বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের উন্নয়নে কী কী ভূমিকা রাখছে ইসলামী ব্যাংক?
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকল্প হিসেবে ইসলামিক ব্যাংকিং ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ইসলামিক ব্যাংকিং যাত্রা শুরুর কাল থেকে দেশের উন্নয়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছে। এ রকম কয়েকটি খাত নিয়ে নিচে আলোচনা করা যায়।
রপ্তানি : দেশের রপ্তানিতে ইসলামী ব্যাংকের অবদান অনেক। যা একটি অন্যতম খাত হিসেবে বিবেচনাযোগ্য। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩২১.৩১ বিলিয়ন টাকা। পাশাপাশি ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে রপ্তানি থেকে আয় দেশের ডলার রিজার্ভ বাড়াতে এবং আমদানি-রপ্তানির ঘাটতি মেটাতে সহায়তা করে।
আমদানি : চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোট আমদানির পরিমাণ ৫০৪.৩৬ বিলিয়ন টাকা। এই আমদানি প্রক্রিয়ায় ইসলামিক ব্যাংকিং সহায়ক ভূমিকা পালন করছে এবং যে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো শরিয়াহভিত্তিক আমদানি সেবাও নিয়ে থাকে তাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হচ্ছে।
প্রবাসী আয় সংগ্রহ : বিদেশি রেমিট্যান্স সংগ্রহ এবং দেশব্যাপী প্রাপকের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী ব্যাংক একটি বিশ্বস্ত নাম। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) ইসলামিক ব্যাংকিংগুলোর মাধ্যমে মোট রেমিট্যান্স সংগ্রহ হয়েছে ২৫৮.৯৭ বিলিয়ন টাকা। যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) : ইসলামী ব্যাংকগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতার (সিএসআর) জায়গা থেকে বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে।
টেকসই ও সবুজ অর্থায়ন : বাংলাদেশ সরকার গ্রিন ফাইন্যান্সিং পলিসি চালু করেছে। দেশের টেকসই আর্থিক উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক কার্যক্রম গ্রহণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্রিন ফাইন্যান্সিংয়ে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করেছে। এ ছাড়া দেশে গ্রিন ফাইন্যান্সিংকে প্রোমোট করতে ইসলামী ব্যাংকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন এবং উদ্যোক্তাদের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করা। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) ইসলামী ব্যাংকের মোট টেকসই অর্থায়ন হয়েছে ২৩১.৪৩ বিলিয়ন টাকা।
কর্মসংস্থানে ইসলামী ব্যাংকের ভূমিকা : বাংলাদেশে বর্তমানে ১০টি পুরোদস্তুর ইসলামী ব্যাংক আছে, যারা দেশের বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট প্রায় ৪৮,২৪২ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে আসছে এমন কোম্পানিতে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দারিদ্র্যবিমোচনে কর্মসংস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ; তাই ইসলামী ব্যাংকগুলো কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ইসলামী ধারার ব্যাংক?
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : এটা বুঝতে প্রথমেই এই গ্রোথের ফ্যাক্টরগুলো বুঝতে হবে। ফিচ রেটিংসের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের চাহিদা, এর উন্নয়ন এবং এর বাজারের আকার মূলত নির্ভর করে জনসচেতনতা, শরিয়া সংবেদনশীলতা, আস্থা, ভুল ধারণা, সেবার উপযোগিতা, নিয়ম-নীতি ও ডিজিটাল ব্যাংকিং নেটওয়ার্ক-এর ওপর।
একটি পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পাই, ইসলামী ব্যাংক মূলত তিন শ্রেণির গ্রাহকদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
♦ প্রথম শ্রেণি : যারা শরিয়াহভিত্তিক সেবাকে প্রাধান্য দেয়। এর পর মূল্য, সেবার মান এবং অন্যান্য বিষয়।
♦ দ্বিতীয় শ্রেণি : যারা কিছুটা শরিয়াহ সংবেদনশীল। তারা ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সেবা গ্রহণ করে যদি মুনাফা ও অন্যান্য সেবা কনভেনশনাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার মতো হয়।
♦ তৃতীয় শ্রেণি : যারা আর্থিক বিষয়ে শরিয়াহ সংবেদনশীল নয়। তাদের কাছে দাম, প্রাপ্যতা এবং সেবা বিবেচ্য বিষয়।
ওই বিষয়গুলো আমরা যেভাবেই পর্যালোচনা করি না কেন, ইসলামিক ব্যাংকিং পরিষেবা জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে আমার ব্যক্তিগত অভিমতগুলো হলো-
ভালো বিকল্প : মুসলিম জনগোষ্ঠীর দ্রুত বৃদ্ধি এবং জীবনযাপনের মানোন্নয়নে কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
ধর্মীয় বিশ্বাস : বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা তাদের বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে।
স্থায়িত্ব ও টেকসই : ইসলামিক ব্যাংকিং চুক্তি বা লেনদেনগুলো মূলত সম্পদ বা পণ্যের বিপরীতে হয়। তাই বিচ্যুতি হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে কম।
নৈতিক ভিত্তি : শরিয়াহ নীতির কারণে ইসলামিক ব্যাংকিং নৈতিক ব্যাংকিং হিসেবেও পরিচিত, যা মানবকল্যাণে পরিচালিত হয়।
পণ্যের ভিন্নতা : প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে সমান্তরালভাবে পণ্য ও সেবার প্রাপ্যতা। এই ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক পণ্য যেমন : ওয়াকফ, তাকাফুল, সুকুকও প্রস্তাবিত হয়।
প্রযুক্তির ব্যবহার : ইন্টারনেট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ডিজিটাল পেমেন্ট, অনলাইন লেনদেন প্ল্যাটফর্ম, আর্থিক শিক্ষা অ্যাপস এবং আরও কিছু।
সরকারি সহায়তা : সরকার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা এবং ইসলামী অর্থায়নকে সমর্থন করে কৌশলগত পরিকল্পনা সহায়তা প্রদান।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ইসলামী ব্যাংক ও প্রচলিত ব্যাংকিংয়ে মধ্যে পার্থক্য?
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : ইসলামিক ব্যাংকিং নিয়ে ওআইসি প্রদত্ত সংজ্ঞাটি সামনে আনতে চাই। ওআইসির মতে, ‘ইসলামী ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান, যার অবস্থান, নিয়মনীতি এবং পদ্ধতি স্পষ্টভাবে ইসলামী শরিয়াহর নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এর যেকোনো কার্যক্রমে সুদ গ্রহণ ও প্রদানের নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে।’ অর্থাৎ এটা স্পষ্ট যে, এই ব্যাংকের একটি ‘শরিয়াহ নীতি’ পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং দ্বিতীয়টি হলো ‘সুদ’ (রিবা) থেকে বিরত থাকা। তাই বলা যায়, প্রচলিত ব্যাংকিং এবং ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মধ্যে বড় দাগে এই দুটি পার্থক্য বিদ্যমান।
এ ছাড়া আমরা কয়েকটি পার্থক্য দেখাতে পারি-
উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মূল উদ্দেশ্য- মানবজাতির কল্যাণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, যেখানে প্রচলিত ব্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় বিষয়টির কোনো গুরুত্ব নেই।
শরিয়াহ নীতিমালা : এটা নিশ্চিত করা যে, কোনো লেনদেন, চুক্তি বা যেকোনো ব্যবসাবাণিজ্য সুদ (রিবা), চরম অনিশ্চয়তা (গারার), জুয়া (মাইসির), ক্ষতি (ধরার), অবিচার (জুলম) এবং নিষিদ্ধ ব্যবসা থেকে মুক্ত।
প্রক্রিয়াগত পার্থক্য : আমানত, বিনিয়োগ, ক্রয়বিক্রয়, ভাড়া, সেবা এবং এগুলোর প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে এই ব্যাংকের চুক্তি হয়। একে ইসলামী মোডও বলা হয়।
স্ট্যান্ডার্ড : AAOIFI (ইসলামী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য হিসাব ও নিরীক্ষা সংস্থা) একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা ১৯৯১ সালে বাহরাইনে প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের প্রধান দায়িত্ব হলো- ইসলামিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শরিয়ার মানদন্ড তৈরি এবং প্রকাশ করা। ইসলামিক ব্যাংকিং পরিচালনায় প্রায় সব দেশই এই মানদন্ড অনুসরণ করে।
শরিয়াহ সুপারভাইজারি কমিটি : ইসলামী ব্যাংকগুলোর স্বাধীন শরিয়াহ কমিটি থাকেব, যা তার ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত হয় কিনা তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ এবং নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : ইসলামী ধারার ব্যাংকিংয়ের মুদারাবা কনসেপ্ট-মুনাফার অংশীদারি, লাভে মুরাবাহা বিক্রি (লোনের ক্ষেত্রে) এবং মুসারাকা লাভ-লোকসানের ভাগাভাগি দিকগুলো নিয়ে যদি কিছু বলেন-
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : আমানত সংগ্রহ, সেই অর্থ বিনিয়োগ করে আয় এবং আমানতকারীকে মুনাফা অংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে মুদারাবা একটি অত্যন্ত সুপরিচিত ধারণা। মুদারাবা বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো-
♦ মুদারাবা হলো শ্রম ও পুঁজির একটি অংশীদার, যেখানে একজন অংশীদার সম্পূর্ণ পুঁজি প্রদান করে এবং অন্যজন ব্যবসা পরিচালনা করে।
♦ পূর্বনির্ধারিত অনুপাতে আমানতকারী এবং মুদারিব (ব্যাংক)-এর মধ্যে মুনাফা বণ্টন করা হয় এবং লোকসান আমানতকারীকে বহন করতে হয়।
মুরাবাহা একটি ক্রয় ও বিক্রয় চুক্তি। অর্থাৎ একজন গ্রাহক পণ্যের বা সেবার প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার চাহিদা জানায়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহকারীর কাছ থেকে পণ্য ক্রয় করে এবং সেই পণ্য নির্দিষ্ট মুনাফায় গ্রাহকের কাছে বিক্রি করে। গ্রাহক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একবারে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে পারে অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কিস্তির মাধ্যমেও মূল্য পরিশোধ করতে পারে। যা মাসিক কিস্তিতে (ইএমআই) হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে গ্রাহক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই শরিয়াহ অনুমোদিত শর্তাবলি অনুসরণ করতে হবে।
মুশারাকা মূলত আরবি শব্দ ‘শারিকা’ থেকে এসেছে, যার অর্থ শেয়ারিং বা ভাগাভাগি। ইসলামিক ব্যাংকিয়ের অর্থ অংশীদারি উদ্যোগ, যেখানে দুই বা তার বেশি পক্ষ সমান বা বিভিন্ন অনুপাতে মূলধন বা ইক্যুইটি শেয়ার, লভ্যাংশের হার পূর্বে নির্ধারণ এবং মূলধন অনুযায়ী ক্ষতি বহন করে। এখানে উভয় অংশীদার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য উদ্যোগে অংশগ্রহণ করেন এবং সেটা পরিচালনা করেন। মুশারাকার নানা প্রকার রয়েছে। যা উদ্যোগ অনুযায়ী প্রয়োগ হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : প্রচলিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে যাদের ইসলামী শাখা ও উইন্ডো আছে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিটি শাখা থেকে অনলাইনে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে, তার মানে সাধারণ মানুষ এখন ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে দিকে ঝুঁকছে?
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : এটা সত্য- ইসলামিক ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এতে মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। প্রচলিত ব্যাংকের শাখাগুলোতে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী। এই সিদ্ধান্তের ফলে বিস্তৃত পরিসরে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষকে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়ার একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন : দেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তনে ইসলামী ব্যাংকগুলো কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?
সৈয়দ ইবনে শাহরিয়ার : চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৪) ইসলামিক ব্যাংকিং খাতে মোট জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪,৩৯৪.৬৫ বিলিয়ন টাকা, যা সমগ্র ব্যাংকিং খাতের প্রায় ২৬.২৩ শতাংশ। একই সময়ে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে মোট বিনিয়োগ (ঋণ ও অগ্রীম) দাঁড়িয়েছে ৪,৫৬৯.৯৪ বিলিয়ন টাকা, যা ব্যাংকিং খাতে মোট বিনিয়োগের ২৮.২৪ শতাংশ। এ থেকে বলা যায় যে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবা বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। যাই হোক, একটি ইসলামী অর্থনীতি গড়তে এ খাতে জমা ও বিনিয়োগ আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। সুদভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের প্রধান ক্ষতি/ঝুঁকি হলো- প্রথমত, কয়েকজনের হাতে আর্থিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং তারা তাদের প্রয়োজন মতো অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বৈষম্য। ইসলামী অর্থনীতি এই বৈষম্যের বিপরীতে অবস্থান নেয়। যা মানবকল্যাণ, সম্পদ এবং সম্পত্তির সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে এই মুহূর্তে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে-
♦ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার, যা আমাদের নৈতিকতা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা এবং মূল্যবোধ শেখাতে পারে।
♦ ইসলামী জ্ঞানের চর্চা একটি ইসলামী সমাজ এবং অর্থনীতি গড়ে তুলতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইসলামী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না, কারণ- সাধারণের মধ্যে প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞানের অভাব।
♦ বাংলাদেশে প্রায় ৪০টি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে, ফলে সবার সম্মতিতে একটি স্বাধীন মুনাফা হার নির্ধারণ করা যেতে পারে (প্রথাগত ব্যাংকিং থেকে আলাদা)। গ্রাহককে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে উপযোগী প্রস্তাবনা তৈরি করতে পারে।
♦ আইন করে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সমগ্র ব্যাংকিং খাতের ৫০ শতাংশ গ্রাহককে ইসলামিক ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকারকে ব্যাংকগুলোর জন্য একটি কৌশল ও রোডম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে।
♦ প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের চেয়ে ইসলামিক ব্যাংকিংকে আরও এগিয়ে নিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।