শনিবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হ্যালো লাকসাম... আমি ব্রাজিলের মেয়ে

♦ লাকসামের ছেলে হিরুর প্রেমে পড়ে ব্রাজিল থেকে ছুটে এসেছেন জুলিয়ানা
♦ প্রেমের স্বীকৃতি দিয়ে দুজন আবদ্ধ হয়েছেন বিবাহ বন্ধনে

মহিউদ্দীন মোল্লা, কুমিল্লা

হ্যালো লাকসাম... আমি ব্রাজিলের মেয়ে

‘‘ জুলিয়ানা তার বাবা মারকোস জিওরজিয়াংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশে আসেন জুলিয়ানা ও তার বাবা।

 

হ্যালো, লাকসাম...

আমি ব্রাজিলের মেয়ে বলছি।

বাংলা ঠিক জানেন না ব্রাজিলের মেয়ে জুলিয়ানা। আরও কিছু শব্দ ও বাক্যসহ এটুকু শিখেছেন ঠিকই। ভালোবাসার টানে রোনালদোদের দেশ থেকে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে। আর ব্রাজিলিয়ান তরুণীর মন চুরি করেছেন লাকসামের তরুণ হিরু। ২৫ বছরের তরুণী জুলিয়ানার মনে দ্বিধা থাকলেও ভয় ছিল না। রিকশার দেশ, মানুষের ভালোবাসার দেশ বাংলাদেশ তাকে এভাবে গ্রহণ করে নেবে ভাবেননি জুলিয়ানা নিজেও। কিন্তু প্রেম মানে না বাধা।  পৃথিবীর দুই প্রান্তে দুই ভালোবাসার মানুষ । কিন্তু  প্রেমের টানে দুই মহাদেশকে এক করেছে এই ভালোবাসার জুটি। নিজের দেশ ফেলে চলে আসার মতো কঠিন কাজ করেছেন জুলিয়ানা। প্রেমের টানে ছুটে এসেছেন কুমিল্লার লাকসামে। প্রেমিক বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশি হিরু, লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউপির দোগাইয়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে। দেশে চলে আসার পর গত ৩১ অক্টোবর ঢাকায় একটি কাজী অফিসে এই প্রেমিকযুগলের বিয়ে হয়। সিলেট এমসি কলেজ থেকে রাষ্ট্র্র্রবিজ্ঞান বিভাগে শেষবর্ষে অধ্যয়নরত অবস্থায় হিরু জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান প্রবাসে। বছরখানেক আগে তিনি দেশে আসেন। এর আগে এই প্রেমের গল্পের নায়ক হিরু ২০১০ সালে বাহরাইন যান। ২০১২ সালের ৬ জুন বাহরাইনে ইংরেজি ভাষা প্র্যাকটিসের অনলাইনে পরিচয় হয় ব্রাজিলের জুলিয়ানার সঙ্গে। পরে ফেসবুকে, স্কাইপিতে তাদের যোগাযোগ হতে থাকে নিয়মিত। প্রায় প্রতিদিনই কথা হতো। সেই থেকে দুজনের মধ্যে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় সাড়ে ছয় বছরের প্রেম। পরে জুলিয়ানার সঙ্গে বিয়ের সম্পর্কের কথাবার্তা শুরু হয়। জুলিয়ানা তার বাবা মারকোস জিওরজিয়াংয়ের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নেন। গত ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশে আসেন জুলিয়ানা ও তার বাবা। ৩১ অক্টোবর কাকরাইল কাজী অফিসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা দেনমোহরে জুলিয়ানাকে বিয়ে করেন হিরু। এরপর মিরপুর-২ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। গত ৪ নভেম্বর হিরুর বাবা আবদুল খালেক স্থানীয়দের নিয়ে বধূবরণ উপলক্ষে ৩০০ লোকের মেজবানের আয়োজন করেন। স্থানীয় এক রিকশাচালক ওই নবদম্পতিকে নিয়ে আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখান। এ সময় জুলিয়ানার বাবাও রিকশা চালিয়ে  মেয়ে এবং জামাতাকে নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেন। বর্তমানে নবদম্পতি তাদের ভাড়া করা ঢাকার বাসায় অবস্থান করছেন। হিরু আরও জানান, হিরুরা তিন ভাই দুই বোন। সে ভাই বোনদের মধ্যে তৃতীয়। বাবা ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বর্তমানে অবসরে। জুলিয়ানার বাবা ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার। তারা থাকেন ব্রাজিলের সাওপাওলোতে। তারা দুই বোন। জুলিয়ানা বড়। সে নিউরো সায়েন্সে মাস্টার্স করেছে। বর্তমানে পিএইচডি করছে। বাংলাদেশে ব্রাজিল ফুটবল দলের প্রচুর সমর্থক আছে শুনে জুলিয়ানা বিস্মিত হয়। বিশেষ করে ঢাকা লালবাগের কেল্লা দেখতে যাওয়ার সময়ও ব্রাজিলের পতাকা উড়তে দেখে। গ্রামের বাড়িতে জুলিয়ানাকে দেখতে শত শত মানুষ ভিড় করে। এক পলকে মানুষ জুলিয়ানার দিকে তাকিয়ে থাকায়ও সে বিব্রত হয়। বিশেষ করে গ্রামের মহিলারা এসে তাকে ছুঁয়ে দেখে, সে মানুষ নাকি অন্য কিছু! প্রথমে হিরুর পরিবার এই বিয়েতে রাজি না হলেও পরে তাদের বুঝিয়ে রাজি করিয়েছেন। শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, তার শাশুড়ি ব্রাজিলে তাদের জন্য  ওয়েলকাম পার্টির আয়োজন করেছেন। তিনি আরও জানান, জুলিয়ানা কোরআন পড়ছেন। ধর্ম পালনের প্রক্রিয়াও শিখছেন। ‘কেমন আছেন, ভালো আছি।’ জাতীয় কিছু বাংলা শিখেছেন। বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতি তার ভালো লেগেছে। ঝাল, তেল, মসলাদার খাবার খেতে পারেন না। বাসায় কম মসলার খাবার রান্না করে খাচ্ছেন। কখনো রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাচ্ছেন। জুলিয়ানা কিছুদিন পরে ব্রাজিল চলে যাবেন পিএইচডি করতে। তার সঙ্গে সেখানে হিরুও চলে যেতে পারেন। তিনি বলেন, জুলিয়ানা ভালো একটা মেয়ে। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

সর্বশেষ খবর