শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
দিনবদল

নুরুন্নাহার বেগমের হাতে কৃষিবিপ্লব

শনিবারের সকাল ডেস্ক

নুরুন্নাহার বেগমের হাতে কৃষিবিপ্লব

২০১৮ সালে কেআইবি পদক, ২০১৭ সালে জাতীয় সবজি পদক, একই বছর নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নগদ এক লাখ টাকাসহ রাঁধুনি কীর্তিমতী অ্যাওয়ার্ড, ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক, ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক পেয়ে তিনি দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

 

এগিয়ে যাচ্ছে দেশের নারীরা। শুধু শহরের নয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরাও পারে স্বনির্ভর হতে, পারে দেশের জন্য অবদান রাখতে। এমনই একজন নুরুন্নাহার বেগম। জাতীয় কৃষি স্বর্ণপদক জিতে তা দেখিয়ে দিয়েছেন ঈশ্বরদীর এই কৃষাণী। সবাই তাকে নুরুন্নাহার বেগম নামেই চিনে। তিনি একের পর এক পদক অর্জন করেছেন তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে। নুরুন্নাহার বেগম ঈশ্বরদীর প্রত্যন্ত অঞ্চল ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী। চার দেয়ালের গণ্ডির মাঝে যার নিরিবিলি জীবন-যাপন করার কথা, তিনি এখন রীতিমতো একজন সমাজ উন্নয়নকর্মী ও নারী উদ্যোক্তা। নুরুন্নাহারের স্বামী রবিউল ইসলাম বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী। জয়নগরের চাল কল মোকামের একটি মিলে ধান চালের ব্যবসা করেন। নুরুন্নাহারের পদক তালিকাও চমকে দেওয়ার মতো। ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদক, ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নগদ এক লাখ টাকাসহ রাঁধুনী কীর্তিমতী অ্যাওয়ার্ড, ২০১৭ সালে জাতীয় সবজি পদক, ২০১৮ সালে কেআইবি পদক পেয়ে তিনি সারা দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নিবিড় সবজি, ফলমূল, পোল্ট্রি ও গাভীর খামার করে এলাকার নারীদের কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ করে  ২০১০ সালে সিটি গ্রুপ জাতীয় পুরস্কার হিসেবে নগদ সাড়ে তিন লাখ টাকা, একটি সার্টিফিকেট এবং একটি ২৪ ইঞ্চি রঙিন টেলিভিশনও পুরস্কার লাভ করেন। জয়বাংলা নারী উন্নয়ন মহিলা সমবায় সমিতি ও এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী নারী উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার এক হাজারের বেশি নারীকে সংগঠিত করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। যার সাফল্যের ছোঁয়ায় ইতিমধ্যেই অনেক নারী উপকৃত হয়েছেন এবং হচ্ছেন। তার দেখানো পথে আজ সফল দেশের আরও অনেক নারী।   কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান টেলিভিশনে দেখে অনেকের মতো নুরুন্নাহারও উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ২০০৫ সালে টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের একুট অনুষ্ঠান দেখেছিলেন। যা নুরুন্নাহারকে নতুন এক পৃখিবীর সন্ধান দেয়। নুরুন্নাহার বলেন, ‘স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে একদম অলস বসে থাকতে ভালো লাগতো না। টেলিভিশনে শাইখ সিরাজের কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে ইচ্ছে জাগে, বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার।’ প্রথমে লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, গোল আলু, পিয়াজ, রসুন, কাঁচামরিচ বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করে সাফল্য পান। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সবজি চাষ করে একদিকে সংসারের সারা বছরের চাহিদা মিটে অপরদিকে বাড়তি কিছু আয়ও হয়। পরিশ্রম, অধ্যবসায়, ধৈর্য আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রামী নারী কৃষক হিসেবে ইতিমধ্যে তিনি সারা দেশে পরিচিত। বর্তমানে নুরুন্নাহারের খামারে ১০০টি গরু, ৪ হাজার সোনালি মুরগি, ২ বিঘা জমিতে ড্রাগন, ৭ বিঘা জমিতে পেয়ারা, ৬ বিঘায় লিচু, ৫ বিঘায় পেঁপে, ২ বিঘায় কলা, ৪ বিঘায় লাউ, ৪ বিঘায় ফুল কপি, ৪ বিঘায় পিয়াজ, ৩ বিঘায় রসুন, ১ বিঘায় টমেটো, ৩ বিঘায় বেগুন, ৩ বিঘায় মটর, ২ বিঘায় গম, ৪ বিঘায় আলু, ২০ বিঘায় মশুর চাষ করছেন।

সর্বশেষ খবর