বগুড়ার কাহালু উপজেলার পাঁচখুর গ্রামে তালের আঁশের তৈরি পণ্যসামগ্রী রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪টি দেশে। চার গ্রামের প্রায় ১ হাজার নারী-পুরুষ এসব পণ্য তৈরি করে নিজেদের ভাগ্য বদলাচ্ছেন। তালের আঁশ দিয়ে ৩৪৫ ধরনের সামগ্রী তৈরি করে তারা পেয়েছেন সচ্ছলতা। তবে সরকারিভাবে তাদের তৈরি পণ্য ক্রয় করলে ন্যায্যমূল্যসহ লাভবান হতে পারতেন বলে জানান তারা। উদ্যোক্তারা বলছেন, আর্থিক সহায়তাসহ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করে এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।
জানা যায়, কাহালু উপজেলার পাইকর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম পাঁচখুর। গ্রামটিতে ঢুকতেই সড়কের দুই পাশে দেখা মিলবে সারি সারি তালগাছ। গ্রামের লোকজন সড়কের পাশে, ফাঁকা জায়গায় ও পতিত জমিতে তালের বীজ রোপণ করে আসছেন অনেক আগে থেকেই। এসব তালগাছের পাতার ডাঁটা থেকে বের করা আঁশ দিয়ে ঘরে বসেই নারী-পুরুষরা তৈরি করছেন নানা রকমের শৌখিন তৈজসপত্র। এ গ্রামসহ আশপাশের অন্যগ্রামগুলোতে তৈরি করা হচ্ছে তালের আঁশের টুপি, ফুলঝুড়ি, ম্যাট, স্যালেন্ডার, কিচেন, ওভাল ম্যাট, পানপাতা ম্যাট, বাকের ম্যাট, চাকা, ফুটকাপ, লন্ড্রিসহ প্রায় ৩৪৫ রকমের পণ্যসামগ্রী। গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই পণ্যসামগ্রী তৈরিতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ। তাল গাছের ঢিঙ্গা থেকে আঁশ বের করে তা দিয়ে তৈরি হরেক রকম জিনিসপত্র বৈশাখী মেলা, পূজা-পার্বণসহ বিভিন্ন উৎসবে বিক্রি হয়ে থাকে। সাংসারিক ছোটখাটো কাজে ব্যবহারের জন্য ও ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এসব শৌখিন জিনিসপত্র তৈরি করে সচ্ছলতা এসেছে এসব গ্রামের অনেকেরই। তাদের তৈরি পণ্য রপ্তানি যাচ্ছে ইংল্যান্ড, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া জার্মানি, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, চীন, দুবাই, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের ১৪টি দেশে।
তৈজসপত্র বানানোর কারিগররা জানান, গ্রামের সব বাড়িতেই তালপাতার ডাঁটা থেকে পাওয়া আঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি হয় বারো মাস। তালপাতার ডাঁটা কিছুটা শুকানোর পর হাতুড়ি দিয়ে থেঁতলে আঁশ বের করা হয়। পরে তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় হরেক রকম তৈজসপত্র।
পাঁচখুর গ্রামের বুলি খাতুন নামের এক নারী জানান, ১৪ বছর আগে শ্বশুরবাড়ি আসার পর দেখতে পান শাশুড়ি-ননদ থেকে শুরু করে প্রতিবেশী সব নারী তালগাছের আঁশ দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করেন। তাদের দেখে তিনিও এ কাজ শুরু করেন।
পাঁচখুর গ্রামের তৈরি এসব পণ্য সংগ্রহ করে রপ্তানিকারকদের সরবরাহ করেন স্থানীয় বাসিন্দা সাবান আলী। তিনি জানান, গ্রামের এ শিল্প প্রায় শত বছরের পুরনো। এক সময় টুপি এবং গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত পণ্য তৈরি হতো স্বল্প পরিসরে। দিনে দিনে চাহিদা বাড়ায় এখন তৈরি হচ্ছে বাহারি পণ্য। প্রকারভেদে এসব পণ্য পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে।