শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
উদ্যোগ

দেশে তৈরি রেসিং কার

সাইফ ইমন

দেশে তৈরি রেসিং কার

বাংলাদেশেরও একটি দল নাম লিখিয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ও ব্যয়বহুল  প্রতিযোগিতায়! যদি না ভেবে থাকেন তাহলে আপনার ধারণাকে পাল্টে দেবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তারুণ্যদীপ্ত ও সাহসী তরুণের সমন্বয়ে গঠিত দল ‘টিম ক্র্যাক প্লাটুন’। দেশের অটোমোবাইল শিল্প সামনে এগিয়ে নিতে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ—

 

সবুজে ঘেরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম রেসিং কার দেখে আপনি চমকে যেতে পারেন। বাংলাদেশের রাস্তায় রেসিং কার দেখাটাই যেখানে অবাক করার বিষয় সেখানে এই রেসিং কারটি তৈরি করেছে আমাদের দেশেরই একঝাঁক উদ্যমী তরুণ-তরুণী। এতদিন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের গণ্ডিতে ঘুরে বেড়ানো এই রেসিং কারটি আগামী অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে পাড়ি জমাচ্ছে ইন্ডিয়ায়। ফাটারনিটি অব মেকানিক্যাল অ্যান্ড অটোমোটিভ ইঞ্জিনিয়ারস কর্তৃক আয়োজিত ‘এফএফএস ২০১৮’ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের একমাত্র দল হিসেবে অংশগ্রহণ করছে টিম ক্র্যাক প্লাটুন। টিম ক্র্যাক প্লাটুনের এই স্বপ্নের যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। তখন থেকেই চলছিল গাড়ি তৈরির কাজ। এই গাড়ি তৈরির মাধ্যমে দেশের অটোমোবাইল ইতিহাসে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম রেসিং কার হিসেবেই উল্লেখ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই এই গাড়ি তৈরির পেছনের মানুষগুলোও তাদের নাম ইতিহাসে লিখিয়ে নিলেন।  সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো গাড়িটির সবকিছুই রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তৈরি করা। গাড়ির স্ট্রাকচারে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক, হালকা ও শক্তিশালী উপকরণ। যা এই গাড়িতে যোগ করেছে গতি ও সমৃদ্ধ করছে এর নিয়ন্ত্রণ। প্রতিযোগিতায় সেরা দল নির্বাচনে গাড়ির মানের পাশাপাশি যা দেখা হবে, তা হলো একটি দলের ব্যবসায়িক চিন্তা-ভাবনার দক্ষতা। গাড়ির খরচ কতটা কমানো যায় এবং কীভাবে তা ব্যবসাসফল করা যায়, এসবও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই প্রতিযোগিতায়। তাই সব দিক বিবেচনায় এনেই একটি পূর্ণাঙ্গ রেসিং কার তৈরি করেছে টিম ক্র্যাক প্লাটুন।

তবে গাড়ি তৈরির পেছনের গল্পে খুঁজে পাওয়া যায় নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। অর্থনৈতিক বাধা ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে নানা জটিলতার শিকার হতে হয়েছিল টিম ক্র্যাক প্লাটুনকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বড় ভাইয়াদের অনুপ্রেরণা তাদের চলার পথকে করে তুলেছিল মসৃণ ও সুগম। তাদের এই স্বপ্ন পূরণের যাত্রায় সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. রফিকুল আলম বেগ ও সাবেক উপাচার্য ড. সিরাজুল করিম চৌধুরী। উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন ড. মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান, ড. মোহাম্মদ এমদাদুল হক এবং মো. সাইফুল ইসলাম। এবারের ইন্ডিয়া যাত্রা টিম ক্র্যাক প্লাটুনের অর্জনের ঝুলিতে যুক্ত করল তৃতীয় সফলতা। এর আগে ২০১৬ সালে তারা একটি কোয়াড বাইক তৈরি করেন এবং ২০১৭ সালে ‘ফর্মুলা স্টুডেন্ট জাপান’ প্রতিযোগিতায় জাপানের মাটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। অটোমোবাইল শিল্পে বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে টিম ক্র্যাক প্লাটুন।

 

 

রেসিং কারের স্বপ্নদ্রষ্টা টিম ক্র্যাক প্লাটুন

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল তারুণ্যদীপ্ত ও সাহসী তরুণের সমন্বয়ে গঠিত দলটির নাম টিম ক্র্যাক প্লাটুন। যারা ইতিমধ্যেই নিজেদের নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। দেশের অটোমোবাইল শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতেই টিম ক্র্যাক প্লাটুনের যাত্রা শুরু। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তাদের তাদের কাজ নিয়ে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ভারতের তামিলনাড়ুতে Quad Bike Design-2016 প্রতিযোগিতার মাধ্যমে টিম ক্র্যাক প্লাটুনের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে ‘Formula Japan’-এর মাধ্যমে তাদের রেসিং কার জগতে পদার্পণ শুরু হয়।

‘Formula Japan হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা, যার লক্ষ্যই থাকে অটোমোবাইলের নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তারুণ্যদীপ্ত ও সাহসী তরুণদের সমন্বয়ে গঠিত দল টিম ক্র্যাক প্লাটুন— দেশের অটোমোবাইল শিল্পকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাদের এই সাফল্যের পদযাত্রা বাংলাদেশের অটোমোবাইল জগতে নতুন সূর্যের আবির্ভাব ঘটাবে, এই আশা সবার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর