শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

হৃদয় কাটাছেঁড়া করি

সাবরিনা আরিফ চৌধুরী

হৃদয় কাটাছেঁড়া করি

‘আমি ঢোক গিলে বললাম— না মা, রোগীর মেয়ে গিফট করল। উনি বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, রোগীরা কখনো ডাক্তারের ওপর খুশি হয় নাকি? তোমরা ডাক্তাররা, বাংলাদেশের ডাক্তাররা যে কী চিকিৎসা কর সে তো জানতে আর বাকি নেই। যাও, আর বানিয়ে কথা না বলে পিয়াজুগুলো ভেজে ফেল। অ্যাড শেষে আবার সিরিয়াল শুরু হয়ে গেছে।’

 

ভদ্রমহিলা বিশাল এক খিলি পান মুখের মধ্যে পুরে দিয়ে আয়েশ করে চিবুতে লাগলেন। দীর্ঘ আলাপের প্রস্তুতি মনে হচ্ছে। আমি মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। আজ আমি চেম্বারে আর রোগী দেখব না বলেই দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি যখন হাঁপাতে হাঁপাতে ফর্সা মুখ লাল করে চেম্বারের দরজায় এসে— আসতে পারি? বলেই অনুমতির তোয়াক্কা না করে ধপ করে চেম্বারে বসে পড়লেন তখন আর ‘না’ করতে পারলাম না। দেড় বছর আগে উনার বাইপাস সার্জারি করেছিলাম। এরপর থেকে আমার কাছেই নিয়মিত ফলোআপে আসেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কোনো উপদেশ মানেন বলে মনে হয় না। যদিও সৌদি পোশাকে উনি আপাদমস্তক আবৃত করে এসেছেন, তবুও পাথরখচিত হিজাবের ফাঁকে মুখ দেখলেই বোঝা যায় ওজন আরও বেড়েছে। ‘বুঝলেন ডাক্তারনী, ঈদ করতে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে যাব তো, তাই ভাবলাম দেখা কইরা যাই।’ —‘ডাক্তারনী’ সম্বোধনটা শুনলেই অসম্ভব মেজাজ খারাপ লাগে। চরম বিরক্তি চাপা দিয়ে মুখে কষ্ট হাসি মেখে উনার অপ্রয়োজনীয় কথার ফুলঝুরি থেকে প্রয়োজনীয় কথাটা বের করার চেষ্টা করি। এদিকে টেবিলের ওপর রাখা ভাইব্রেশনে দেওয়া ফোনটা ভোঁ ভোঁ করছে। ইফতারের আর মাত্র দেড় ঘণ্টা বাকি। তাই বাসা থেকে গৃহকর্মে সহায়িকার পুনঃ পুনঃ ফোন আসা শুরু হয়ে গেছে। মনের অস্থিরতা চাপা দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখি। অস্থির হওয়া আমাকে মানায় না, আমি না হৃদয় কাটি। আমাকে তো ধৈর্য ধারণ করতে হবে।

রোগী দেখা শেষ হওয়ার পর এতক্ষণে রোগীর সঙ্গে আসা নারী অবয়বটির দিকে নজর পড়ল। চোখ ছাড়া তার অন্য কিছু দেখা যাচ্ছে না। লাল রঙের হাতমোজা ঢাকা হাতে সে একটি প্যাকেট আমার দিকে বাড়িয়ে দিল। ‘আপা, আমি মানারাত স্কুলে চাকরি পেয়েছি। প্রথম বেতনের টাকা দিয়ে আপনার জন্য কিনেছি।’ আপনি আম্মুর অপারেশনের সময় যেভাবে পাশে ছিলেন, এই পর্যন্ত বলে তার গলা ধরে এলো। আমি হতবাক, খুব ইচ্ছা হলো বলি, আমি কি আপনার মুখটা একটু দেখতে পারি? পরে ভাবলাম থাক। মুহূর্তে পৃথিবীটা প্রাপ্তির আনন্দে অন্যরকম হয়ে গেল। জরির পাড় দেওয়া লাল টুকটুকে সাধারণ সুতি শাড়িটা আমার দিনটাকে অসাধারণ করে দিল। গলার কাছে আবেগ জমাট বেঁধে থাকল।

বেশিক্ষণ আবেগাপ্লুত থাকতে পারলাম না। ফোন ভোঁ ভোঁ করে চলেছে। বাসা থেকে ফোন। একরকম দৌড়েই গাড়িতে উঠে স্টার্ট দিলাম। ইফতারের এক ঘণ্টা বাকি, তাও এত জ্যাম। রাস্তায় স্রোতের মতো গাড়ি। একেকটা সিগন্যালে থামতে হচ্ছে ১৫ মিনিটেরও বেশি। বুক ধক ধক করছে। ইফতারের আগে পৌঁছতে পারব তো? যেই সিগন্যাল ছাড়ল, ঠিক সেই সময়ই ধীরেসুস্থে একজন রাস্তা পার হওয়া শুরু করল। ক্রমাগত হর্ন দিচ্ছি। সেই তরুণের হেডফোনের মিউজিক ছাপিয়ে আমার হর্ন সম্ভবত পৌঁছাচ্ছে না, এত রাগ লাগে। নিজেকে দমন করি। আমি না হৃদয় কাটি? গাড়ি চালানো শুরু করতে না করতেই পুলিশ সার্জেন্ট গাড়ি থামাতে বলেন। বিস্মিত হই। নিয়মমতোই চালাচ্ছিলাম, সিট বেল্টও বাঁধা। শুনেছি ঈদের সময় নাকি সার্জেন্টরা অতি তৎপর ও দায়িত্বশীল হয়ে পড়ে। এ জন্যই কি? গাড়ি সাইড করে গ্লাস নামাই। পুলিশ সাহেব এক পলক তাকিয়েই গালভর্তি হাসি দেন। ওহ আপনি! চিনতে পারছেন আপা? মিশির মতো কালো, মোটাসোটা অতিরিক্ত ঘর্মাক্ত মুখটিকে স্মৃতির পাতায় হাতড়াই। চিনতে পারছি না তো! আপা, আপনি সেই ডাক্তার আপা না? যার স্বামী খুব অত্যাচারী! চকিতে মনে পড়ে যায় একবার তড়িঘড়ি গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। রোগীকে অপারেশন টেবিলে তোলা হয়ে গেছে। সিট বেল্ট বাঁধার কথা মনে নেই। এমন সময় এই ব্যক্তি গাড়ি আটকালেন। গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চাইলেন। আমি জানি পাঁচ দিন আগেই ফিটনেসের সময় পার হয়েছে। অতি ব্যস্ততায় রিনিউ করতে যেতে পারিনি। এখন কাগজ বের করলে জরিমানা তো দিতেই হবে। কমপক্ষে পাক্কা ১৫ মিনিট সময় নষ্ট হবে। আমি অনুনয় করে বললাম, আমি ডাক্তার, আমার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে পৌঁছতে হবে। অনুনয়ে কাজ হলো না। সম্ভবত ডাক্তার সমাজের ওপর উনার পূর্বরাগ রয়েছে। উনার মুখ আরও কঠিন হয়ে গেল। অবলা নারী বিপদে পড়লে শেষ পর্যন্ত স্বামীই ভরসা। মুখ কাচুমাচু করে বললাম ভাইয়া, সত্যি কথা বলতে কি আপনি যদি আজ আমাকে জরিমানা করেন, আমার হাজব্যান্ড আর কখনই আমাকে গাড়ি চালাতে দেবে না। আমার সঙ্গে অনেক খারাপ ব্যবহার করবে, গায়েও হাত তুলতে পারে। উনি খুবই অত্যাচারী, এই কথায় ম্যাজিকের মতো কাজ হলো। পুলিশ ভাইয়ের কঠিন মুখ মুহূর্তে নরম হয়ে এলো। যান আপা, মনে পড়েছে। মিষ্টি করে হাসি দিলাম, হ্যাঁ ভাইয়া, আমিই সেই! আজ একটু তাড়া আছে, যাই?

বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে ইফতারির আর ১৭ মিনিট বাকি। ভিতরে ঢুকেই আঁতকে উঠলাম, রান্নাঘরের দরজায় স্বয়ং আমার শাশুড়ি আম্মা দাঁড়ানো। আজ কি সিরিয়াল হচ্ছে না। না ডিসের লাইন নেই? আমার শাশুড়ি আম্মা যতক্ষণ জেগে থাকেন তার ৭০ ভাগ সময়ই জি-বাংলা বা স্টার জলসা দেখে কাটান। এতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি ছিল না। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে উনি নিজেকে সিরিয়ালের মমতাময়ী নারী আর আমাকে কুচক্রী ফন্দিবাজ পুত্রবধূ মনে করেন। আমার যে শুধু গায়ের রংটাই ফরসা কিন্তু উনার মেয়েদের মুখের ছাদ যে আমার চেয়ে বহুগুণে সুন্দর তা তিনি দিনের মধ্যে তিন-চারবার সুযোগ পেলেই আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন। ফর্সা রঙের প্রতি উনার এতটাই বিতৃষ্ণা আর কথায় কথায় এতটাই জ্বালাময়ী বক্তব্য দেন যে, উনি অনায়াসে কালো বর্ণবাদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারবেন বলে আমি মনে করি। আমাকে দেখেই উনি ফেটে পড়লেন, তুমি এতক্ষণে এলে? তুমি কী মনে কর, তুমি ছাড়া আর কেউ চাকরি করে না, কানাডায় আমার মেয়েরা চাকরি-সংসার সবকিছু কেমন গুছিয়ে করছে, ওখানে তো কোনো কাজের লোকও নেই। ওদের কাছ থেকে কিছু শিখলেও তো পার! এরপর উনার চোখ গেল রোগীর দেওয়া শাড়ির প্যাকেটের দিকে! ও, শপিংয়ে গিয়েছিলেন ম্যাডাম! তাই তো বলি, ‘এই বলে উনি ঠোঁট ও ভ্রু যে ভঙ্গি করলেন বুঝলাম তা দীর্ঘদিন সিরিয়াল দেখারই সুফল। আমি ঢোক গিলে বললাম— না মা, রোগীর মেয়ে গিফট করল। উনি বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, রোগীরা কখনো ডাক্তারের ওপর খুশি হয় নাকি? তোমরা ডাক্তাররা, বাংলাদেশের ডাক্তাররা যে কি চিকিৎসা কর সে তো জানতে আর বাকি নেই। যাও, আর বানিয়ে কথা না বলে পিয়াজুগুলো ভেজে ফেল। অ্যাড শেষে আবার সিরিয়াল শুরু হয়ে গেছে।’ আমার মনটা অসম্ভব খারাপ হয়ে গেল। এত কষ্ট করেও রোগীদের আস্থা অর্জন করতে পারি না। শাশুড়ি আম্মা বছরে দুইবার ভারতে চেকআপে যান, ওষুধ ওখান থেকে নিয়ে আসেন। এ দেশেরটা খান না। কষ্ট মনে চেপে পিয়াজু ভাজতে লাগলাম। আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, আমি না হৃদয় কাটি!!

বেগুনিগুলো ভাজতে গিয়ে এমন কিম্ভূতকিমাকার রূপ নিচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। অন্যদিন তো এমন হয় না; বেগুনির এই হাল দেখলে শাশুড়ি আম্মা নাটকীয় স্টাইলে কতটা বিদ্রূপ করবে ভাবতে ভাবতে বুক যখন ধক ধক করছে এমন সময়ে ফোন। কে ফোন করেছে দেখে মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেল। এক রোগী। প্রথম দিন যেদিন হাই ব্লাডপ্রেসার নিয়ে চেম্বারে এসেছিলেন সেদিনই তার দৃষ্টির সামনে কেমন যেন অস্বস্তিবোধ করছিলাম। এ এক বিশেষ দৃষ্টি, যা মেয়েরা সহজে বুঝতে পারে। কিন্তু রোগী! কিছু বলতে পারছিলাম না। কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা লিখে অন্যদিন আসতে বললাম রিপোর্ট নিয়ে। পরদিন সে রিপোর্ট নিয়ে হাজির, আজকের কমপ্লেন বুক ব্যথা। তাকে পরীক্ষা করতে গিয়ে অ্যালকোহলের গন্ধ পেলাম। মনে মনে চমকে গেলেও প্রকাশ করলাম না। বুকে স্টেথোস্কোপ বসাতেই সে স্টেথোসহ আমার হাতটা বুকের একটা জায়গায় চেপে ধরে বলল Mam, এখানটায় ব্যথা। চেম্বারে আমার অ্যাটেনডেন্ট ছেলেটা পাশে থাকা সত্ত্বেও একটা শিরশিরে অনুভূতি গা বেয়ে নেমে গেল। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারার প্রবল ইচ্ছা অনেক কষ্টে দমন করে প্রেসক্রিপশন লিখতে বসলাম। তার নির্লজ্জ চাউনি উপেক্ষা করেই ওষুধ লিখে দিলাম। ধৈর্য রাখতে হবে— ধৈর্য, আমি না হৃদয় কাটি!

সেই রোগীর ফোন ধরব না ধরব না করেও ধরলাম- হ্যালো। ম্যাম, কাল রাতে না ভোরের দিকে আপনাকে স্বপ্নে দেখেছি। নিজের ওপরই রাগ হলো কেন যে ধরতে গেলাম ফোনটা। হ্যালো হ্যালো দুইবার বলে লাইনটা কেটে দিলাম। ভদ্রলোক  উচ্চবিত্ত। তার আগের বেশির ভাগ রিপোর্টই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ থেকে করানো। প্রথম দিন হিস্ট্রি নেওয়ার সময় জেনেছি, দুই পুত্র ও স্ত্রী নিয়ে তার সুখের সংসার, তবে বাইরে তার এমন আচরণ কেন? সংসার কি তবে শুধুই অভ্যস্ততা... অভিনয় করে যাওয়া সামাজিকতা রক্ষায়? পাশে শুয়ে থাকা আটপৌরে স্ত্রী কি জানে যে তার স্বামীর স্বপ্নে অন্যজন হানা দেয়। নাকি স্ত্রীও দীর্ঘদিন লালিত ক্ষোভ বুকে চেপে সব জেনে আহ্লাদের মুখোশ এঁটে রাখে? জটিল চিন্তায় আমার বেগুনিগুলো আরও অখাদ্য রূপ ধারণ করল।

