প্রযুক্তির দ্রুত উৎকর্ষতার এই যুগে মানুষের জীবনযাপনের ধরন পাল্টে যাচ্ছে মুহূর্তেই। কয়েক বছর আগেও যা ছিল জীবনযাপনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ, আজ তার দেখাই পাওয়া যায় না। ৮ হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে টিকে থাকা গরুরগাড়ি আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। হারিয়ে গেছে ধান ভানার ঢেঁকি। কয়েক দশক আগেও রাতের অন্ধকার কাটানোর প্রধান অবলম্বন ছিল হারিকেন। যা আজকের প্রজন্ম চোখেই দেখেনি। হারিয়ে গেছে রুপা, তামা বা কাঁসার প্লেট, গ্লাস কিংবা জগ। কৃষিকাজের লাঙল-জোয়ালের পরিবর্তে এখন স্থান পেয়েছে ট্রাক্টর। বিনোদন উপকরণ সেই গ্রামোফোন বা কলের গান এখন আর নেই। এরপর ক্যাসেট প্লেয়ার, সিডি প্লেয়ারও অতীত হয়ে গেছে। সব কিছুরই ডিজিটাল রূপ আজ মানুষের হাতে হাতে।
একসময়ের নিত্য ব্যবহার্য এসব জিনিস শখের বসে অনেকেই সংগ্রহ করে রাখেন। তেমনই একজন যশোরের ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শার নিজামপুর গ্রামের শাজাহান কবির। পেশায় পার্টস মেকানিক শাজাহানের সংগ্রহশালায় এ ধরনের ২ শতাধিক জিনিসপত্র রয়েছে। এসবের মধ্যে আছে শত বছরের পুরনো পানি পানে ব্যবহৃত রুপার ঘটি, কাঁসার থালা, বদনা, অর্ধশত বছরের পুরনো রেডিও। কিছু দিন আগ পর্যন্তও দেশে ব্যবহৃত ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সাও সংগ্রহে রেখেছেন তিনি, যা আজ আর চোখে পড়ে না। পাকিস্তান আমলের ১০০ টাকার নোটসহ বেশ কয়েক রকমের কাগজের মুদ্রাও রয়েছে তার সংগ্রহে। আছে কয়েক ধরনের হারিকেন, হ্যাজাক লাইট, ক্যাসেট প্লেয়ার। একতারার মতো বাদ্যযন্ত্রও সংগ্রহে রেখেছেন তিনি।
শাজাহান কবির বলেন, এক সময়ের নিত্য ব্যবহার্য এসব জিনিসপত্র পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তুলে
ধরার উদ্দেশ্যেই তিনি এসব সংগ্রহ শুরু করেন। তিনি বলেন, তার এই সংগ্রহশালা দেখে ডিজিটাল যুগের নতুন প্রজন্ম আগেকার দিনের ম্যানুয়াল যুগের মানুষের নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। দুই যুগের মানুষের জীবনযাপনের পার্থক্য বুঝতে পারবে। শাজাহান কবির বলেন, প্রতিদিন অনেকেই আসেন তার এই সংগ্রহশালা দেখতে। শিক্ষার্থীরাও আসে। শাজাহান কবিরের সংগ্রহশালা দেখতে আসা আবদুল কাদের বলেন, আগেকার দিনের মানুষের নিত্য ব্যবহার্য অনেক কিছুই শাহাজানের সংগ্রহশালায় রয়েছে যেগুলোর নাম আমরা শুনেছি, কিন্তু কখনো দেখিনি। শাজাহান কবির অনেক কষ্টে, অনেক অর্থ ব্যয় করে এসব সংগ্রহ করেছেন তা বোঝাই যায়। আগেকার দিনের মানুষের ব্যবহৃত এসব জিনিসপত্র দেখে সহজেই অনুমান করা যায়, তারা কতটা পরিশ্রমী ছিলেন, কতটা কষ্ট করতেন। এসব দেখে এটাও বোঝা যায়, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষের জীবন কতটা সহজ করে দিয়েছে।