শনিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
উদ্যোগ

চরফ্যাশনে কমিউনিটি রেডিওতে ১২ নারীর স্বপ্ন পূরণ

এম আবু সিদ্দিক, চরফ্যাশন (ভোলা)

চরফ্যাশনে কমিউনিটি রেডিওতে ১২ নারীর স্বপ্ন পূরণ

উপকূলীয় এলাকা ভোলার চরফ্যাশনে কমিউনিটি রেডিও মেঘনায় যোগদান করে নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে স্বপ্ন পূরণ করেছেন চরফ্যাশনের অন্তত ১২ তরুণী। তাদের প্রত্যেকেরই পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে খুব সহজেই মিডিয়া অঙ্গনে প্রবেশের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। খুঁজে পেয়েছে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ। খুব সহজেই কাক্সিক্ষত অবস্থানে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এখন এরা নিজেরাই রিপোর্টার, এডিটর, উপস্থাপিকা এবং প্রোগামার। তারা কেউ সংবাদ লেখেন, লাইভে থাকেন এবং বিনোদনসহ নানা অনুষ্ঠান করে ভোলার চরফ্যাশনে ইতিমধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন।

এই সফল তরুণীদের গল্পের শুরুটা এমনই। উপকূলের কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত রেডিও মেঘনার একঝাঁক উদ্যমী কর্মী। রেডিও মেঘনা বলতেই তৃণমূলে ছড়িয়ে রয়েছে কনিকা দে, নিশি মনি, মৌসুমী রানী, সালমা আফরিন, মারিয়া জান্নাত লাবনী, আঁখি আক্তার, ইসরাত জাহান শান্তা, মাইমুনা আফরোজ লিজা, সুমাইয়া বেগম, খাদিজা বেগম, সুরমা বেগম ও মৌমিতা জয়া। দুরন্ত প্রতিভা এদের। এক সংগ্রামী জীবনের পথচলায় এগিয়ে আসছেন তারা।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট্র ট্রাস্টের রেডিও এফ. এম ৯৯.০ কর্মী হয়ে এরা বেশ গর্বিত। পড়ালেখার পাশাপাশি এ কাজটিকে তারা বেশ উপভোগ করছেন। গত চার বছরের অধিক সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে রেডিও মেঘনাকে এগিয়ে নিয়েছেন তারা। রেডিও মেঘনা এখন তৃণমূলে সবার কাছে এক পরিচিত মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রেডিও মেঘনা ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু চরফ্যাশনে রেডিও মেঘনার উদ্বোধন করেন। এরপর থেকেই তাদের নিয়মিত আয়োজনে রয়েছে- কৃষি ও কৃষক, জেলে জীবন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্বাস্থ্য, পাঠশালা, আজকের শিশু, ভূমিহীন মানুষ, সফল নারী, প্রতিভাবান নারী, সফল উদ্যোক্তা, আমরা কিশোর-কিশোরী, রঙ্গ, সাজসজ্জাসহ নানা আয়োজনের ২৫টি ইভেন্ট। এসব অনুষ্ঠান অত্যন্ত সফলভাবেই করে যাচ্ছেন রেডিও মেঘনার কর্মীরা। প্রতিনিয়ত মাঠ পর্যায়ে কাজ করেই রেডিও মেঘনার জন্য তুলে আনছেন সাক্ষাৎকার, সংবাদ তৈরি, ভয়েস দেওয়া, তৃণমূলের প্রতিচ্ছবি ও বিনোদনের নানা আয়োজন।

মিডিয়ার এ কাজকে বেশ উপভোগ করছেন এই তরুণীরা। এই নারীদের নেতৃত্বে রয়েছেন আরেক সফল নারী রেডিও মেঘনার স্টেশন ম্যানেজার রাশিদা বেগম। তার দিকনির্দেশনায় এই তরুণীরা নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে এগিয়ে যাচ্ছেন। নারী সাংবাদিকতা নারীর ক্ষমতায়নে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে- এ বিষয়ে রাশিদা বেগম বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নই হচ্ছে সব ক্ষেত্রে নারীর বৈষম্য দূর করে নারীর সাংবাদিক হয়ে ওঠা। একজন নারী সাংবাদিক তার দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমেই প্রতিনিয়ত সমাজকে সচেতন করে, সরকারকে সচেতন করে দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কর্মসংস্থানে তথা সব পর্যায়ে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায়। নারী সাংবাদিকরা সমাজে নারীর অবস্থান তুলে ধরার মধ্য দিয়ে সবাইকে সচেতন করে এবং সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ভূমিকা পালন করে।

জীবন সংগ্রামী তরুণীদের মধ্যেই একজন কনিকা দে। তিনি চরফ্যাশন সরকারি কলেজ থেকে অনার্স পাস করেছেন। বাবা দেব সাগর দে একজন ব্যবসায়ী। কনিকা রেডিও মেঘনার অ্যাসিসটেন্ড স্টেশন ম্যানেজার পদে দায়িত্বরত রয়েছেন। কনিকা শুধু রিপোর্টিং, উপস্থাপনা ও প্রোগাম করেই নয়, কবিতা, আবৃত্তি, নাটক ও কৌতুকে বেশ পারদর্শী।

কনিকা তার পেশা সম্পর্কে বলেন, স্বপ্ন ছিল মিডিয়া অঙ্গনে কাজ করব, এখন স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কনিকা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। কনিকা আরও বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি মিডিয়ায় কাজ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। কাজটিকে আমি বেশ উপভোগ করছি। তাছাড়া প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে নারী হয়ে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিকূলতায় পড়তে হয় না। আমাদের সবাই সহযোগিতা করেন।

প্রোগ্রাম প্রডিউসার হিসেবে দক্ষতার সঙ্গেই কাজ করছেন আরেক সংগ্রামী তরুণী নিশি মনি। তার বাবা মো. সালাউদ্দিন, ব্যবসা করেন তিনি। নিশি পড়ছেন অনার্সে। নিশিও ভবিষ্যতে একজন সফল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চান। আরেক সংগ্রামী নারী মৌসুমী রানী দাস। তার পিতা লক্ষ্মী কান্তি দাস একজন ব্যবসায়ী। মৌসুমী চরফ্যাশন সরকারি কলেজে অনার্সে পড়াশোনার পাশাপাশি এই রেডিওতে কাজ করছেন। মৌসুমী রেডিও মেঘনার নিউজ প্রোডিউসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মৌসুমী পড়ালেখার পাশাপাশি রেডিওতে কাজ করে বেশ আনন্দিত।

শ্রতা ফিডব্যাক অফিসার হিসেবে কাজ করছেন আরেক তরুণী সালমা আফরিন। তিনিও চরফ্যাশন সরকারি কলেজে অনার্সে অধ্যয়নরত। তিনি নতুন এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, ‘এক সময় রেডিওর আর জে’দের রেডিওতে বলা মনোমুগ্ধকর কথা শুনতাম। এরপর থেকে রেডিওতে কাজ করার স্বপ্ন দেখতাম, অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হলো। এখন আমি একজন প্রতিষ্ঠিত রিপোর্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। তিনি আরও বলেন, নিজের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগালে সাফল্য নিশ্চিত। তাই সব সময় মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। ভবিষ্যতে একজন প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হতে চাই।

সর্বশেষ খবর