শনিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মিশিগানে বাংলাদেশ

সাইফুল আজম

মিশিগানে বাংলাদেশ

মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ‘বাংলা টাউনে’ উদ্বোধন করা হলো বাংলাদেশের লাল-সবুজে আঁকা সর্ববৃহৎ ম্যুরাল ‘বাংলাদেশ : কামিং টু আমেরিকা’। বাংলা টাউন খ্যাত হামট্রামিক ও ডেট্রয়েট শহরের সীমানায় বিশাল দেয়ালজুড়ে লাল-সবুজে বাংলাদেশ। বাংলা টাউনের প্রবেশদ্বারে চোখ আটকে যাবে বিশাল এ চিত্রকর্মে। আর এর মধ্য দিয়েই বহুজাতিক এ সিটিতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের জয়গান ধ্বনিত হবে প্রজম্ম  থেকে প্রজম্মাান্তরে। বাংলা টাউনের এক-তৃতীয়াংশ অধিবাসীই বাংলাদেশি। কয়েক দশকে এ শহরে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের আবাস। শহরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশিরা। স্থানীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ বাড়লেও বাংলার এ ম্যুরাল বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের খুব ভালোভাবেই উপস্থাপন করবে। অভিবাসনবিরোধী সরকারের সময় আঁকা এ বিশাল ম্যুরাল নিজেদের অধিকারের, মর্যাদার ও সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল প্রকাশ বলেই মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশি জীবন চিত্রের এ ম্যুরাল রবিবার দুপুর ২টায় অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয়েছে। ৫৫ ফুট বিস্তর ও ৪৬ ফুট উঁচু এ ম্যুরাল মেক্সিকান অঙ্কনশিল্পী ভিক্টর কুইনোনেজ তৈরি করেছেন। নিউইয়র্কের ‘মার্কা২৭’

নামে পরিচিত এ শিল্পী নিয়ো-ইন্ডিজেনাস (নব্য-আদিবাসী) স্টাইল চিত্রাংকনের জন্য বিপুল জনপ্রিয়। ‘ওয়ান ডেট্রয়েট’ নামের সংগঠনের উদ্যোগে ৫৬ ল ইউএস ডলার (বাংলাদেশি প্রায় অর্ধকোটি টাকা) খরচ হয়েছে এ ম্যুরালে। ‘ওয়ান ডেট্রয়েট’ অধিকর্তা সমাজকর্মী বিল মায়ার অভিবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে এ ম্যুরাল নিয়ে অনেক দিন ধরে কাজ করছেন। বাংলাদেশি অভিবাসী নেতৃবৃন্দ এটি খুব ভালোভাবেই নিয়েছেন। ম্যুরালের খরচের অর্ধেক জোগান দিয়েছে বাংলাদেশি কমিউনিটি। বাকি অর্থ এসেছে সরকারি কোষাগার থেকে। বাংলাদেশি আমেরিকান দ্বিতীয় প্রজম্মে র কিছু তরুণ-তরুণী এ কাজের নেতৃত্বে ছিলেন। সুবহা, ফারহা, তামান্না, ফারহান, মানিশা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটা বড় অংশের বসবাস মিশিগানের ডেট্রয়েট-হ্যামট্রামিক শহরে। ইউএস সরকারের জরিপ অনুসারে নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলেস ও রাজধানী ওয়াশিংটন মেট্রো এলাকার পর মিশিগানের ডেট্রয়েট বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থান। পিউ গবেষণা কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে ১৫ হাজারের বেশি অভিবাসী ও কয়েক প্রজম্মে  যুক্তরাষ্ট্রে জম্ম  নেওয়াদের নিয়ে এ সংখ্যা অনেক বেশি। সঠিক দেয়াল নির্বাচন, কোন ছবির ওপর ম্যুরাল হবে, ম্যুরালের শিল্পী নির্বাচন, অর্থ সংগ্রহ সব কিছুই হয়েছে শহরের অধিবাসীদের নিয়ে। লাল-সবুজের এ বৃহৎ ম্যুরালে বাম পাশের নিচের অংশে সবুজ চা বাগান, হ্যামট্রামিক শহরের বাংলাদেশি অভিবাসীদের ৮০ ভাগ জনগোষ্ঠী সিলেট থেকে এসেছেন। ডান পাশের চা বাগানে এক বাংলাদেশি আমেরিকান রমণী, তার পরণে লাল চাদর। লাল-সবুজে বাংলার পতাকার প্রতিচ্ছবি। লাল চাদরের পাশে দান পয়াশের নিচের অংশে আঁকা হয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রমণীর খোলা চুলে দুটি শ্বেত শাপলা। এ ছাড়া নকশী কাঁথায় সাজানো চাদর। ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে আঁকা হয়েছে শহীদ মিনার। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্র“য়ারি বাংলা ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের ইতিহাস ছড়িয়ে দিতে আঁকা হয়েছে বিশাল আকৃতির ‘অ’ ‘আ’ ‘ক’ ‘খ’ বর্ণমালা। অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী নিয়ে দেয়াল চিত্র হলেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে এই প্রথম দেশের বাইরে মার্কিন প্রশাসনের সহায়তায় এত বড় ম্যুরাল। ‘মার্কা২৭’ ও তার সহকারী আর্টিস্ট কার্টিস প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাজ করেছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে। এক সপ্তাহের অবিরত পরিশ্রমে এ চিত্রকর্ম। কথা হলো মার্কা২৭ এর সঙ্গে। জানালেন শনিবার ভোর ৪টায় তিনি শেষ করেছেন এ চিত্রকর্ম।  আরও জানালেন শেষ পাঁচ দিনের প্রতিদিন ২০ ঘণ্টারও অধিক সময় ব্যয় করেছেন  এ চিত্র শেষ করতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর