শনিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম পৌঁছে দেবে স্পুটনিক

শনিবারের সকাল ডেস্ক

প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা কার্যক্রম পৌঁছে দেবে স্পুটনিক

বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান লাইট অব হোপের আবিষ্কার সৌরশক্তিচালিত ছোট্ট ব্যাগপ্যাকে পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া সলিউশন...

স্কুলের ক্লাস বা প্রশিক্ষণের ক্লাস বলতেই বোঝায় কোনো শিক্ষক হাতেখড়ি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেখাচ্ছেন। কিন্তু এর ব্যতিক্রম কি কখনো এমন দেখেছেন যে, একজন শিক্ষক কাঁধে কেবল ব্যাগপ্যাক ঝুলিয়ে ক্লাস করাতে যাচ্ছেন। যে ব্যাগপ্যাকের মধ্যে রয়েছে তার ক্লাসরুমের সব সরঞ্জাম! হয়তো নয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের তরুণরা আবিষ্কার করল স্পুটনিক নামের একটি ছোট্ট ব্যাগপ্যাক।

 

সাধারণত ব্ল্যাকবোর্ড বা হোয়াইটবোর্ডের মাধ্যমে স্কুল বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় ক্লাস নেওয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশের একদল তরুণ তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আবিষ্কার করেছেন সৌরশক্তিচালিত ছোট্ট ব্যাগপ্যাকে পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া সলিউশন। ছয় কেজি ওজনের এই ব্যাগপ্যাকটির নাম দেওয়া হয়েছে স্পুটনিক।

কী উদ্দেশ্যে তৈরি?

সাধারণত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল বা কোনো এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো বিশেষ পরিস্থিতিতে স্কুলের ক্লাস বন্ধ থাকে মাসের পর মাস। এ ছাড়া দেশের অনেক গ্রামে এখনো পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ সুবিধা। সে সব এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো শিক্ষার আলো পাচ্ছে না। এমন এলাকায় শিশুদের ক্লাস কিংবা কোনোরকম প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয় পূর্ণাঙ্গ মাল্টিমিডিয়া সলিউশন স্পুটনিক। 

 

কী এই স্পুটনিক! 

স্পুটনিক সাধারণত একটি ব্যাগপ্যাক। যার মধ্যে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া সলিউশনের বিশেষ দুটি অংশ হচ্ছে স্পুটনিক পাওয়ার বক্স ও এলইডি প্রজেক্টর। আরও আছে ব্লুটুথ স্পিকার, একটি কম্পিউটিং স্টিক, কিবোর্ড, মাইক্রোফোন, সোলার প্যানেল, স্পুটনিক পাওয়ার ব্যাংক এবং ইউএসবি হাব। অভিনব এই উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে খুব সহজেই। আর বিশেষ এই পোর্টেবল স্ক্রিনটি পুরোটাই ডিজাইন ও ডেভেলপ করেছেন একদল তরুণ। বিশেষ এই ব্যাগপ্যাকটি তৈরি করেন ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া ও তার দল। ওয়ালিউল্লাহ শুধু একজন তরুণ উদ্ভাবকই নন, তিনি লাইট অব হোপ প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও। বিশেষ ব্যাগপ্যাকটি সম্পর্কে ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘২০১৬ সালে প্রথম এর ডিজাইন তৈরি করা হয়। এর অবশ্য উদ্দেশ্যও ছিল। শুরুটা হয়েছিল শিশুদের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান সিসিমপুরকে নিয়ে।  শিশুদের জনপ্রিয় এই অনুষ্ঠানটি গ্রামবাংলায় দারুণ জনপ্রিয়। কিন্তু তাদের একটি সমস্যা ছিল, বিশাল ভ্যানে করে প্রজেক্টর, জেনারেটর ইত্যাদি সব স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। তারা আমাদের একটি নতুন উদ্ভাবন দেখানোর প্রস্তাবনা করল। তাদের জন্য আমরা প্রথম ১০টি স্পুটনিক তৈরি করি।’

সিসিমপুরের শিক্ষণীয় পর্বগুলো গ্রামের শিশু ও তাদের মায়েদের দেখানোর উদ্দেশ্যে স্পুটনিক তৈরি করা হলেও তা মূূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা এবং গ্রামের নারীদের সচেতনতা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যা থেকে প্রায় ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ উপকৃত হয়েছে। বিশেষ এই মাল্টিমিডিয়া সলিউশন উদ্ভাবনের জন্য কেমব্রিজ ইনস্টিটিউট অব সাসটেইনেবল লিডারশিপ আয়োজিত ‘ইউনিলিভার তরুণ উদ্যোক্তা পুরস্কার-২০১৮’ পেলেন লাইট অব হোপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ালিউল্লাহ ভূঁঁইয়া। লাইট অব হোপ তাদের নিজস্ব গবেষণালব্ধ পণ্য ‘স্পুটনিক’-এর জন্য এই পুরস্কার পায়। সারা বিশ্বের প্রায় ২১২০ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে পুরস্কার পান ওয়ালিউল্লাহ ভূঁইয়া। আর পুরস্কৃত আটটি উদ্ভাবনের মধ্যে স্পুটনিক একটি।

সর্বশেষ খবর