শনিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের উচ্চ পদে প্রথম বাংলাদেশি

খন্দকার আবদুল্লাহর অনন্য কৃতিত্ব

শনিবারের সকাল ডেস্ক

খন্দকার আবদুল্লাহর অনন্য কৃতিত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে যোগদান করেছেন। ৩৩ বছর বয়সী খন্দকার আবদুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন সিলেটের  বালাগঞ্জ থানার তালতলা গ্রামে...

 

বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশিদের সাফল্যের খবর এখন আর নতুন কিছু নয়। প্রায়শই শোনা যাচ্ছে বিশ্বদরবারে বাংলাদেশিদের সাফল্যগাথা। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্ত হলো নতুন একটি নাম। তিনি বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ। 

বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত এনওয়াইপিডির ক্যাপ্টেন পদে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ বাহিনীর এত উচ্চ পদে এটাই প্রথম কোনো বাংলাদেশির নিয়োগ। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন খন্দকার আবদুল্লাহ। এনওয়াইপিডির সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। নিয়মিত বাহিনীতে প্রায় ৩০০ বাংলাদেশি আছেন। বাংলাদেশে সিলেটের বালাগঞ্জ থানার তালতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করা এই আমেরিকান বাংলাদেশি আরও অনেকের মতো বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে ১৯৯৩ সালে আমেরিকায় আসেন। নিউইয়র্কের বাংলাদেশিবহুল এলাকা কুইন্সের এস্টোরিয়া আর উডসাইড এলাকায় বেড়ে ওঠেন খন্দকার আবদুল্লাহ। তার বাবা প্রয়াত খন্দকার মদব্বির আলী এবং মা মুহিবুন্নেসা চৌধুরী। বর্তমানে দুই সন্তানের জনক খন্দকার আবদুল্লাহ স্ত্রীকে নিয়ে লঙ আইল্যান্ড এলাকায় থাকেন। ২০০৫ সালে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দেন নিজ আগ্রহ থেকে। তিনি কলেজে পড়ার সময় জব ফেয়ারে দেখেন এনওয়াইপিডিতে লোক নেওয়া হচ্ছে। সেখানে যোগ দেন তিনি। প্রথমে অবশ্য তিনি খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে পুলিশ বিভাগে কাজ শুরু করেন। ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার। অভিবাসী পরিবারের সন্তান হিসেবে আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে একটু কঠিনই। তবুও দমে যাননি তিনি কখনো। নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার স্বপ্ন তাকে পেয়ে বসে সেই সময়েই। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ পুলিশের উচ্চপর্যায়ের নির্বাহী পদে যোগ দিয়েছেন। বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী হিসেবে পরিচিত এনওয়াইপিডি। এখানে ক্যাপ্টেন পদে কাজ শুরু করেছেন ৩৩ বছর বয়সী খন্দকার আবদুল্লাহ। খন্দকার আবদুল্লাহ গণমাধ্যমে বলেন, ‘২১ ডিসেম্বর আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাবা-মায়ের সঙ্গে অভিবাসী হয়ে ১৯৯৩ সালে আমি আমেরিকায় আসি। নিউইয়র্কের বাংলাদেশিবহুল এলাকা কুইন্সের এস্টোরিয়া আর উডসাইড এলাকায় বসবাস শুরু করি। আমার ছোটবেলা এখানেই কাটে। ২০০৫ সালের সামারে নিউইয়র্কের পুলিশ বিভাগে যোগ দিই। একটা জব ফেয়ারে এনওয়াইপিডিতে লোক নেওয়া হচ্ছে দেখে অনেকটা খেয়ালের বশে আবেদন করি। তারপরই খণ্ডকালীন ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যাই। ইউনিভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিই পুলিশ ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেওয়ার।’

গণমাধ্যমে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে আরও বললেন, ‘যে নগরী আমাকে, আমার মতো অভিবাসীদের অনেক দিয়েছে, সে নগরীর নিরাপত্তার শপথ  নেওয়ার দিনটি ছিল বড় আবেগের।’

পুলিশ একাডেমির প্রশিক্ষণের পরই খন্দকার আবদুল্লাহর প্রথম দায়িত্ব পড়ে ইস্ট নিউইয়র্কের অপরাধবহুল এলাকা বলে পরিচিত ব্রুকলিনের ৭৫ প্রিসিংটে (পুলিশ অফিস)। ২০১৩ সালে এই বাংলাদেশি-আমেরিকান খন্দকার আবদুল্লাহ এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা হিসেবে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি লাভ করেন। পদোন্নতির পরপরই তার দায়িত্ব পড়ে সাউথ ব্রঙ্কসে। এলাকাটি নিউইয়র্ক পুলিশের সার্ভিস এলাকা-৭ নামে পরিচিত। এখানে সাদা পোশাকের পুলিশ হিসেবে কাজ করেন খন্দকার আবদুল্লাহ। পুলিশের কমান্ডিং অফিসার হিসেবে এলাকাটিতে তিনি সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন। এ সময়ে অপরাধ-সংশ্লিষ্ট সমস্যা চিহ্নিতকরণ, অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ, কার্যকর কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং পরিকল্পনা ও গৃহীত কৌশলের সাফল্য নিয়ে কাজ করে কৃতিত্ব দেখান খন্দকার আবদুল্লাহ। লঙ আইল্যান্ড সিটির ১০৬ প্রিসিংটেও এক বছর সার্জেন্ট হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের আগস্টে খন্দকার আবদুল্লাহ আবার লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান। লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতির পরই তাকে নিউইয়র্ক নগরীর ২৮ প্রিসিংটে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নিরাপত্তাজনিত নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ হার্লেম এলাকায় লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল্লাহ নিজের সততা, দক্ষতা ও বুদ্ধিমত্তায় মেধার স্বাক্ষর রাখেন। হার্লেম এলাকায় তাকে স্পেশাল অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাফল্যের সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ফলে ঊর্ধ্বতন অফিসারদের প্রিয়ভাজন হয়ে উঠতেও বেশি সময় লাগেনি। এই সময়ে খন্দকার আবদুল্লাহ নগরীর কৌঁসুলিসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করার সুযোগ পান। এ দায়িত্ব তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৮ এই দুই বছর পালন করেন। এর পরপরই তিনি পুলিশের পেশাদারি দেখাশোনাসহ নানা প্রশাসনিক কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। বিভাগীয় চূড়ান্ত পরীক্ষার পর ১০ ডিসেম্বর খন্দকার আবদুল্লাহকে জানানো হয় যে তিনি ২১ ডিসেম্বর ক্যাপ্টেন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নিউইয়র্ক নগরীর ট্রাফিকসহ পুলিশের অন্যান্য বিভাগ মিলে ১ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর