শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

নওগাঁর ৭ নারী

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর ৭ নারী

বর্তমান সময়ে সমাজে অসংখ্য নারী রয়েছেন যারা নিজেদের মনোবল, ইচ্ছাশক্তি এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হয়ে উঠছেন স্বাবলম্বী। আর তৃণমূল পর্যায় থেকে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অধিদফতর জীবনযুুদ্ধে জয়ী নারীদের স্বীকৃতি প্রদানের জন্য ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

স্মৃতি রানী মহন্ত : খুব অল্প বয়সে বিয়ে। স্বামী তার প্রতি উদাসীন। এক পর্যায়ে সংসার ভেঙে যায়। তবু ভেঙে না পড়ে প্রবল মনোশক্তি নিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। বর্তমানে এমএসসিতে পড়াশোনা করছেন। পাশাপাশি ব্র্যাকের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছেন। সব অভাব-অনটন, বাধাবিপত্তিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চান তিনি।

সাবিহা সুলতানা : রানীনগর উপজেলার বিলপালশা গ্রামের মৃত আবু বক্কর সিদ্দিকের মেয়ে সাবিহা সুলতানা। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য চলত নির্যাতন। একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। গরিব বাবা বাড়িতে এনে চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলেন। পরবর্তীতে স্বামীর বাড়ির লোকজন তাকে আর নিতে আসেনি। বর্তমানে তিনি নিজ গ্রামে বিউটি পারলার বসিয়েছেন। তার পারলারে ৮-১০ জন বেকার মহিলার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।

সানজিদা আক্তার তিশা : সংসারের কাজকর্ম শেষ করার পর বসে অলস সময় কাটাতেন। পাশের এক কৃষক নদীর ধারে তার জমিতে বছরের পুরো সময় কোনো না কোনো সবজি চাষ করতেন। সেই কৃষক নিজের পরিবারের প্রয়োজন মিটিয়ে বাজারে সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ করতেন। তখন তার মনে একটি জেদ কাজ করল; পুরুষেরা পারলে তিনি কেন পারবেন না। তখন স্বামীর সহযোগিতায় শুরু করেন নদীর ধারে সবজি চাষ। নদীর তীরে স্বামীর পরিত্যক্ত জমিতে সবজি চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তিনি। স্বামীর পাশাপাশি তিনিও এখন নিজের সংসারে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছেন। উৎসাহিত হচ্ছেন আশপাশের অন্য নারীরাও।

জবেদা খাতুন : জীবন সংগ্রাম করে সফল হয়েছেন জবেদা খাতুন। হাঁস-মুরগি পালন করে সফলতা পেয়েছেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে তার প্রায় দুই লাখ টাকা পুঁজি রয়েছে।

অনিতা রায় : পিতা দিনমজুর ছিলেন। অনেক কষ্ট করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতেন। একদিন বাবার কপালে হাত দিয়ে দেখেন গায়ে জ্বর। কাজ করতে নিষেধ করলে বাবা বলেন, কদিন পরই তো মাস শেষ, প্রাইভেটের বেতন দিতে হবে মা। এখন অনিতা রায় পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি করছেন।

আলো রানী সাহা : দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এইচএসসি পাসের পর তার বিয়ে হয়। স্বামী বেকার। বিয়ের পর তাদের অভাবের সংসারে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সামান্য পুঁজির এক পানের দোকান শুরু করেন। প্রতিদিন পান বিক্রি থেকে যে লাভ হতো তা দিয়ে চালিয়ে নিতেন তাদের  দৈনন্দিন খরচ। এখান থেকেই টাকা বাঁচিয়ে একমাত্র ছেলে অনিকের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। অনিক এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত।

ফাহিমা বেগম : ১৯৮৫ সালে সাপাহারে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর সমাজসেবামূলক কাজে স্বামীর উৎসাহ পান। দুঃখের বিষয় তার স্বামী ১৯৯৭ সালে স্ট্রোক করেন এবং ১২ বছর চিকিৎসাধীন থেকে ২০০৯ সালে মারা যান। বিয়ের পর থেকে উপজেলার সদর ইউনিয়নে যৌতুক প্রথা নিরোধ, আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়ন, সমাজের অসহায় ও অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোসহ সমাজ সংস্কারমূলক বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়াতে সমাজের একশ্রেণির মানুষ তার কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ২০০৩ সালে সাপাহার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সংরক্ষিত মহিলা আসনে জয়লাভ করেন। ২০০৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত টানা ১২ বছর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। স্বামীহারা এই নারী বর্তমানে নওগাঁ জেলা পরিষদের সম্মানিত সদস্য।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর