শনিবার, ৩০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা
অন্যরকম

জ্ঞানের ফেরিওয়ালা কাদের

শনিবারের সকাল ডেস্ক

জ্ঞানের ফেরিওয়ালা কাদের

আবদুল কাদেরের তেমন কোনো রোজগার নেই। বাড়িতে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। তাতেও থেমে নেই তিনি। জ্ঞান তার ফেরি করা চাই-ই চাই।

একাধিক গ্রাম ও স্কুলে বই বিলিয়ে বেড়ান। আয়োজন করেন উঠান বৈঠকের। এতে থাকে স্বাস্থ্য ও কৃষিকথা। তিনি চান হিংসামুক্ত সচেতন সমাজ...

 

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষাহীন জীবন অর্থহীন। তাই আলোকিত মানুষ গড়ার প্রত্যয়ে জ্ঞানের মশাল হাতে নিয়েছেন আবদুল কাদের। 

যদিও আবদুল কাদেরের তেমন কোনো রোজগার নেই। বাড়িতে অভাব। তবু তার জ্ঞান ফেরি করা চাই। গ্রামে গ্রামে, স্কুলে স্কুলে আবদুল কাদের বই বিলিয়ে বেড়ান। উঠান বৈঠকে নারীদের জানান স্বাস্থ্য ও কৃষি কথা। তিনি চান হিংসামুক্ত সচেতন সমাজ। টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করেন কাদের। আবদুল কাদেরের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার উত্তর বড়ভিটা গ্রামে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। জমিজমাও নেই তেমন। বড় ভাইয়ের আয়ের ওপরই নির্ভরশীল। আর টিউশনি করে পাঁচ হাজার টাকার মতো পান। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাসে স্নাতকোত্তর হয়েছেন ২০১৩ সালে। সরকারি চাকরি পাওয়ার বয়স বেশি নেই আর। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চেষ্টা করেও লাভ হয়নি সে রকম। কাদের প্রচারের জন্য নয়, ভালো লাগা থেকেই কাজ করেন বলে জানান। জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে আবদুল কাদেরের এই অসাধারণ কাজের কথা প্রথম প্রচার করা হয়। এটাই তার এ যাবৎ সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। সাড়ে ৫শ বই সংগ্রহ করেছেন তিনি। এই বইগুলো তিনি পর্যায়ক্রমে বিতরণ করেন সবার মাঝে। তারপর প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। মাসে একবার সেরা পাঠক নির্বাচন করেন। এমনকি পুরস্কারও দেন। আর এসব কাজে সার্বক্ষণিক সঙ্গী হলো তার বাইসাইকেল। সাইকেলের পেছনে একটা লোহার খাঁচা বানিয়ে নিয়েছেন। বই রাখেন, তাতে আছে একটি নিবন্ধন খাতাও। উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধের বইসহ বিভিন্ন ধরনের বই রাখেন সেখানে। কুড়িগ্রাম শহরের খলিলগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ আর কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজে চলে কাদেরের ভ্রাম্যমাণ পাঠাগার। এ পাঠাগার আছে পলাশবাড়ী ছাড়া আরও তিনটি গ্রামে। পশ্চিম পলাশবাড়ী, জোলাপাড়া, চেরেঙ্গা আর নিজ গ্রাম পূর্ব বড়ভিটায় কাদের পরিচালনা করেন মায়েদের পাঠশালা। মাসে একবার করে প্রতি গ্রামে উঠান বৈঠক করেন। বাড়ির পাশে সবজি চাষ, বৃক্ষরোপণ, ঝগড়া-বিবাদ থেকে মুক্ত থাকা ইত্যাদি ভালো কাজ সম্পর্কে সবাইকে নিয়মিত সচেতন করে আসছেন কাদের। গ্রামের নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে আলাপ করেন বৈঠকে। কাদের শুরুতে নিজ খরচে বৈঠকে সবাইকে খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধোয়ার জন্য সাবান কিনে দিতেন। এখন সবার অভ্যাস হয়ে গেছে। সবজির বীজ আর গাছের চারাও কিনে দেন আবদুল কাদের। আসল উদ্দেশ্য মানুষকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা। কাদেরের আলোচনা ভালো লাগে বলেই গ্রামের সবাই তার বৈঠকে উপস্থিত হন নিয়মিত। সমাজে সৎ মানুষ কমে যাচ্ছে। তাই কাদের সৎ মানুষ খোঁজার কাজ হাতে নিয়েছেন। সৎ মানুষ খুঁজে পেতে দারুণ এক বুদ্ধিও বের করেছেন। নগদ অর্থ একটি মানিব্যাগে ভরে জনবহুল জায়গায় ফেলে রেখে দেন। কেউ অক্ষত অবস্থায় ফেরত দিলে ওই ব্যক্তিকে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতিতে ‘সততার সম্মাননা’ও প্রদান করেন কাদের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর