শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্বজুড়ে

কানাডার প্রাদেশিক এমপি বাংলাদেশি ডলি

শনিবারের সকাল ডেস্ক

কানাডার প্রাদেশিক এমপি বাংলাদেশি ডলি

কানাডায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো নাগরিক এমপি নির্বাচিত হলেন। ডলি বেগম নামের ওই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের হাত ধরে দেশটির অন্টারিও প্রদেশের স্কোরবোরো সাউথওয়েস্টে ১৫ বছর পর জয় পেয়েছে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এর আগে দেড় দশক সেখানকার এমপি ছিলেন লিবারেল পার্টির।

 

এখন হামেশাই শোনা যায় দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশি বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের নানা সাফল্য গাথা। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বের নানা জয়গায় তারা অংশ নিচ্ছেন রাজনীতিতে এবং সফলও হচ্ছেন। এবার কানাডায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো নাগরিক এমপি নির্বাচিত হলেন। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগম। এই জয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি বাংলাদেশি রুশনারা আলী, রূপা আশা হক ও টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, নরওয়ের এমপি বাংলাদেশি সায়রা খান এবং মালয়েশিয়ায় এমপি বাংলাদেশি আবুল হুসেনদের সারিতে যুক্ত হলেন ডলি।

এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতের হাত ধরে দেশটির অন্টারিও প্রদেশের স্কোরবোরো সাউথওয়েস্টে বহু বছর পর জয় পেয়েছে নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। এর আগে দেড় দশক সেখানকার এমপি ছিলেন লিবারেল পার্টির। স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।

সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, ৬৩টি ভোট কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী ১৯ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী হ্যারি এলিসকে হারিয়েছেন ডলি বেগম। ২০০৩ সাল থেকে হ্যারি এলিসই ওই স্থানটিতে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলে রাতেই ফল ঘোষণা করা হয়। ৬৩টি কেন্দ্রের ফলাফলে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা প্রোগ্রেসিভ কনজারভেটিভ পার্টির প্রতিনিধি গ্যারি এলিসের চেয়ে প্রায় ছয় হাজার ভোটে এগিয়ে থেকে জয় নিশ্চিত করেন ডলি। এ ছাড়া ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা লিবারেল দলীয় লরেঞ্জ বেরারদিনেত্তি এবার রয়েছেন তৃতীয় অবস্থানে। ডলি বেগম ওই প্রদেশে নিজ দলের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। পাশাপাশি স্কোরবোরো হেলথ কোয়ালিশনের কো-চেয়ার এবং ওয়ার্ডেন উডস কমিউনিটি সেন্টারের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজ করছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের মেয়ে ডলি বেগম ১১ বছর বয়সে বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে কানাডার স্কোরবোরোতে চলে যান। এর আগে কোনো বাঙালি টরন্টো, এমনকি কানাডার কোনো নির্বাচনে জিততে পারেননি। ডলি বেগম প্রথমবারের মতো  প্রোভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট নির্বাচনে জিতে শুধু কানাডায় নয়, সারা বিশ্বের বাঙালিদের জন্য ইতিহাস সৃষ্টি করলেন।

কানাডার স্কোরবোরো সাউথওয়েস্টের এমপিপি (মেম্বার অব প্রোভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট) পদপ্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগমের জন্য ভোট চেয়ে প্রচারণায় নেমেছিলেন এনডিপি নেতা এন্ড্রিয়া হারওয়াথ। গত ৮ মে কিংস্টন রোডে ডলি বেগমের কমিউনিটি অফিসের সামনে থেকে এনডিপি’র এই জনপ্রিয় নেতা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলেন।

সে সময় স্কোরবোরো এলাকার অন্য আসনের প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রচারণাকালে ডলি বেগমকে পাশে নিয়ে এনডিপি নেতা বলেছিলেন, ‘ভালো এবং মন্দ বাছাইয়ের জন্য যুদ্ধ না করে, ক্যাথলিন কিংবা ফোর্ডকে নিয়ে পছন্দ-অপছন্দের হিসাব না করে, আপনাদের সামনে আছেন অসাধারণ এক প্রার্থী,

পরিবর্তনের জন্য স্কোরবোরোতে এই প্রার্থীকে আপনারা বেছে নিন।’

এন্ড্রিয়া হারওয়াথকেও ‘পরবর্তী প্রিমিয়ার’ হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছিলেন ডলি বেগম। তিনি এনডিপির পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, এন্ড্রিয়া হারওয়াথ এবং এনডিপি মানুষ ও মানুষের সমস্যাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি বেগম এনডিপির মনোনয়ন নিয়ে স্কোরবোরো সাউথওয়েস্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। প্রভিন্সে ডলি বেগমই একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থী, যিনি এ পথে হেঁটেছেন।

কানাডীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানায়, নাগরিকদের সুবিধাদি নিয়ে ডলি বেগম বহুদিন ধরে কাজ করছেন। বাংলাদেশ থেকে ছোটবেলায়ই বাবা-মার সঙ্গে কানাডায় যান ডলি। সঙ্গে তার ভাইও ছিল। জীবনের বেশির ভাগ সময়টাই তিনি স্কোরবোরোতে কাটিয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডলি। এরপর  ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডন থেকে উন্নয়ন, প্রশাসন ও পরিকল্পনা বিষয়ে পড়েছেন স্নাতোকত্তর। ডলি বেগম প্রাদেশিক সংগঠন কিপ হাইড্রো পাবলিক ক্যাম্পেইনের প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন। এছাড়া স্কেয়ারবোরো হেলথ কোয়ালিশনের সহ-প্রধান ছিলেন তিনি। আর ডলি বেগমের হাত ধরে দেশটির অন্টারিও প্রদেশের স্কোরবোরো সাউথওয়েস্টে ১৫ বছর পর জয় পেয়েছে নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি।

সর্বশেষ খবর