শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিক্ষার্থীদের ২ টাকার ব্যাংক

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

শিক্ষার্থীদের ২ টাকার ব্যাংক

এবার ব্যাংকের আদলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্কুলের ছাত্রীরা। এই ব্যাংকে নিজেরা টাকা রেখে প্রয়োজনে নিজেরাই উঠাতে পারবে। আবার দরিদ্র শিক্ষার্থীসহ সুবিধাবঞ্চিতা পাবে এই ব্যাংক থেকে শিক্ষা উপকরণসহ অর্থ সাহায্য। শিক্ষাথীদের দ্বারাই পরিচালিত এ ব্যাংকের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্টুডেন্টস ব্যাংকিং ও ওয়েলফেয়ার’। যা শিক্ষার্থীদের কাছে দুই টাকার ব্যাংক নামে পরিচিতি পেয়েছে। সাড়াও ফেলেছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ ব্যাংকে প্রথম অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য দুই টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে নেওয়া হয়। আর সার্ভিস চার্জ নিয়ে করা হয়েছে কল্যাণ ফান্ড। যা শিক্ষার্থীদের কল্যাণেই ব্যয় হবে। এই ফান্ড থেকে স্কুলের অভাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে খাতা-কলম, জামা-জুতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ। উপকৃত হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত এবং দরিদ্র্য পরিবারের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা প্রতিমাসে জমা করছে সর্বনিম্ন দুই টাকা। প্রতিবছর একজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন জমা করবে ২৬ টাকা। বছর শেষে ব্যাংক চার্জ হিসেবে কেটে নেওয়া হবে মাত্র ২ টাকা করে। বাকি ২৪ টাকা শিক্ষার্থী ইচ্ছে করলেই স্কুল চলাকালীন তুলে নিতে পারবে। ২৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু হয়। উদ্বোধন করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও দিনাজপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ব্যাংকটির নির্বাচিত দায়িত্ব প্রাপ্ত গভর্নর সূচনা রায় পূজা বলেন, ‘স্টুডেন্টস ব্যাংকিং ও ওয়েলফেয়ার’ নামে ব্যাংকটি চালু করার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের অভাবী ও দারিদ্র্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হবে। যাতে কোনো কিছুর অভাবে স্কুলে আসা বন্ধ না হয় শিক্ষার্থীদের। সুবিধাবঞ্চিতের লেখাপড়ার সুযোগসৃষ্টিতে ভালো লাগছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ব্যাংকটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থসচিব রেজওয়ানা ইসলাম জানান, আমরা ব্যাংক পরিচালনার মধ্যদিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে আমাদের ধারণা জন্মাচ্ছে এবং মানবিক কিছু কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি। ব্যাংকটি পরিচালনার পরিকল্পনাকারী বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক মো. মোসাদ্দেক হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণে এক শিক্ষার্থী ১০০ টাকার অভাবে ফরমপূরণ না করতে পারায় অঝরে কাঁদছিল। বিষয়টি জানার পর শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ফান্ড গঠনের পরিকল্পনা করি। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ‘স্টুডেন্টস ব্যাংকিং ও ওয়েলফেয়ার’ যা ২ টাকার ব্যাংক প্রবর্তন করা হয়েছে। কোনো দরিদ্র শিক্ষার্থী বিনা শর্তে তার টিউশন ফি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্যান্য ফি প্রদানে এই ব্যাংক ফান্ডে সঞ্চিত টাকা থেকে আবেদন করে টাকা গ্রহণ করে, ফি প্রদান করতে পারবে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রতন কুমার রায় জানান, ২ টাকার এই ব্যাংকটি পরিচালনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে একজন গভর্নর, একজন অর্থসচিব, বিভিন্ন শ্রেণিকে ব্যাংকের ব্রাঞ্চ করা হয়েছে এবং শ্রেণিগুলোর ক্লাস ক্যাপ্টেনকে দেওয়া হয়েছে ব্যাংক ম্যানেজার এবং সহকারী ক্যাপ্টেনকে করা হয়েছে সহকারী ম্যানেজার। আর পুরো কার্যক্রমকে মনিটরিংয়ে আমিসহ কয়েকজন শিক্ষক রয়েছি। দেশে এই স্কুলেই এ ধরনের ব্যাংকিং চালু হলো।

সর্বশেষ খবর