বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড কং ক্লাবের পর্বতারোহী এম এ মুহিত, বাহলুল মজনু ও শায়লা পারভীন গত ১৭ মে ২৩ হাজার ১১৩ ফুট উচ্চতার লাকপা রি শৃঙ্গে পৌঁছান।

লাকপা রি জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের পর্বতারোহী দলটি গত ২৯ এপ্রিল নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করে। ৪ মে নেপালের রসুয়াগাড়ি সীমান্ত পার হয়ে তারা তিব্বতের ক্যারং ও তিংরি অতিক্রম করেন।

পরে ৮ মে বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান তারা। বেইজ ক্যাম্পে চার রাত ও মিডল ক্যাম্পে এক রাত কাটিয়ে তারা ১৩ মে প্রায় ২১ হাজার ফুট উচ্চতায় অ্যাডভান্স বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান।

১৭ মে রাত আড়াইটার দিকে অ্যাডভান্সড বেইজ ক্যাম্প থেকে তিন শেরপাকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের তিন পর্বতারোহী চূড়ান্ত আরোহণ শুরু করেন।

প্রায় ২০০০ ফুট খাড়া হিমবাহ ও পাথরের দেয়ালে আইস-অ্যাক্স, ক্রাম্পন ও জুমারের সাহায্যে কষ্টসাধ্য আরোহণ শেষে ১৭ মে নেপাল সময় বিকাল ৩টায় বাংলাদেশের তিন পর্বতারোহী লাকপা রি শীর্ষে আরোহণ করেন।

দুর্গম লাকপা রি জয়ের পথে দুর্গম লাকপা রি জয়ের পথে এর আগে এম এ মুহিত দুইবার এভারেস্টে আরোহণ করেছেন। বাহলুল মজনু পাঁচটি এবং শায়লা পারভীন একটি ছয় হাজার মিটার পর্বতারোহণ করেছেন।

এম এ মুহিত বলেন, ‘এই অভিযানে আমরা পুরোটা সময়ই এভারেস্ট অভিযাত্রীদের সঙ্গে বেইজ ক্যাম্পে ছিলাম। মিডল থেকে একেবারে অ্যাডভান্সড বেইজ ক্যাম্প অবধি এভারেস্ট সামিটের অভিযাত্রীরা আমাদের পাশেই ছিলেন। শায়লা ও মজনুর মনে হয়েছে, ওরা এভারেস্ট অভিযানেই আছে। প্রায় দুই-আড়াইশ শেরপা তাঁবু গেড়ে আছে। পুরো ট্রেইলে বরফের অনেক নদী পার হতে হয়েছে। হিমবাহের নিচে বরফের লুকানো নদী। সেই নদী পার হতে হয়েছে, যাকে গ্লেসিয়া বলি। ১৯ হাজার ফুট উচ্চতার মিডল ক্যাম্পে যেতে রংবুক গ্লেসিয়া, খারদা গ্লেসিয়া অতিক্রম করতে হয়েছে। ১২ মে মিডল ক্যাম্পে পৌঁছে মাত্র এক দিন সেখানে ছিলাম। ১৩ মে সকাল ৮টার দিকে আমরা অ্যাডভান্সড বেইজ ক্যাম্পের উদ্দেশে রওনা হই। রংবুক গ্লেসিয়া, পাথরের ওপর দিয়ে আমরা চলছি। নিচে বরফের নদী। পথে পথে আইসবার্গ। সূর্যের আলো পড়ছে বরফের ওপর, অসাধারণ সব দৃশ্য! সেখানে না গেলে বোঝা যাবে না।’

১৩ মে বিকালে মুহিত, মজনু ও শায়লারা যখন অ্যাডভান্সড বেইজ ক্যাম্পে পৌঁছান তখন বেশ বরফ পড়ছিল। তাদের আগে একটা দল পৌঁছে গিয়েছিল। তারা তাঁবু রেডি করে রেখেছিল। মুহিতরা সাড়ে ৪টায় পৌঁছয়। দূরে লাকপা রি দেখা যাচ্ছিল সে সময়। অ্যাডভান্সড বেইজ ক্যাম্প থেকে যার উচ্ছতা ২১ হাজার ফুট (৬৪০০ মিটার)। অ্যাডভান্স বেইজ ক্যাম্প থেকে ডান দিকে চলে গেছে এভারেস্টের পথ, ক্যাম্প-ওয়ান নর্থ পোল, এভারেস্ট সামিট। এই অ্যাডভান্স বেইজ ক্যাম্প থেকেই ডান দিকে রংবুক গ্লেসিয়া ক্রস করে যেতে হয় লাকপা রি’র দিকে।

মুহিত বলেন, ‘আমরা অ্যাডভান্স বেইজ ক্যাম্পে অবস্থান করি চার দিন। পরে ১৭ মে নেপাল সময় রাত আড়াইটার দিকে দাওয়া তেনজিং শেরপা, নিমা দরজি শেরপার নেতৃত্বে পথ চলা শুরু হয় আমাদের। প্রধান শেরপা তেনজিং শেরপা পথটা দেখে আসে। এর আগে ইউরোপিয়ানদের অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় আমরা জানতাম না, অভিযানে ঠিক কোনদিক দিয়ে উঠতে হবে।’

দুর্গম লাকপা রি জয়ের পথে দুর্গম লাকপা রি জয়ের পথে এর মধ্যেই ঘটে বিপত্তি। বরফের নদীতে পা হড়কান শায়লা পারভীন। তিনি জানান, ‘সে অভিজ্ঞতা ছিল মৃত্যুকে খু্ব কাছ থেকে দেখা।’

মুহিত বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকে পরস্পরের সঙ্গে দড়ি বাঁধা অবস্থায় ছিলাম। পথ খাড়া ছিল। বীথি পড়ে গেলে, আমরা সবাই তাকে উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ভার্টিকাল ওয়েতে মেইন রোপ ধরে যাচ্ছিলাম আমরা। ১৯২১ সালে ইংরেজ পর্বতারোহী জর্জ মেলোরি প্রথমবারের মতো এই শৃঙ্গ জয় করেন।’

সর্বশেষ খবর