উপমহাদেশের টেরাকোটা অলংকরণের বৈচিত্র্য সমাহার ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির এবং ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। যেখানে দূর-দূরান্তের পর্যটক ছাড়াও ভিআইপিদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। প্রাচীন যুগের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উত্তরের এই ঐতিহাসিক কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি শত বছর আগের রাজা ও মুঘল যুগের জিনিসপত্র, সোনা-রুপার টাকা ছাড়াও মূল্যবান কষ্টিপাথরের মূর্তিসহ প্রাচীন বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজানো হয়েছে। দেয়ালের টেরাকোটা অলংকরণের মাঝে দরজা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেই থরে থরে সাজানো রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত বিভিন্ন সাইজের কষ্টিপাথরের দেবতার মূর্তি। যা পর্যটকদের নজর কাড়ে। কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরে সবচেয়ে ছোট ১ ফুট এবং সর্বোচ্চ ১০ ফুট উচ্চতার কষ্টিপাথরের মূর্তি রয়েছে। আবার ৫ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ কেজি ওজনের মূর্তিও এখানে রয়েছে। সব ধরনের ৩ শতাধিক বিভিন্ন দেব-দেবতার মূর্তি এখানে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। টেরাকোটা অলংকরণের বিস্ময়কর বৈচিত্র্যময় ও নান্দনিকতার ছোঁয়ায় দৃষ্টিনন্দন ঐতিহাসিক কান্তজিউ মন্দির দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের ভিড় বাড়ছেই। ছুটির সময় ছাড়া সারা বছরই দেশ-বিদেশ থেকে অনন্য এ নিদর্শন দেখতে আসেন অসংখ্য পর্যটক। আর এসব পর্যটকের বাড়তি জানার আগ্রহ মেটাবে ইতিহাস-ঐতিহ্য সংবলিত কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি।
ঐতিহাসিক কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী কাস্টডিয়ান হাফিজুর রহমান জানান, ভারতের রাজমহল পাহাড়ের পাথর দিয়ে হাজার বছর আগে থেকে পূজা করার জন্য বিভিন্ন দেবতার মূর্তি বানানো হতো। কিন্তু ১২ শতকের পর থেকে সেই পাহাড় বিলুপ্ত হয়ে যায়। এ কারণে ওই পাহাড়ের পাথর না থাকায় আর কষ্টিপাথরের মূর্তি করা হয় না। তাই আজ কষ্টিপাথরের গুণাগুণ, মূল্য অনেক বেশি। তিনি আরও জানান, এ পর্যটন কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। এখানে মাত্র ১০ জন আনসার, পাঁচজন স্থায়ী ভিত্তিতে গার্ড ও বাগান পরিচর্যার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে রয়েছে পাঁচজন। যা পর্যাপ্ত নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি সরকারি ছুটির দিনসহ সাপ্তাহিক বন্ধ রবিবার। সোমবার বিকাল ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত এবং অন্য দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকে। টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।
কান্তজিউ মন্দির দেখতে আসা সুকুমার, স্বপ্না, কবিতা রায়সহ অনেকেই জানান, মন্দিরের নান্দনিকতা দেখে আমরা এককথায় অভিভূত। আর কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি সবার জানার আগ্রহ অনেকটাই মেটাতে পারবে।
দিনাজপুর জেলা সদর থেকে ২০ কিমি উত্তরে এবং কাহারোল উপজেলা সদর থেকে ৭ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে সুন্দরপুর ইউনিয়নে দিনাজপুর-পঞ্চগড় মহাসড়কের পশ্চিমে ঢেপা নদীর তীরে কান্তনগর এলাকায় প্রাচীন টেরাকোটার অনন্য নিদর্শন কান্তজিউ মন্দির অবস্থিত। এর পাশে রয়েছে কান্তনগর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। সেখানে যাওয়ার পথে ঢেপা নদীর ওপর তৈরি হয়েছে কান্তনগর ব্রিজ। মন্দিরের পাশে রয়েছে রেস্ট হাউসও। কেনাকাটার জন্য মার্কেট আর রাস্তা উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রবেশদ্বারে স্থাপন করা হয়েছে তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ। যার নাম দেওয়া হয়েছে সিদু কানু চত্বর।