শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অজ্ঞদের বাতিঘর

অজ্ঞদের বাতিঘর

সারপুকুর যুব ফোরামের জীর্ণশীর্ণ পাঠাগার

কয়েকজন যুবক। মিলেমিশে অক্ষর জ্ঞান দান করছেন অজপাড়া গায়ের অক্ষর জ্ঞানহীন মানুষদের। শুধু কী তাই! বঞ্চিত ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় সবল করে তুলছে এসব তরুণ। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে এ ফোরাম। বাল্যবিয়ে ও ইভ টেজিং বন্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে এই তরুণরা। হরিজন সম্প্রদায়ের সরকারের অধীনে অন্তর্ভুক্ত, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে তাদের প্রাপ্য জমি ফিরিয়ে দিতে দীর্ঘ আন্দোলন করে সফল হয়েছে সারপুকুর যুব ফোরাম।

সারপুকুর যুব ফোরাম পাঠাগার শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয়, নানা সামাজিক কাজেও সম্পৃক্ত এই সংগঠনটি। যুব ফোরামটি পথ নাটক ও শর্টফিল্মের মাধ্যমে দরিদ্র পরিবারকে ঈদসামগ্রী বিতরণ, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার আদায়সহ সমাজের অসংখ্য অসঙ্গতি তুলে ধরে। যুব ফোরামটির স্বপ্নদ্রষ্টা লালমনিরহাট সরকারি কলেজের ছাত্র জামাল হোসেন। কৃষক পরিবারের ছেলে জামাল হোসেন। শিক্ষাজীবন শুরু করেন গ্রামের ব্র্যাক স্কুলে। হরিদাস উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী।

সামাজিক এই কাজগুলো করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতারও সম্মুখীন হয়েছেন যুব ফোরামের সব সদস্য এবং প্রতিষ্ঠাতা জামাল হোসেন। গ্রামের মানুষজন বলতেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড সমাজের বড় লোকদের। তোমরা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে?’ পরিবার থেকেও নানা তিক্ততার শিকার হতে হয়েছে জামাল হোসেনকে। কিন্তু সৎ সাহসের এই কাজ থেমে যায়নি। জামাল হোসেন নিজের টিউশনির টাকা আর টিফিনের টাকা দিয়ে সেবামূলক কাজ করার চেষ্টা করতেন।

যুব ফোরামটির সদস্যরা বাল্যবিয়ের শিকার থেকে রক্ষা করে ১৩৪ জন ছাত্রীকে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছে। এদের একজন টিপের বাজারের দুস্থ গরিব বাবার মেয়ে রুনা বেগম। যার লেখাপড়ার দায়িত্ব নিয়ে প্রাপ্তবয়স হওয়ায় গত বছর রুনার বিয়ে দিয়েছে এই যুব ফোরাম। যুব ফোরামের প্রতিটি সদস্য নিজেদের পড়াশোনা শেষে প্রতিবেশীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলেছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় পাঠাগার ও ৪টি শাখা পাঠাগারও খুলেছে। সপ্তাহে এক দিন বইগুলো এক পাঠাগার থেকে অন্য পাঠাগারে চক্রাকারে সবার জন্য পৌঁছে দেওয়া হয়। বইয়ের অভাব পূরণে এ উদ্যোগ তাদের। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জামাল হোসেন বলেন, সারপুকুর পাঠাগারটিকে আধুনিক পাঠাগার হিসেবে গড়ে তোলা এবং যুব সমাজের জন্য কম্পিউটার শিক্ষার পরিকল্পনাও রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র এবং একটি বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তুলতে চাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর