শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
ক্যারাম বিশ্বকাপে

আমাদের চা কন্যা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

আমাদের চা কন্যা

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগড় চা বাগান। ওই বাগানের শ্রমিক রঘুনাথ রবি দাস ও শ্রীমতি রবিদাস। সেই চা বাগানের শ্রমিক কলোনির মাটির ঘরে তাদের সংসার। সেই সংসারে একে একে জন্ম তিন সন্তানের। দুই ছেলে এক মেয়ে। সেই সবার ছোট। নাম মীনা। কিন্তু রঘুনাথ ও শ্রীমতি গরিব হলেও সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার চিন্তা সব সময়ই। সফলও হয়েছেন মেয়েকে ভর্তি করাতে পেরেছেন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা করছেন ইংরেজি বিভাগে। সেই মীনা শুধু ভালো ছাত্রীই নন। ভালো একজন খেলোয়ারও। মীনা এখন শুধু বাবা-মাকে সুখী করতে নয়, গোটা দেশকে সুখী করতে চান। আর সেটা ক্যারাম খেলা দিয়ে। আগামী ২৮ আগস্ট দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হবে এ আসর। চলতি বছর বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে ক্যারাম বিশ্বকাপে অংশ নিতে বিদেশ যাবেন মীনা। আর এ খেলায় বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছে মীনা। মীনার বাবা বাগানে গরু চরান। আর বয়সের ভারে মীনার মা এখন আর বাগানে কাজ করতে পারেন না। তাই মায়ের জায়গায় এক ভাই রাজেস এখন বাগানে শ্রমিকের কাজ করছে। অন্য ভাই খোকন চালাচ্ছেন রিকশা। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও কলেজ থেকে পাওয়া উপবৃত্তির টাকা দিয়ে। মীনা জানায়, তাদের ছিল কষ্টের সংসার। সে যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত তখন তার ভাই ও বন্ধুরা মিলে বাসায় একটি ক্যারাম কিনে আনে। তাদের খেলা দেখে তারও ইচ্ছে জাগে ক্যারাম খেলার। কিন্তু ছোট বলে তাকে কেউ খেলায় নিত না। দূর থেকে দাঁড়িয়ে থেকে দেখে দেখেই সে ক্যারাম খেলা শিখে নেয়। এরপর সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যালয়ে এক বছর ক্যারাম খেলার সুযোগ পায় সে। পরে ২০১৫ সালে সিলেট শাহজালার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তাকে আর ক্যারাম খেলা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়েই ক্যারাম ছিল। সেখানে সে বিকাল বেলা নিয়মিত খেলতে পারত। একদিন তার খেলা দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক ক্যারাম প্রতিযোগিতায় তার নাম লেখান। গত বছর আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্যারাম প্রতিযোগিতায় দলগতভাবে অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে মীনার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। একই বছর বাংলাদেশ ক্যারাম ফেডারেশন বিজয় দিবস টুর্নমেন্টে অংশ নিয়ে মীনা (একক ভাবে) রানার্সআপ হয়। চলতি বছর আবারও আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ক্যারাম প্রতিযোগিতায় দলগতভাবে অংশ নিয়ে মীনার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়। যেখানে মধ্যমণি মীনা। এরপর বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার জন্য ডাক পড়ে। গত ২৮ এপ্রিল ঢাকায় বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বাছাই পর্বে মীনাসহ আরও দশজন প্রতিযোগী ছিল। মীনা দ্বিতীয় স্থান লাভ করে। জায়গা হয় বিশ্বকাপ দলে। এরপর থেকে দেশকে প্রিয় মাতৃভূমিকে কিছু দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর মীনা। মীনা বলেন, ‘এ লড়াই শুধু ট্রফি জয়ের নয়, এ লড়াই বিশ্বের বুকে নতুন করে লাল-সবুজ পতাকাকে তুলে ধরা। দেশের সম্মান বৃদ্ধি করা।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর