শনিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রাণিজগতের নতুন মাইলফলক

দুই অতিথি সাদা বাঘ শাবক

মোস্তফা কাজল

দুই অতিথি সাদা বাঘ শাবক

প্রাণিজগতের নতুন মাইলফলকে বাংলাদেশ। নতুন জন্ম নেওয়া বিরল দুই সাদা বাঘ শাবক নতুন এ ইতিহাস রচনা করেছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই দর্শনার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট বেষ্টনীর মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হবে এ দুই বাঘ শাবক। পৃথিবীর বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় সব মিলিয়ে ১০০-এর মতো সাদা বাঘ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে দুইটি। দুই প্রাণীর তুলতুলে শরীর। এরা দুই অঞ্চলের অতিথি হিসেবে জন্ম নিয়েছে। একটি রাজধানীর উপকণ্ঠে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে সদ্য জন্ম নেওয়া। এ পার্কে সাদা বাঘ শাবকের জন্ম হয়েছে ২২ আগস্ট অপরটি বন্দরনগরী চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গত ১৯ আগস্ট জন্ম নিয়েছে। দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় হলো দুই সাদা বাঘ শাবক। শাবক দুটির নীল চোখ। মায়ের নজর একটু অন্যদিকে  গেলেই দেয় ছুট শাবক দুইটি। কিন্তু মাকে ফাঁকি দেওয়া কি এত্ত সহজ! এক মাস বয়সী মেয়েটি ছুট দিলেই মা পথ আগলে রাখে। কাছে নিয়ে মুখ ঘষে  দেয়। ধবল দেহটি জিব দিয়ে মুছে দেয়।

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রথমবারের মতো জন্ম নেওয়া ডোরাকাটা সাদা রঙের বাঘের বাচ্চাটি এখন পার্কে আগত সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। বাংলাদেশে এটি জন্ম নেওয়া তৃতীয় সাদা বেঙ্গল টাইগারের বাচ্চা। আর সাফারি পার্কে এটিই প্রথম শ্বেতাঙ্গ বেঙ্গল টাইগার। বাবা-মা ডোরাকাটা হলুদ রঙের হলেও এই বাচ্চা মেয়ে বাঘটি সাদা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও দুটি বোন জন্ম নিয়েছে। সেগুলো অবশ্য বাবা-মায়ের রং পেয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়া শাবকটি দেশের প্রথম সাদা বাঘ। তবে বাবা-মা  ডোরাকাটা হলুদ হলেও সাদা শাবক জন্ম নেওয়া প্রসঙ্গে প্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা বাঘগুলোর পূর্ব পুরুষ সাদা হয়ে থাকতে পারে। জিনগত কারণে বাবা-মা হলুদ রঙের হলেও এই বাচ্চা দুটো সাদা হয়েছে। তারা আরও বলছেন, মানুষের মতো বাঘেরও শ্বেত রোগ হয়। সে ক্ষেত্রে শ্বেত রোগী বাঘগুলো জন্ম থেকেই সাদা থাকে। এগুলোর গায়ে কোনো  ডোরাকাটা দাগ থাকে না। এই বাচ্চা দুটোর ডোরাকাটা দাগ থাকায় বোঝা যাচ্ছে, জিনগত কারণে সাদা হয়েছে। এই বাঘগুলোর চোখের মণি নীল রঙের হয়। গাজীপুর সাফারি পার্কের প্রাণী পরিদর্শক আনিসুর রহমান জানান,  শ্বেত বাঘিনীকে ওর মায়ের মতোই আগলে রাখা হচ্ছে। পার্কের মিনি এনক্লোজারে নিরিবিলি থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে সাদা শাবকটি ওর দুটি বোন আর মায়ের সঙ্গে সারা দিন খেলা করে। একটু দৌড়ঝাঁপ। ক্লান্ত হলে আবার মায়ের কাছে ছুটে যায়। আরাম করে মায়ের হলদে ডোরাকাটা লোমশ দেহে মুখ ডুবিয়ে দুধ পান করে  নেয়। এরপর আবার চলে ছুটোছুটি আর খেলা। বিশ্রাম নিতেই চায় না। তাই সাদা বাঘের মায়ের চোখে যেন ঘুম  নেই। কদর বেশি থাকায় এখনই জনসম্মুখে আনা হয়নি। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, বেঙ্গল টাইগার পরিবারে তিনটি বাঘিনীর জন্ম হওয়া নতুন মাইলফলক। শ্বেত বাঘিনীর বাবার নাম জ্যাকবল। মায়ের নাম দেওয়া হয়নি। নতুন শাবকগুলোরও নাম দেওয়া হয়নি। এই বাচ্চা বাঘগুলোর মায়ের এর আগেও তিনটি মেয়ে বাচ্চা হয়েছিল। সেগুলোর নাম জয়া, জ্যোতি ও মাধুরী। নতুন শাবক নিয়ে সাফারি পার্কে এখন মোট বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে তিনটি পুরুষ।

এ পার্কের প্রাণী পরিচর্যাকারী নুরুন নবী বলেন, অচেনা কাউকে দেখলেই বাঘের মা রেগে যায়। আর রোগাক্রান্ত  যেন না হয় সে জন্য বিশেষ খেয়াল রাখা হয়। জন্মের পর বাইরের কোনো লোককে বাঘের সাদা বাচ্চাসহ অন্যদের দেখতে দেওয়া হয়নি। আরও বছরখানেক আড়ালেই রাখা হবে। এখন বাচ্চাগুলো মায়ের বুকের দুধই কেবল পান করবে। মাসছয়েক বয়স হলে অল্প স্বল্প করে মাংস দেওয়া হবে। সাদা বাঘটি সুস্থ আছে জানিয়ে নুরুন নবী আরও বলেন, সব বাচ্চারই ওজন বাড়ছে। কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়নি। তিন মাস আগে বাঘিনীর গর্ভধারণের বিষয়টি বুঝতে পারেন। এরপর থেকে মিনি এনক্লোজারে রাখা হয় মা বেঙ্গল টাইগারকে। তখন থেকে বাচ্চা জন্ম হওয়ার আগ পর্যন্ত মা বাঘটিকে প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে গরুর মাংস খেতে  দেওয়া হতো। এক দিন খাবার দেওয়া হতো না। এ ছাড়া সপ্তাহে এক দিন জ্যান্ত একটি খরগোশ খাওয়ানো হতো। বাচ্চা জন্ম দেওয়ার পর মাংস এক কেজি বাড়তি দেওয়া হচ্ছে। জীবন্ত খরগোশ খাওয়ানো বন্ধ। কারণ, জীবন্ত খরগোশ খেতে দিলে মা তার বাচ্চাদের একইভাবে খেয়ে  ফেলতে পারে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আপাতত বাঘের সাদা শাবককে মায়ের সঙ্গে রাখা হবে। এরপর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে। বাঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, সাদা বাঘের আলাদা করে বিশেষ যত্ন নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মায়ের সঙ্গে, ভাইবোনদের সঙ্গে রাখলেই চলবে। বাঘ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান বলেন, বনে সাদা বেঙ্গল টাইগারের জন্ম খুব কম হয়। সুন্দরবনে হয়ই না। তবে সাদা বাঘ দেখতে সুন্দর। জন্মও খুব কম হয়। তাই এর কদর বেশি। এই রঙের বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য নবজাতক সাদা বাঘকে নিকটতম আত্মীয়ের সঙ্গে রাখা উচিত বলে পরামর্শ দেন তিনি। একই সময় মোট তিনটি শাবক প্রসব করে বাঘিনী। এর মধ্যে একটি বাচ্চা জন্মের পরদিন মারা যায়। বাকি দুটি বাঘ শাবক (বাঘিনী) বেঁচে আছে। মারা যাওয়া অপর শাবকটিও সাদা রঙের ছিল। জন্ম নেওয়ার পর থেকে বাঘের খাঁচাটি ঢেকে দেওয়া হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর