ব্যাংক ও পুকুরের জন্য সুনাম ছিল কুমিল্লার। সঙ্গে সবুজ শ্যামল নগরী হিসেবেও পরিচিতি ছিল। সেই সবুজ গাছ অনেক কমে গেছে। গত এক দশকে নগরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বহুতল ভবন। তার সঙ্গে কমেছে গাছ। তবে সম্প্রতি কুমিল্লা নগরীর ছাদের বারান্দায় বাড়ছে সবুজের আনাগোনা। এসব স্থানে চাষ হচ্ছে ফল, ফুল ও সবজি।
সরেজমিন নগরীর বিভিন্ন ছাদ ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের ছাদ যেন এক টুকরো সবুজ উদ্যান। সেখানে পাখির কিচিরমিচির শব্দও কানে এসে দোল দিয়ে যায়। এমন একটি ছাদবাগান চোখে পড়ে কুমিল্লা নগরীর অশোকতলায়। স্মরণিকা নামের নয় তলা ভবন। এর ছাদে উঠলে চারপাশে নজরে পড়ে সারি সারি বহুতল ভবন। ওই ছাদে যেন সবুজের গালিচা। বাগানে ২০ প্রকারের বেশি ফল গাছ, ১০ প্রকারের সবজি ও পাঁচ প্রকারের মসলা চোখে পড়ে। রয়েছে কবুতর ও মুরগির খামার। মানুষের আনাগোনা দেখলে বাইরের পাখিগুলো দূরে উড়ে যায়। ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কমলা, মালটা, আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, ডালিম, বেদানা, কলা, করমচা, কুল, লিচু, আমড়া, অড়বরই, পেঁপে, সফেদা ও জলপাই। সবজির মধ্যে চাষ হয়েছে আলু, টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পুদিনা, কলমি শাক, বেগুন, শিম, করলা, লাউ, চাল কুমড়া ও শজিনা। রয়েছে মেহেদি গাছ ও আখ। মসলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মরিচ, আদা, হলুদ, গোল মরিচ, ধনিয়া।
বাগানি মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আখন্দ বলেন, এ স্থানে আমাদের বড় বাড়ি ছিল। বাড়িতে ২১টি নারিকেল গাছ, ১৭টা আম গাছ, কাঁঠাল, পেয়ারা, কলাসহ বিভিন্ন কাঠ গাছ ছিল। সময়ের প্রয়োজনে ভবন করতে হয়েছে। তবে সবুজ সেই পরিবেশ খুব মিস করি। তাই ছাদবাগান করি। সকাল বিকাল পরিচর্যার সঙ্গে সন্ধ্যায় বাগানের ভিতরে বসে থাকি। সবুজ গাছ আর নীল আকাশ দেখতে দেখতে দারুণ সময় কেটে যায়। আকাশে পূর্ণিমার ছাদ থাকলে তো চারপাশ স্বর্গীয় হয়ে ওঠে।
কুমিল্লা কৃষি ও কারিগরি কলেজের শিক্ষক লুমানিস সায়গাল রাশা বলেন, ছাদবাগান ব্যয়বহুল। বাণিজ্যিকভাবে লাভের হিসাব করা যাবে না। তবে ছাদবাগান থেকে তরতাজা, ফল, সবজি ও মসলা পাওয়া যাচ্ছে। বাগানের কাজে দারুণ সময় কেটে যায়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও বাগান ভূমিকা রাখছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, কুমিল্লা নগরীর বারান্দায় ও ছাদে ফল, ফুল ও সবজির চাষ বাড়ছে। এটা আশাব্যঞ্জক খবর। বাগানিদের আমরা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছি।