শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্বপ্নচারী এক জ্যাকবের কথা

স্বপ্নচারী এক জ্যাকবের কথা

দ্বীপরানী ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরাকে কেন্দ্র করে আধুনিক পর্যটননগরী গড়ে তুলেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। বাবা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য। তার দেখানো পথেই হেঁটেছেন জ্যাকব। দুই দফায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় নিয়ে পাল্টে দিয়েছেন চরফ্যাশন-মনপুরাকে। গড়ে তুলেছেন আইকনিক জ্যাকব টাওয়ার, শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক, ফ্যাশন স্কয়ার ও পানির ফোয়ারা, চর কুকরী-মুকরীতে অবকাশ যাপন কেন্দ্র, হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, গলফ মাঠ, ইকো পার্ক, ঢালচরে কোস্টাল রেডিও স্টেশন ও লাইটিং হাউস। উন্নত করেছেন যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা খাতেও অগ্রগতি এনেছেন। তাকে নিয়ে লিখেছেন- তানভীর আহমেদ

 

বাবার দেখানো পথেই এগিয়ে চলা

ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সর্বজন শ্রদ্ধেয় নেতা ও শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নাম। ছিলেন একাধিকবার জাতীয় সংসদ সদস্য। তার সন্তান আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। বাবার দেখানো পথেই হেঁটেছেন তিনি। রাজনীতিতে এসে পাল্টে দিয়েছেন গোটা ভোলার চেহারা। পর্যটনবান্ধব নগরী হিসেবে ভোলাকে তুলে এনেছেন সবার সামনে। বাবা মারা যাওয়ার পর আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ২০০১ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করেন। তখন তিনি মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে সবার নজর কাড়লেও সেবার জয়ের দেখা পাননি। এরই মাঝে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা শেষ করেন। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে এসে জয়ের দেখা পান। তরুণ বয়সেই হলেন সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়নের ছাপ রেখে আবারও সংসদ সদস্য হন ২০১৪ সালে। এবার উপমন্ত্রী হিসেবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। পরে ২০১৪ সালের ২৬ ফেব্র“য়ারি বর্তমান সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। দুই দফায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য হয়ে উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে দিয়েছেন ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরাকে। পর্যটকদের জন্য চর কুকরী-মুকরীকে ‘কুইন অব আইল্যান্ড’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন তিনি। লঞ্চ হোক কিংবা হেলিকপ্টার- এখন সহজেই দ্বীপরানীতে ঘুরে আসতে পারবেন পর্যটকরা। সেখানে গড়ে তুলেছেন সুইমিংপুল, হেলিপ্যাডসহ আধুনিক রেস্ট হাউস।

 

বাংলার বালিদ্বীপ

 

আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব ভোলার চরফ্যাশন-মনপুরাকে ‘বাংলার বালিদ্বীপ’ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশীর্বাদ তো রয়েছেই, এর সঙ্গে যোগ করেছেন তার পর্যটন পরিকল্পনা। পেশাগত কারণে ও ব্যক্তিগত ইচ্ছায় বহু দেশ ভ্রমণ করতে হয়েছে তাকে।

 

ইউরোপ, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, এশিয়াসহ বিশ্বের প্রতিটি কোণায় ছুটে চলা মানুষটি চরফ্যাশনকে কেন্দ্র করে শিক্ষা ও পর্যটনবান্ধব নগরী গড়ার স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সে পথেই এগিয়ে চলেছেন।

 

চরফ্যাশনের চর কুকরী-মুকরী, তারুয়া, ঢালচরসহ নতুন বাংলাদেশ হিসেবে জেগে ওঠা শিবচর নিয়ে রয়েছে তার পরিকল্পনা। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা মতো গড়ে তুলেছেন জ্যাকব টাওয়ার, শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক, ফ্যাশন স্কয়ার ও পানির ফোয়ারা, চর কুকরী-মুকরীতে অবকাশ যাপন কেন্দ্র, ইকোপার্ক, ঢালচরে কোস্টাল রেডিও স্টেশন ও লাইটিং হাউস। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

চরফ্যাশনে ১ হাজার কিলোমিটার পাকা ও মনপুরায় ১২৫ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক নির্মাণ করেছেন তিনি। নদী ভাঙন রোধে ১ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের বাস্তবায়ন করে মেঘনা পাড়ের জীবনে এনেছেন স্বস্তি।

 

 

 

 

 

 

 

জ্যাকব টাওয়ার

চরফ্যাশনে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আইকনিক জ্যাকব টাওয়ার। ২২৫ ফুট উচ্চতার এই ‘ওয়াচ টাওয়ার’ তৈরিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। দৃষ্টিনন্দন  এই টাওয়ার আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে একটি ভিন্ন পরিচিত এনে দিয়েছে।

 

১৯ তলা বিশিষ্ট টাওয়ারটি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। চূড়ায় ওঠার জন্য সিঁড়ির সঙ্গে রয়েছে ১৩ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট। ওয়াচ টাওয়ারটিতে স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার। এ ছাড়া বিশ্রামাগার, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ খাবারের আয়োজনও রয়েছে এখানে।

 

পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে টাওয়ারের পাশেই ২০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছে বৃহত্তম সুইমিংপুল, ২০ হাজার লোক ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ফ্যাশন স্কয়ার ও অত্যাধুনিক মানসম্পন্ন শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক। পার্কের ভিতরে রয়েছে চারদিকে পাকা বাঁধানো পুকুর।

 

 

 

চর কুকরী-মুকরী

কুইন অব আইল্যান্ড

স্বপ্নদ্বীপ চর কুকরী-মুকরী। বঙ্গোপসাগরে জেগে থাকা এই চরটির কথা কে জানত? সেই চর কুকরী-মুকরীকে এখন বলা হয় ‘কুইন অব আইল্যান্ড’। ভোলা জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা এই চর কুকরী-মুকরীতেই রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের অপূর্ব সৌন্দর্য পর্যটকদের বিস্ময়ে বুঁদ করে রাখে। ম্যানগ্রোভ বনের ভিতরে এঁকেবেঁকে গেছে সর্পিল লেক। আছে বালুকাময় তীর, সি-বিচ। হরিণসহ নানা বন্যপ্রাণীর ছোটাছুটি দেখার সুযোগ ছিল না এখানে। বঙ্গোপসাগরের মধ্যে থাকা দ্বীপটিকে দৃষ্টিনন্দন করে পর্যটকদের জন্য সাজিয়েছেন আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। পর্যটকদের কাছে লোভনীয় এই দ্বীপে ছিল না কোনো আবাসন সুবিধা। পর্যটকদের জন্য কুইন অব আইল্যান্ডে এমপি জ্যাকব গড়ে তুলেছেন ১৮টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ, সুইমিংপুল, হেলিপ্যাড সমৃদ্ধ সর্বাধুনিক রেস্ট হাউস। এখন প্রতিদিনই শত শত পর্যটক চর কুকরী-মুকরীতে বেড়াতে আসেন।

সর্বশেষ খবর