শিরোনাম
শনিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাজমুনের শত দেশ ভ্রমণ

তানিয়া তুষ্টি

নাজমুনের শত দেশ ভ্রমণ

তার ভ্রমণযাত্রার শততম মাইলফলক গড়েছেন আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়া থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে জিম্বাবুয়েতে পৌঁছে! জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়েনা তার এই মাইলফলককে সম্মাননা দিয়েছেন

 

বাংলাদেশের প্রথম পতাকাবাহী বিশ্ব ভ্রমণকারী নাজমুন সৃষ্টি করেছেন এক বিরল ইতিহাস! পতাকা হাতে ১৭ বছর ধরে পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন। চলতি বছরের ১ জুন দেশ ভ্রমণের সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সম্মানকে নিয়ে গেছেন সর্বোচ্চ উচ্চতায়! ইতিহাসে কালজয়ী পর্তুগিজ পর্যটক ভাস্কো দা গা মা, ইবনে বতুতা, কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের কথা কে না জানে, তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের বাংলাদেশের এই সাহসী নারী পরিব্রাজক বাংলাদেশের পতাকা হাতে চষে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে! বর্তমানে তার দেশ ভ্রমণের তালিকায় যোগ হয়েছে ১০৫টি দেশের নাম! ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করে যাচ্ছেন পৃথিবীর সব দুর্গম পথ মাড়িয়ে, মৃত্যুকে অতিক্রম করে, কখনো না খেয়ে, কখনো না ঘুমিয়ে, হাজার হাজার মাইল বাই রোডে জার্নি করে, তাঁবুর মধ্যে থেকে, বন্যপ্রাণীর আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন। ক্ষুধা নিবারণ করতে জঙ্গলে আদিবাসীদের সঙ্গে গরুর কাঁচা মাংস পর্যন্ত খেতে হয়েছে।  বাংলাদেশ প্রতিদিনের অফিসে এসে সেসব রোমাঞ্চকর গল্পই তিনি শুনিয়ে গেলেন।

 

নাজমুন বলেন, ‘পতাকা ভাবনা আমার কাছে একটি দেশপ্রেমের চিহ্ন। এই পতাকাকে অর্জনের জন্য প্রাণ দিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। হারানো প্রাণ আর রক্তে অর্জিত এই পতাকার সম্মান যেন সমুন্নত থাকে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে তাই আমি এই পতাকা নিয়ে হাঁটছি। আমার পতাকা ছুঁয়েছে পৃথিবীর বহু পর্বতশৃঙ্গ, নগর, বন্দর, সমুদ্র হতে সীমান্ত! যে পতাকা ছুঁয়েছে পৃথিবীর হাজারো মানুষের হৃদয়, সে পতাকা যাবে বিশ্বময়। আমি স্বাধীনতা অর্জনের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম দেখিনি। আমি একটি স্বাধীন দেশের পতাকাতলে বেড়ে উঠেছি।’ ২০০০ সাল থেকে নাজমুন বাংলাদেশের পতাকা হাতে নেমে পড়েছেন বিশ্ব ভ্রমণের উদ্দেশে। তার প্রথম ভ্রমণ ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভেঞ্চার  প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে। তখন তিনি বিশ্বের ৮০টি দেশের ছেলেমেয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন, সেই পতাকা উত্তোলনের শিহরণ আজও তিনি বহন করে চলছেন। আর তারই স্বীকৃতি মিলেছে তার শততম যাত্রার মাইলফলক ছুঁয়ে যাওয়ার মুহূর্তে। তার ভ্রমণযাত্রার শততম মাইলফলক গড়েছেন আফ্রিকার দেশ জাম্বিয়া থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া  জলপ্রপাতের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে জিম্বাবুয়েতে পৌঁছে। জাম্বিয়া সরকারের গভর্নর হ্যারিয়েট কায়েনা তার এই মাইলফলককে সম্মাননা দিয়েছেন। তিনি নাজমুনকে ১ জুন ফ্ল্যাগ গার্ল উপাধি ঘোষণার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সব মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবে এভাবেই। যাত্রাপথে ভালোলাগা রয়েছে অপরিসীম। নাজমুন বলছেন, আমার দেখা সেরা সৌন্দর্যের দেশ আইসল্যান্ড, তবে পৃথিবীর সব দেশেই কোনো না কোনো সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। বিধাতার এই সৃষ্টির ভাণ্ডার অতুলনীয়। আবারও কোনো খণ্ডকালীন প্রজেক্টে কয়েক মাস কাজের মাধ্যমে আবার কিছু টাকা জমিয়ে বেরিয়ে পড়বেন ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। নাজমুন বলেন, আফ্রিকার ভাসো দা গা মা রুট ‘কেপ টু কায়রো’ অর্থাৎ দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন থেকে মিসরের কায়রো পর্যন্ত আফ্রিকার বাকি দেশগুলো ভ্রমণ করবেন। কেপটাউন থেকে তিনি নামিবিয়া হয়ে যাত্রা করবেন, যাত্রাপথে আফ্রিকার শান্তি মিশনে বাংলাদেশের যেসব আর্মি দুর্গম এলাকায় আছেন, তাদের সার্বিক অবস্থান পর্যবেক্ষণের জন্য তিনি তাদের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। নাজমুন বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশি আর্মিরা পৃথিবীর শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন। পৃথিবীর বিভিন্ন মিশনে বাংলাদেশিদের এই অবদানকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন। পৃথিবী ও মানুষের প্রতি আমাদের এই শ্রদ্ধাবোধকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এভাবেই এক এক করে নাজমুন বাংলাদেশের পতাকা হাতে ঘুরবেন বিশ্বের বাকি সব দেশে এবং বাংলাদেশকে আরও নানাভাবে পরিচয় করিয়ে দেবেন পৃথিবীর মানুষের কাছে।                             

নাজমুনের জন্ম লক্ষ্মীপুরে। বাবা মোহাম্মদ আমিন একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। মা তাহেরা আমিন ছিলেন গৃহিণী। এক আদর্শ পরিবারের ছোট সন্তান হিসেবে তার বেড়ে ওঠার গল্প ভিন্ন রকম। দাদা আলহাজ ফকীহ আহমদ উল্লাহ ১৯২৬ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত আরবের বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন ঘোড়ায় চড়ে, পায়ে হেঁটে, জাহাজে করে। বাবা শোনাতেন দাদার এসব গল্প। ভ্রমণের দারুণ সব বই কিনে দিতেন নাজমুনকে, পরিবারের ভাইবোনদের কাছ থেকেও তিনি পেতেন অনেক সহযোগিতা। এভাবেই বেড়ে ওঠা ফ্ল্যাগ গার্ল নাজমুনের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর