শনিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
আনিশা ফারুক

অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নেতৃত্বে প্রথম বাংলাদেশি

সাইফ ইমন

অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট কাউন্সিলের নেতৃত্বে প্রথম বাংলাদেশি
বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় অক্সফোর্ডের ছাত্রদের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হলেন আনিশা ফারুক। অক্সফোর্ডের ইতিহাসে আনিশা ফারুক প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিক্ষার্থী যিনি সভাপতি নির্বাচিত হলেন। ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অক্সফোর্ডের ওয়েস্টন লাইব্রেরিতে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। আনিশা এর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেবার পার্টির কোচেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন...

 

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৯৬১ সালে অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নের যাত্রা হয়। এই প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনো শিক্ষার্থী অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতৃত্বে এসেছেন। তিন ধাপের নির্বাচনের পর অক্সফোর্ডের ওয়েস্টন লাইব্রেরিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পত্রিকা অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট। প্রতিটি ধাপেই সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন কুইন্স কলেজের ইতিহাসের ছাত্রী আনিশা ফারুক। এর আগে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি  লেবার কাবের কোচেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট পত্রিকার প্রধান সম্পাদক পদেও ছিলেন এক সময়। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অক্সফোর্ডের ওয়েস্টন লাইব্রেরিতে নির্বাচনের ফলাফল  ঘোষণা করা হয়। চূড়ান্ত পর্বে ১৫২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আনিশা ফারুক। ৪৭৯২ জন ভোটার নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। সর্বমোট ৪৭৯২ ভোটে জয়ী হন তিনি।  প্রেসিডেন্ট পদের আরেক প্রার্থী এস্পায়ার প্যানেলের এলি মিলনে-ব্রাউন অবশ্য দ্বিতীয় দফায় বাদ পড়ে যান। তবে ফাইনাল রাউন্ডে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় স্বতন্ত্র প্রার্থী আইভি ম্যানিংয়ের সঙ্গে। এই প্রার্থী পান ১৪১৬ ভোট। আনিশা এর আগে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লেবার পার্টির কোচেয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। এই কাবের পক্ষ থেকে বিতর্ক, সোশ্যাল ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কাজকর্ম পরিচালনার অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তিনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মুখপাত্র পত্রিকা ‘অক্সফোর্ডস্টুডেন্ট’ এর চিফ-এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এই বাংলাদেশি বংশো™ভূত। আনিশার গ্রামের বাড়ি ভোলার চর ফ্যাশনে। আনিশার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর ফারুক আহামেদ বলেন, আনিশা শুধু আমার মুখ উজ্জ্বল করেনি, আমার দেশের মুখও উজ্জ্বল করেছে। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। আনিশা খুবই প্রচার বিমুখ উল্লেখ করে গর্বিত এই বাবা বলেন, স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ে রেকর্ড পরিমাণ স্টার পেয়েও তাকে কোনো পত্রিকা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দেওয়ানো যায়নি। মেয়ের জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করছেন তিনি। আনিশার চারজনের পরিবারে রয়েছেন আনিশার মা রেহানা চৌধুরী এবং ভাই জিবরান ফারুক।

লন্ডনের বারহাম প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু হয় আনিশার। ওয়েম্বলি হাই টেকনোলজি কলেজ থেকে জিসিএসি ও এ-লেভেল পাস করেন। সহজাত নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়েই জন্মেছিলেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় হেড গাল ছিলেন। তুখোর ছাত্রী হিসেবেও সুনাম কুড়িয়েছেন। জিসিএসি ও এ-লেভেলে ১৪ বিষয়ে ‘এ’ স্টার এবং ছয় বিষয়ে ‘এ’ মার্ক পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। স্কুলজীবনেই তার লেখা ছাপা হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকাশনায়। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্ররাজনীতিতে সক্রিয় হন আনিশা। ছিলেন অক্সফোর্ড ইউনিয়নের নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য। এই ইউনিয়নের আয়োজিত বিতর্ক অনুষ্ঠানে   বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ নেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ১৯৭৩ সালে এই ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তবে অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ও অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন দুটি ভিন্ন সংগঠন।

অক্সফোর্ড স্টুডেন্ট ইউনিয়ন খুবই কার্যকরী একটি ছাত্র সংসদ। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষানীতি নির্ধারণ ও দাবি-দাওয়া নিয়েই কাজ করার পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামের উচ্চ শিক্ষায় সরকারের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রেও কাজ করে থাকেন। তাই এই ছাত্র সংসদের পদগুলো খুবই প্রেস্টিজিয়াস। নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ২২ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করছেন আনিশা ফারুক। একই সঙ্গে তিনি এশিয়ান বংশোদ্ভূত দ্বিতীয় শিক্ষার্থী যিনি এই গৌরব অর্জন করলেন। এর আগে ১৯৯৩ সালে প্রথম জাতিগত সংখ্যালঘু হিসেবে আকাশ মহারাজা সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ১৯৯৪ সালে ছাত্র ইউনিয়নের মত খর্ব করার বিলের বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়ে সফল হয়েছিলেন এবং  সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রী জন প্যাটেনকে  বরখাস্ত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। নির্বাচনী অঙ্গীকারে আনিশা ফারুক সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন ছাত্রছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্য। ‘মাইন্ড ইউর হেড’ নামে একটি ক্যাম্পেইনের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন যা মানসিক অসুস্থতা জয় করার জন্য কাজ করে। এ ছাড়া একটি ওয়েলফেয়ার ফান্ড গঠন নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন যার মাধ্যমে অক্সফোর্ডের অধীনে কলেজ এবং সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়। আরও রয়েছে শিক্ষার্থীদের রুম বুকিং সহজতর করাসহ শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা রকম বিষয়। 

স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর সঙ্গে নানা নীতি প্রণয়নে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আনিশার। অক্সফোর্ড ফোরামের উইমেনস অফিসারের দায়িত্বও তিনি পালন করেছেন। অক্সফোর্ড ফোরাম শিক্ষার্থীদের বক্তৃতা ও বিতর্কে উৎসাহিত এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তাদের যুক্ত করে। পাশাপাশি স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ট্রাস্টি বোর্ডের উইমেনস অফিসার, টিচ অ্যা চাইল্ড-আফ্রিকা দাতা সংস্থার ট্রাস্টি বোর্ড মেম্বার, অক্সফোর্ড ইউনিয়নের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শাখায়ই আনিশার রয়েছে উজ্জ্বল উপস্থিতি।

সর্বশেষ খবর