শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ডা. লোটে শেরিং

ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী

শনিবারের সকাল ডেস্ক

ময়মনসিংহ মেডিকেলের ছাত্র ভুটানের প্রধানমন্ত্রী
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এমবিবিএস পাস করে বাংলাদেশে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে এফসিপিএস করেন। ২০১৩ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে  রাজনীতিতে যোগ দেন।

 

ডক্টরেট ডিগ্রি উপাধি অর্জন করা লোটে শেরিং পাশ্চাত্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করেছিলেন। ডা. লোটে শেরিং ভুটানের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সাম্প্রতিক সময় ভুটানের সাধারণ নির্বাচনে ডিএনটি নামের দল ডা. লোটে শেরিংকে দলটির সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করে। আগামী ১০ নভেম্বর সাধারণ নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হলে ডা. লোটে শেরিং দেশটির প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন।

 

গত ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে তার ডিএনটি দল জয়লাভ করে চমক সৃষ্টি করে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে প্রথম দফা নির্বাচনে হেরে ছিটকে পড়েন। অবশ্য তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন। ডা.  লোটে শেরিং প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চূড়ান্ত ফলাফল আসে গেল ১৮ অক্টোবর। প্রসঙ্গত, ভুটানে দুই দফায় ভোট হয়। প্রথম দফায় ভোটাররা রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোট দেয়। দ্বিতীয় দফায় অর্থাৎ ডা. লোটে শেরিং মুখোমুখি হন ডিপিটির ফেনসাম সগবার। কিন্তু এরই মধ্যে বিপুল ভোটে ডা. লোটে  শেরিংয়ের ডিএনটি জয়ী হয়েছে। যে দুই দল প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান পায় তারা পার্লামেন্টের ৪৭টি আসনে প্রার্থী দেয় এবং তখন দ্বিতীয় দফা ভোট হয়। এবারের প্রথম দফার ভোটে চারটি দল অংশ নেয়। প্রথম দফার মৌলিক নির্বাচনে বিস্ময়কর সাফল্য পান লোটে শেরিং। রাজনীতিতে আসার আগে ডা. লোটে শেরিং জেডিডব্লিউএনআরএইচ অ্যান্ড মঙ্গার রিজিওনাল রেফারেল হসপিটালে কনসালট্যান্ট সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জেডিডব্লিউএনআরএইচে ইউরোলজিস্ট কনসালট্যান্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এরপর ২০১৩ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং ২০১৮ সালের শুরুতেই ডিএনটি দলের শীর্ষপর্যায়ে চলে আসেন ডা. লোটে শেরিং।

 

ডা. লোটে শেরিংয়ের জয়ে শুধু ভাটানে ডুকে নিয়্যাপুপ শোগা দলই খুশি নয়। বাংলাদেশও ডা. লোটে শেরিংয়ের জয়ে আনন্দিত। জানা যায়, ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকেই এমবিবিএস পাস করে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ডা. লোটে শেরিংয়ের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে শিক্ষাগত যোগ্যতার স্থানে এমবিবিএস ঢাকা ইউনিভার্সিটি লেখা। প্রসঙ্গত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। শুধু তাই নয়, ডা. লোটে শেরিং জেনারেল সার্জারিতে এফসিপিএসও করেছেন আমাদের বাংলাদেশেই। ২০১৩ সালে সিভিল সার্ভিস থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাজনীতিতে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী হওয়া ডা. লোটে শেরিং।

 

বাংলাদেশে তার পড়াশোনার পর্বটা শুরু হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তখন তিনি বাংলাদেশে এসে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন এবং ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর তিনি ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন।

 

ডা. লোটে শেরিং খুব মেধাবী ছিলেন। তিনি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন এমন সংবাদে তার সহপাঠীরা দারুণ খুশি। ছাত্রজীবনে লোটে শেরিং প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করতেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি খুবই বন্ধুবৎসল। তবে খুব কম কথা বলতেন। পড়াশোনার পাশাপাশি টেবিল টেনিস ও কেরামবোর্ড খেলা পছন্দ করতেন। বাংলাদেশে অবস্থানকালীন তিনি বন্ধুদের গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে যেতেন। ডা. লোটে শেরিং একজন বন্ধুবৎসল এবং সামাজিক মানুষ ছিলেন। বিভিন্ন সময় আলোচনার ফাঁকে দেশে গিয়ে রাজনীতি করবেন বলেও জানিয়েছিলেন।

 

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ডা. লোটে শেরিংয়ের সহপাঠী ডা. আসাদুজ্জামান রতন জানান, লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির পর আমরা বাঘমারা মেডিকেল হোস্টেলে পাশাপাশি ভবনে থাকতাম। মেধাবী ও খুবই নম্রভদ্র স্বভাবের লোটে শেরিং থাকতেন নতুন ভবনে। তার এই জয়ে সে সময়ের আরেক সহপাঠী ডা. শফিকুল বারী তুহিন বলেন, সেশনজট থাকায় আমরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৯৮ সালে পাস করি। তিনি ২০০৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ছিলেন। তুহিন আরও বলেন, সে সময়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১২-১৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী এমবিবিএসে পড়াশোনা করতেন।

 

এদিকে ডা. লোটে শেরিংয়ের জয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ২৮তম ব্যাচের ছাত্র ডা. লোটে শেরিং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন, এটা আমাদের তথা গোটা বাংলাদেশের সবার গর্র্ব। তিনি ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রীর উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন। এদিকে ডা. রতন জানান, লোটে শেরিং ও আমি প্রফেসর ডা. খাদেমুল ইসলামের অধীনে জেনারেল সার্জারি বিষয়ে ছয় মাস ইন্টার্নশিপ করি। পরে তিনি ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে এফসিপিএস কোর্স সমাপ্ত করেন।  ডা. লোটে শেরিংয়ের এ জয়ে ডা. রতন আরও বলেন,  ‘যোগ্য মানুষই দেশ পরিচালনার সুযোগ্য নেতৃত্বে আরও এগিয়ে যাবে।  আর সে যোগ্যতা ডা. শেরিং রয়েছে।’

সর্বশেষ খবর