ইফতার-পর্ব শেষে রান্নাঘরে চুলায় চায়ের পানি চাপাতে চাপাতে লক্ষ্য করলাম আমার গৃহকর্ম সহায়িকা উশখুশ করছে। তার মানেই কোনো আবদার। পাশের বাড়ির ভদ্রমহিলা যে কত ভালো-কোনো কাজ না করিয়েই বেশি বেশি বেতন দেয় তা আমি বহুবার শুনেছি। কিন্তু চুপ করে থাকি, সে চলে গেলে সাড়ে সর্বনাশ, এমনিতে খুব বেশি অ্যাবসেন্ট করে না। কিন্তু ঈদ, পয়লা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস পালনে সে খুবই তৎপর। এসব দিবসের ভাবমূর্তি যথার্থভাবে বজায় রক্ষার জন্য সে সব ধরনের কর্মসূচি পালন করে বলে ওই সময় থেকে পনেরো দিন কাজে আসতে পারে না। ওই কয়দিন অবর্ণনীয় কষ্ট করলেও আবার যখন ভাবি, কি করমু, জীবনটা কয়দিনের! একটু সাধ-আহ্লাদ না করলে কেমনে? বলে হুমায়ূন আহমেদের নাটকের ময়নার মা স্টাইলে দার্শনিক মুখ করে তখন তাকে পুনর্বহাল না করে পারা যায় না। মোবাইলে একটু বেশিক্ষণ কথা বলা ছাড়া তার আর তেমন কোনো বদঅভ্যাসও নেই। আমি ভয়ে ভয়ে বলি, কিছু বলবেন? এবার আমি ঈদের দুই দিন আগে যামু, টিকিট পাওন যায় না। এইবার আগে থেইকা বাচ্চার বাপ টিকিট কাটছে। আমার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে গেল। মুখ থেকে রক্ত মুছে গেল। এই চেহারা দেখে পাষাণও গলে যাবে। উনিও একটু নরম হয়ে বলল, টেনশন কইরেন না। সব মসলা বাইটা সব গুচাইয়া দিয়া তারপর যামু, মাথা ঘুরতে থাকে। দুই দিন আগে কত কাজ! মনে মনে আওড়াই, ধৈর্য রাখতে হবে, আমি না হৃদয় কাটি!

চায়ের কাপ নিয়ে স্বামীর ঘরে আসি। উনি বললেন, ঈদের তো বেশি বাকি নেই। চল জাকাতের শাড়ি-লুঙ্গিগুলো কিনে ফেলি। মা বলছিলেন। ‘আমি বলছিলাম কি? এত টাকার শাড়ি-লুঙ্গি না কিনে আমার হাসপাতালে অনেক রোগী টাকার জন্য অপারেশন করাতে পারছে না, টাকাটা যদি তাদের দিতাম! আমরা কাউকে রিকশা কিনে দিতাম, কেমন হতো।’ ‘আচ্ছা তুমি সব সময় নিয়ম পাল্টাতে চাও কেন? সব সময় আম্মা শাড়ি-লুঙ্গি জাকাতের জন্য দিয়ে এসেছেন, মাদ্রাসায় টাকা দিয়েছেন। এবারও তাই করবেন।’ ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাকি। এক দিন এই নিয়ম পাল্টাবে, নিশ্চয়ই পাল্টাবে। হাসপাতালে কত গরিব হার্টের রোগী টাকার জন্য অপারেশন করাতে পারছে না অথচ অপারেশন করালেই ফিরে পেত অনেকখানি আয়ু। জাকাতের টাকাগুলো যদি হার্টের ভাল্ব কিনতে, ওষুধ কিনতে, রক্ত কিনতে দেওয়া যেত! ভাবতে ভাবতেই হাসপাতাল থেকে ফোন আসে। আমার স্বামীর কুঞ্চিত ভ্রু আরেকটু কুঞ্চিত হয়। অপারেশন করা রোগীটার হঠাৎ রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে। আবার অপারেশন করতে হবে। হার্টের পাশে ক্রমশ জমতে থাকা রক্ত বন্ধ করে দিচ্ছে তার হৃদস্পন্দন। দ্রুত করতে হবে, দ্রুত। গাড়ির চাবি হাতে নিয়ে দৌড়ে পাঁচতলা থেকে নামতে থাকি। লিফটের জন্য অপেক্ষা করার সময় নেই। পরিবারের সবাই কী ভাবছে। পিছু ফিরে দেখার সময় নেই। তারা ভাবে আমার ঘর-সংসারে মন নেই, কারও অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধা নেই। ভালোবাসার জন্য হৃদয় নেই! কিন্তু কী করব?  আমি যে হৃদয় কাটি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর