লাঠিতে ভর দিয়ে একটু দাঁড়াতে পারেন। নিজের শিরদাঁড়া (মেরুরুজ্জু) ক্ষতিগ্রস্ত। অনেকটা মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। থাকেন দূর প্রবাসে। প্রায় অচল শরীর নিয়ে গ্রামে অনাথদের পাশে ছুটে আসেন। তিনি চেষ্টা করছেন অনাথ শিক্ষার্থীদের শিরদাঁড়া মজবুত করতে। তিনি মোবারক হোসেন মোহন। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার ভুবনঘরে। থাকেন কানাডায়। সেখানের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিভাগে চাকরি করেন। তার মন পড়ে থাকে গ্রামে। এখানে তিনি আনন্দ ভুবন গড়ে তুলেছেন। গড়ে তুলেছেন দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদ। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, অলাভজনক হালিমা আইডান হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানা এবং আবদুস সাত্তার মেম্বার কিন্ডারগার্টেন। ব্যবস্থা করেছেন নানাজনের কর্মসংস্থানের। এ ছাড়া চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন গ্রামের মানুষদের। প্রতি বছর এসে মাসখানেক থেকে তদারকি করেন।
ভুবনঘর গিয়ে দেখা যায়, মাদরাসায় মনোযোগ দিয়ে কোরআন পড়ছেন শিক্ষার্থীরা। তদারকি করছেন মোবারক হোসেন মোহন। তিন চার পা হাঁটার পর হাঁপিয়ে যান। পাশে চেয়ার পেয়ে বসে যান। গাড়িতে উঠতে বা ছোট সিঁড়ি বেয়ে উঠতে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। বিশেষ করে ডান পা তেমন কাজ করে না, ধরে উঠিয়ে দিতে হয়। কিন্তু তার মনোবল প্রবল। একইভাবে কিন্ডারগার্টেনে যান। শিক্ষার্থীদের হৈহুল্লোড় দেখেন। মোবারক হোসেন মোহন বলেন, বাবা ছিলেন এলাকার জনপ্রতিনিধি। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছেন। মানুষের বিপদে এগিয়ে যেতেন। তাই তার মৃত্যুর ৫০ বছরেও মানুষ তাকে স্মরণ করছেন। আমিও কাজের মাধ্যমে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। তিনি বলেন, ২০১২ সালে অসুস্থতায় অপারেশন করতে গিয়ে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মৃত্যুর মুখে চলে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে মনে হলো এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। আমি না থাকলে সন্তানদের কী হতো। তাই অনাথদের কল্যাণের চেষ্টা করছি। শরীর না চললেও মনের জোরে মানুষের পাশে থাকতে প্রতি বছর দেশে চলে আসি। এখানের এক দুই মাসের নেওয়া মানসিক শক্তি দিয়ে সারা বছর উজ্জীবিত থাকি। হালিমা আইডান হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মো. সাদেকুর রহমান বলেন, এ মাদরাসায় নির্দিষ্ট পরিমাণ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের থাকা-খাওয়া, পোশাক ও শিক্ষাসামগ্রী বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের কোথাও দান তুলতে পাঠানো হয় না। আলোকিত বজ্রপুর সংগঠনের পরিচালক রফিকুল ইসলাম সোহেল বলেন, মোহন মানসিক শক্তি দিয়ে তার শারীরিক সমস্যাকে জয় করেছেন। তার শেকড়কে ভোলেননি, তাই কানাডার ঐশ্বর্যপূর্ণ জীবন রেখে বার বার ফিরে আসছেন। সমাজ থেকে যা নিয়েছেন, তা ফিরিয়ে দিতে চান। তার এ অনুভূতি সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক।