বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কার হাতির শুঁড়ের ব্যবহারের ধরন নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে। মানুষের মধ্য যেমন ডানহাতি বা বাঁহাতির বিভাজন আছে, তেমনই হাতিরাও শুঁড়ের কোন দিক ব্যবহার করবে তার একটি বিশেষ পছন্দ থাকে।
এই ‘ট্রাঙ্কেডনেস’ বা শুঁড়ের ব্যবহারের দিকনির্ণয় করতে বিজ্ঞানীরা এখন শুঁড়ের ভাঁজ ও গোঁফ দেখে সেটি নির্ধারণ করতে পারছেন।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শুঁড় বাঁদিকে মোড়ায়, তাদের শুঁড়ের বাঁ পাশে বেশি ভাঁজ ও দীর্ঘ গোঁফ থাকে। ডানদিকে মোড়ানো শুঁড়ের ক্ষেত্রে গোঁফ মাটির সাথে ঘষার কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। গবেষক ড. মাইকেল ব্রেখট বলছেন, ‘গোঁফের দৈর্ঘ্য পার্থক্যটি স্পষ্ট, তবে ভাঁজের পার্থক্যটি সূক্ষ্ম হলেও তা ব্যবহারভিত্তিক প্রভাব দেখায়।’
এই গবেষণা ‘রয়্যাল সোসাইটি ওপেন সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এতে এশীয় ও আফ্রিকান হাতির শুঁড়ের ভাঁজের বিবর্তন নিয়ে সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণায় মৃত ও জীবিত হাতির শুঁড়ের ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হাতির বয়স বাড়ার সাথে সাথে শুঁড়ের ভাঁজের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়।
এশীয় হাতিদের শুঁড়ে আফ্রিকান হাতিদের তুলনায় বেশি ভাঁজ থাকে। বিশেষ করে এশীয় হাতিদের শুঁড়ের উপরের অংশে গাঢ় ভাঁজগুলো বেশি থাকে। এ নিয়ে গবেষকরা মনে করেন, শুঁড়ের ভাঁজগুলো এটিকে আরো নমনীয় করে তোলে, ঠিক যেমন অ্যাকর্ডিয়নের ভাঁজ। এজন্য এশীয় হাতির শুঁড়ে বেশি ভাঁজ দেখা যায়।
গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আফ্রিকান হাতির শুঁড়ের ডগায় দুটি আঙুলের মতো গঠন থাকে, যা দিয়ে তারা জিনিসপত্র ধরে। অন্যদিকে, এশীয় হাতির শুঁড়ে একটি মাত্র আঙুলের মতো গঠন থাকায় তারা জিনিস ধরতে শুঁড় মোড়ানোর পদ্ধতি ব্যবহার করে। এ কারণে তাদের শুঁড় বেশি নমনীয় হওয়া প্রয়োজন, এবং এজন্য তাদের শুঁড়ের ভাঁজ বেশি থাকে।
গবেষণা আরও বলছে, হাতির শুঁড়ের ভাঁজ জন্মের আগেই গঠন শুরু হয় এবং গর্ভাবস্থার ৮০ থেকে ১৫০ দিনের মধ্যে শুঁড়ের ভাঁজ দ্বিগুণ হয়। তবে এশীয় হাতিদের ভাঁজের সংখ্যা তুলনামূলক দ্রুত বাড়ে।
ড. ব্রেখট বলেন, হাতির শুঁড় একটি অত্যন্ত বিশেষ অঙ্গ, যা মস্তিষ্কের স্নায়ুর সাথে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। "শুঁড় একটি অদ্ভুত ও বিস্ময়কর ধরার যন্ত্র, যা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। এর সাথে তুলনা করা যায় শুধু হাতকে।"
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল