শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিকিৎসাবিজ্ঞানে থ্রিডি প্রিন্টিং

সাইফ ইমন

চিকিৎসাবিজ্ঞানে থ্রিডি প্রিন্টিং

থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির বাড়িঘরে মানুষ বসবাস শুরু করতে যাচ্ছে অচিরেই। আর সেইসঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি নিয়ে আসছে আমূল পরিবর্তন—

 

অনেকেই দাবি করেন একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আবিষ্কার থ্রিডি প্রিন্টিং প্রযুক্তি। যা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে ও সৃষ্টি করছে বিস্ময়ের। প্রথাগত যান্ত্রিক উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে এই থ্রিডি প্রিন্টিং স্বতন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয় কেননা প্রথাগত পদ্ধতিতে কোনো কিছু তৈরি করতে হলে একটি ধাতু বা বস্তুকে কেটে অথবা ছিদ্র করে নির্দিষ্ট আকার দেওয়া হয়। এই প্রিন্টার সাধারণত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে ত্রিমাত্রিক মুদ্রণের কাজ করে। বিজ্ঞানী ডক্টর চার্লস ডব্লিউ হাল ১৯৮৪ সালে প্রথম ব্যবহার উপযোগী থ্রিডি প্রিন্টার তৈরি করেন। অবশ্য কিছু তথ্যসূত্র অনুযায়ী, একটি কঠিন আকৃতি মুদ্রণের প্রথম কাজটি করা হয়েছিল ১৯৮১ সালে। এটি করেছিলেন নাগোয়া মিউনিসিপাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক হিদেও কোদামা। বর্তমানে থ্রিডি প্রিন্টিং টেকনোলজি এগিয়ে গেছে আরেক ধাপ। থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি নানা রকম জিনিস তৈরির সঙ্গে শুরু হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টারের তৈরি বাড়িও। যেখানে আপনি বসবাস করতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যেই। দারুণ না বিষয়টা। ইতিমধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে থ্রিডি প্রিটিং টেকনোলজিতে সফলতা পাচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। চ্যারিটি এবং আইকন কনস্ট্রাকশন ইনকরপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে এবার তৈরি হতে যাচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টেড বাড়ি। প্রাথমিকভাবে মাত্র ১০,০০০ মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে এর নির্মাণকাজে। তবে সেই খরচ ৪,০০০ ডলারে নামিয়ে আনা হবে বলেও জানানো হয়েছে। পৃথিবীজুড়ে প্রায় ১.২ বিলিয়ন মানুষ গৃহহীন মানুষের জন্যই আইকন এবং নিউ স্টোরির এমন যৌথ উদ্যোগের কথা তারা প্রকাশ করে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া এসএক্সএসডব্লিউ কনফারেন্সে। থ্রিডি প্রিন্টিং পদ্ধতির সাহায্যে ৬৫০ বর্গ ফুট জায়গার মধ্যে একতলা বিশিষ্ট বাড়ি নির্মাণ করবে তারা। সফল হলে প্রায় ১০০টি গৃহ এল সালভাডোরের বাসিন্দাদের জন্য তৈরি করা হবে আগামী বছর। এ ছাড়াও নানা কারুকার্য শোভিত অলঙ্কার, বাহারি পাদুকা থেকে শুরু করে শিল্পকারখানার অনেক জটিল যন্ত্রপাতি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন, নানা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র, এমনকি মহাকাশ গবেষণার অনেক যন্ত্রই  তৈরি হচ্ছে এই প্রযুক্তিতে। এ ছাড়াও শিক্ষা, ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা, নগর ব্যবস্থাপনাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই থ্রিডি প্রযুক্তিটি। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও থ্রিডি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। গবেষণা চলছে মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের জটিল গঠনের আদলে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি।

থ্রিডি প্রিন্টিং মেশিনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত তৈরিকৃত বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে রয়েছে মাথার করোটি। হল্যান্ডের একটি হাসপাতালে একজন রোগীর মাথায় সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে তৈরি মাথার করোটি। যা একজনের মাথায় স্থাপন করা হয়। থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম চোখও তৈরি হচ্ছে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ফ্রেপ ডিজাইন সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণায় ১৫০টি সিনথেটিক চোখ তৈরি করেছে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে। চোখের প্রতিস্থাপন অনেক ব্যয়বহুল বলে এই থ্রিডি প্রিন্টের সিনথেটিক বায়োনিক চোখ নতুন করে আশা আলো দেখাচ্ছে অন্ধদের। এদিকে নাক এবং কানও থ্রিডি প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে। ফ্রেপ ডিজাইন  কোম্পানি ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের সঙ্গে যৌথভাবে  তৈরি করছে সিনথেটিক নাক এবং কান। রোগীদের থ্রিডি মুখমণ্ডল স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে তাদের নাক এবং কানের গঠন সম্পর্কে অবহিত হয়ে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে রোগীর মুখের আকারে নাক এবং কানের অনুরূপ তৈরি করা হয়।

এমনকি এখন তৈরি করা যাচ্ছে কৃত্রিম ত্বক। থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমেই তৈরি করা হচ্ছে কৃত্রিম ত্বক। ওয়াক ফরেস্ট স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক জেমস উই বর্তমানে গবেষণা করছেন আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীদের গায়ে সিনথেটিক ত্বক প্রতিস্থাপন করার বিষয়ে। তিনি এনজাইম এবং  কোলাজেন দিয়ে তৈরি কৃত্রিম কালি দিয়ে তিনি থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে তৈরি করার চেষ্টা করছেন কৃত্রিম ত্বক। তিনি অনেকাংশে সফলও হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। পুরোপুরি সফল হলে চিকিৎসাবিজ্ঞান এগিয়ে যাবে অনেকদূর। তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। এসব ছাড়াও  দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বর্তমাতে তৈরি হচ্ছে থ্রিডি প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে এখন খুব সহজেই তৈরি করা যাচ্ছে কৃত্রিম হাত, বাহু এবং হাতের আঙ্গুল। রোবোহ্যান্ড কোমপানির পরিচালক রিচার্ড ভ্যান ইতিমধ্যে সিনথেটিক হাত এবং আঙ্গুল তৈরি করেছেন। এখন তারা গবেষণা করছেন এমন ধরনের হাত তৈরি করতে যা সত্যিকার হাতের মতোই কাজ করতে পারবে।

সর্বশেষ খবর