শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
ভ্রমণ

খাসিয়া-জৈন্তাহিলের পাদদেশে...

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

খাসিয়া-জৈন্তাহিলের পাদদেশে...

সিলেট-জাফলং রোড সৌন্দর্যে ভরপুর। হরিপুরের কাছে যেতেই মনে হবে ‘পাহাড় ঘুমিয়ে ওই...। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় শ্রেণির কোলে জৈয়ন্তিয়া, লালখাল আর জাফলং। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় শ্রেণির কিছু অংশ পড়েছে বাংলাদেশের জৈন্তা-জাফলং রোডে যাওয়ার পথে ডানদিকে। সিলেট শহর থেকে জাফলং রোডে হরিপুর পার হলে দেখা যায় দূরের পাহাড়। মেঘ-পাহাড়ে লুকোচুরি। আর ফেনিল ঝরনার লাফালাফি। দরবস্ত পার হতেই সারিঘাটের কাছাকাছি আসলে ক্রমেই কাছাকাছি হতে থাকে সবুজ সবুজ পাহাড়। জৈন্তা পার হলেই নলজুড়ি-তামাবিল যতই নিকট হতে থাকে একেবারেই কাছে চলে আসে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো। জৈন্তা থেকেই জাফলং পর্যন্ত এ পাহাড় শ্রেণির পাদদেশে ঘুরে রোমাঞ্চকর সময় কাটাতে পারেন। আর জাফলং গেলে তো হাতের কাছেই পাবেন পাহাড় শ্রেণি, পাথর স্তূপ, ঝরনা আর মেঘালয়ের ছোট বাজার। আর ডাউকি ব্রিজের কথা নাই বললাম। আর একটা কথা বলে রাখি তামাবিল পার হলেই পাহাড়ি রাস্তার রোমাঞ্চ পাবেন। হালকা উঁচু-নিচু রাস্তা আর পাশের চাবাগান পার্বত্যাঞ্চলের ফ্লেভার দেবে কিছুটা।

সিলেট থেকে জাফলং যেতে প্রথমেই দেখে নিতে পারেন জৈন্তা রাজবাড়ি। শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে এ রাজবাড়ির অবস্থান। তবে বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেলেও সিলেট তামাবিল মহাসড়কের মাঝখানে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জৈন্তা রাজাদের পান্থশালা। সিলেট শহর থেকে তামাবিল সড়কে যেতে দরবস্ত বাজার জৈন্তা রাজাদের বাড়ি। পাশেই জৈন্তাহিলের পাদদেশে কমলা বাগান। জৈন্তা রাজবাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার সামনে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। জাফলংয়ের পাঁচ কিলোমিটার আগে নলজুড়ি এলাকায় বিশাল টিলার ওপরে গড়ে তোলা হয়েছে পাহাড়ি এ অবকাশ কেন্দ্র। পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্য। ওখানকার পাহাড়ের সৌন্দর্য এখান থেকে উপভোগ করা যায় ভালোভাবেই। জৈন্তা রিসোর্ট থেকে উপভোগ করা যায় মেঘালয় পাহাড়ি ঝরনার সৌন্দর্য। এরপর তামাবিল পেরিয়ে জাফলং। ওপারে মেঘালয়ের খাসিয়া-জৈন্তা পাহাড় আর এপারে জাফলং মাঝে পিয়াইন নদী। জাফলংয়ের বুক চিরে বয়ে গেছে দুই নদী। ধলাই ও পিয়াইন। পাহাড়ের বুক চিরে ফেনিল ঝরনার লাফালাফি। পিয়াইনের স্বচ্ছ জলে স্তরে স্তরে সাজানো নানা রঙের নুড়ি-পাথর ও উত্তোলনের দৃশ্য। নদীর তীরেই খাসিয়াপুঞ্জী। দূর থেকে তাকালে মনে হবে আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়। আর পাহাড়বেয়ে ভারতের জিপ চলাচল ও সীমান্তসংলগ্ন ছোট্টবাজার। আর পাহাড়ের গায়ে নরম তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য । প্রকৃতি যেন নিজ হাতেই সৌন্দর্য দিয়েছে জাফলংয়ের। আর মেঘালয় যেন মেঘের বাড়ি। মেঘালয় নাম শুনলেই শিহরিত হতে হয়। মেঘের আড্ডাস্থল যেন মেঘালয়ের প্রতিটি পাহাড়ের প্রতিটি অংশ। উড়ছে তো উড়ছেই। সাদা সাদা মেঘ। তার মধ্যে মায়াবী সর ঝরনা। চারদিকের সবুজ অংশে সাদার মোহনীয়তা ভোলার কথা নয়। খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইন। খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড় থেকে জন্ম নিয়ে এ নদী মিশেছে সুরমার সঙ্গে।

 

কীভাবে যাবেন

সিলেট শহর হতে ৫৬ কিলোমিটার দূরে পাথরের স্বর্গ জাফলং অবস্থিত। দেশের যে কোনো স্থান থেকে সিলেটে আসার পর সেখান থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত জাফলং। বাস, মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা বা লেগুনায় যাওয়া যায়। এজন্য লোকাল বাসে ভাড়া পড়বে ৬৫ টাকা। আর রিজার্ভ মাইক্রোবাস ভাড়া করতে ৩০০০-৩৫০০ টাকা গুনতে হবে।

সর্বশেষ খবর