শনিবার, ২ মার্চ, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রথম নারীর ‘সোর্ড অব অনার’ অর্জন

বৈমানিক রিয়ানার স্বপ্ন পূরণ

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বৈমানিক রিয়ানার স্বপ্ন পূরণ

বিমান বাহিনীর ফ্লাইং অফিসার রিয়ানা আজাদ বাংলাদেশের নারী অগ্রযাত্রায় সাফল্যের আরেক পালক যুক্ত করলেন। দেশের সামরিক ইতিহাসে এই প্রথম কোনো নারী বৈমানিক; যিনি প্রশিক্ষণকালে সার্বিক বিষয়ে সেরা কৃতিত্বের জন্য ‘সোর্ড অব অনার’ পেলেন। এটি সামরিক বাহিনীর প্রাক-কমিশন প্রশিক্ষণকালীন সর্বোচ্চ সম্মান ও গৌরবের প্রতীক। কোর্সের শ্রেষ্ঠ ফ্লাইট ক্যাডেটকে ‘সোর্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। গত ১২ ডিসেম্বর যশোরে অবস্থিত বিমান বাহিনী একাডেমি প্যারেড গ্রাউন্ডে ৭৫ নম্বর বাফা (বাংলাদেশ এয়ারফোর্স অ্যাকাডেমি) কোর্সে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে জিডি (পি) শাখায় নারী বৈমানিক হিসেবে কমিশন লাভ করেন রিয়ানা আজাদ। এদিন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাকে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সোর্ড অব অনার প্রদান করেন। এবার ১০ জন মহিলা ক্যাডেটসহ ৬১ জন ফ্লাইট ক্যাডেট কমিশন লাভ করেছেন।

দীর্ঘ তিন বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর বিমান বাহিনীতে কমিশন পেয়েছেন রিয়ানা আজাদ। তিনি বললেন, ‘ছোটবেলা থেকে নীল আকাশে পাখির মতো ভেসে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখতাম। বিমানের উড়ে যাওয়া দেখে মনের কোণে উঁকি দিয়েছিল আকাশে ওড়ার স্বপ্ন। আজ সে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পাওয়ায় আমি আনন্দিত। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একটি দক্ষ, আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাংলার আকাশ মুক্ত রাখার দৃপ্ত প্রত্যয়ে উজ্জীবিত এই বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হতে পেরে আমি গর্বিত।

সোর্ড অব অনার পাওয়ার পর রিয়ানা আজাদ বলেন, ‘সামরিক বাহিনীতে একাডেমির দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সবচেয়ে সম্মান ও গৌরবের প্রতীক সোর্ড অব অনার পেয়ে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। এই অর্জনে বিএএফ একাডেমিতে আমার সিনিয়রদের স্মরণ করছি, যারা আমাকে প্রশিক্ষণের সময় প্রতিটি বিষয়ে হাতে-কলমে শিখিয়েছেন। দক্ষ প্রশিক্ষকদেরও ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যারা আমাকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রেখেছেন। সর্বোপরি মহান আল্লাহ তাআলা ও আমার বাবা-মায়ের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। কেননা, তিনিই সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের যোগদানের সুযোগ করে দিয়েছেন।’ তিন ভাইবোনের মধ্যে বড় রিয়ানা। তাদের পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায়। তবে রিয়ানার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেছেন ২০১৩ ও ২০১৫ সালে। দুটি পরীক্ষাতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন রিয়ানা। এরপর আকাশে ওড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি ফ্লাইট ক্যাডেট হিসেবে বিএএফ একাডেমিতে যোগ দেন তিনি। রিয়ানার বাবা মো. আবুল কালাম আজাদ একজন প্রকৌশলী। তিনি চাকরি করছেন কুয়েত এয়ারওয়েজে। মা তাসলিমা আক্তার গৃহিণী। তার ছোট ভাই নটর ডেম কলেজে পড়ছে এবং ছোট বোন পড়ে চতুর্থ শ্রেণিতে।

রিয়ানার বাবা মেয়ের সাফল্যে গর্বিত। তিনি বলেন, ‘রিয়ানা ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিল। ওর লেখাপড়ার প্রতি আমরাও খেয়াল রাখতাম।’ রিয়ানার মা বলেন, ‘আমার মেয়ে যখন প্রশিক্ষণে যায়, তখন আমি অজান্তেই বলে ফেলেছিলাম, তুই সোর্ড অব অনার পাবি। এ কথাই আজ সত্যি ওর জীবনে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমরা ওর এই অর্জনে আনন্দিত এবং গর্বিত।

বিমানবাহিনী একাডেমিতে একজন প্রশিক্ষণার্থীকে সামরিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ভবিষ্যতের একজন সুনাগরিক হওয়ার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। রিয়ানা বলেন, ‘ডিসিপ্লিন, ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড এক্সিলেন্স ইন অল উই ডু’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে একজন সৎ, নির্ভীক ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এই একাডেমির রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। একাডেমির সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে আমি মুগ্ধ।’

যারা এ পেশায় আসতে চান, তাদের উদ্দেশে রিয়ানা বললেন, বর্তমানে বিমান বাহিনীতে উলেøখযোগ্যসংখ্যক নারী কর্মকর্তা রয়েছেন। একইভাবে বাড়ছে নারী বৈমানিকের সংখ্যাও। নারীদের জন্য বিমান বাহিনী একটি নির্ভরযোগ্য কর্মক্ষেত্র। পরিশ্রম, মেধা এবং ইচ্ছাশক্তি থাকলে যে কোনো ক্ষেত্রেই সাফল্য লাভ করা যায়। ছেলে-মেয়ে আলাদা হিসেবে না দেখে নিজেকে একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখলে কোনো বাধাই আর বাধা মনে হবে না। এভাবেই নারীরা এগিয়ে যাবে অদম্য গতিতে।

সর্বশেষ খবর