শনিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

আমরা একে অপরের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করি

আমরা একে অপরের বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করি

প্রীতম আহমেদ। একজন সংগীতশিল্পী, কবি ও সমাজকর্মী। তিনি সংগীতচর্চার পাশাপাশি মানবাধিকার, সমাজসেবামূলক কাজ করেন। প্রীতম কিশোর বয়স থেকেই সংগীতের সঙ্গে জড়িত। কবীর সুমন, অজয় চক্রবর্তী, ওস্তাদ রশীদ খান, বব ডিলান প্রমুখ জীবনমুখী শিল্পীদের দ্বারা প্রভাবিত। অন্যদিকে এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী স্মৃতি। দীর্ঘদিন পর আবারও অভিনয়ে ফিরেছেন তিনি। এই তারকা জুটির জীবন, সংসার ও সমসাময়িক নানা বিষয় তুলে ধরেছেন- আলী আফতাব

 

মাঘ মাসের শেষে শীতের দাপট যখন কমে আসতে শুরু করে, হালকা শীতল বাতাস জানান দেয় বসন্তের আগমনের কথা। ঘড়ির কাঁটা যখন ২টা বেজে ২০ মিনিট, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শোবিজ বিভাগের স্পেশাল আড্ডায় যোগ দিয়ে বসুন্ধরায় আসেন জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী প্রীতম আহমেদ ও তার স্ত্রী এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেত্রী স্মৃতি। প্রথমে ছবি তোলার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান এই তারকা জুটি। ক্যামেরার প্রতিটি ক্লিকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছবির জন্য নতুন নতুন পোজ দিতে ভুল করছেন না প্রীতম আহমেদ ও স্মৃতি। তাদের ভালোবাসাগুলো ফ্রেমবন্দী হওয়ার পর আমরা চলে যাই আড্ডার মূল পর্বে।

আড্ডার শুরু হয় প্রীতম আহমেদের জনপ্রিয় গান ‘বালিকা তোমার প্রেমের পদ্ম দেওয়া এমন জনকে’ গানটি দিয়ে। আমাদের প্রশ্ন ছিল গানটির মধ্য দিয়ে তিনি আসলে বালিকাদের কী বলতে চেয়েছেন। উত্তরে প্রীতম আহমেদ বলেন, ‘আমি আসলে বালিকাদের বিয়ে করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছি। আমি বলতে চেয়েছি, তোমরা প্রেম-ভালোবাসা যাই কর, একটু ভেবেচিন্তে কর।’ ঠিক এ গান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্মৃতি বলেন, ‘গানটির জলজ্যান্ত প্রমাণ আমার পাশেই বসে আছে। আমি এই মানুষটাকেই আমার প্রেমের পদ¥টা দিয়েছি। আর আমি বিশ্বাস করি, এতে আমার কোনো ভুল হয়নি।’ এমন একটি প্রশ্নের সুন্দর উত্তর পেয়ে আমরা চুপ হয়ে গিয়েছিলাম কিছু সময়ের জন্য। প্রীতম আহমেদ ও স্মৃতির সম্পর্কের শুরুটা যে প্রেমের মধ্য দিয়ে- তা আমরা অনেকেই জানি। তারপরও তাদের মুখ থেকে ওই গল্পটি শোনার কৌতূহল সামলাতে পারলাম না আমরা। প্রথম প্রেমের গল্পটা শুরু করেন প্রীতম আহমেদ। ‘আমি স্মৃতির কাজগুলো টিভিতে দেখেছি ১৯৯৬/৯৭ এর দিকে। কিন্তু স্মৃতি মিডিয়াতে কাজ শুরু করে ১৯৯২ সাল থেকে। তার বড় ভাই আমার সহকর্মী ছিলেন একটি টিভি চ্যানেলে। সব মিলিয়ে তার একটা গ্রহণযোগ্যতা ছিল আমার কাছে। তাই বলে কিন্তু ওকে আমি বোন হিসেবে দেখেনি কোনো দিন হা..হা..হা..। তারপর শুরু হয় ফেসবুকে যোগাযোগ।’ তখন আমাদের মনে প্রশ্ন, ফেসবুকে কে প্রথম রিকোয়েস্ট পাঠায়? উত্তরে স্মৃতি বলেন, ‘আমিই মনে হয় প্রীতমকে প্রথম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। আমি ফেসবুকে দেখতাম প্রীতম আহমেদ নামের একটি ছেলে বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে ছবি দিয়ে বেড়ায়। আমার খুব ভালো লাগত। এ বিষয়টি আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে আমি শেয়ার করি। নাম তার রাত্রি। এক সময় ও মিডিয়াতে কাজ করত। একদিন রাত্রি আমাকে বলে, ‘জানিস প্রীতম ভাই বিয়ের জন্য মেয়ে দেখছেন। তুই রাজি থাকলে আমি কথা বলতে পারি।’ আমি বললাম, ‘আমি নিজেই তার সঙ্গে কথা বলব।’ তারপর প্রীতমকে আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই। আর আমার প্রথম কথা ছিল ‘তুমি এখন কোথায়’ তার মানে কোন দেশে।’ তারপরের গল্পটা বলার ভারটা প্রীতম আহমেদ নিজেই তুলে নেন তার ঘাড়ে। তিনি বলতে শুরু করেন, ‘ফেসবুকে প্রথম কথা হয়। প্রায় আড়াই বছর পর দ্বিতীয় দফায় তার সঙ্গে কথা বলি। এক রাতে আমার কাছে জানতে চায় আমি জেগে আছি কি না? আমি ওই সময় জেগে ছিলাম। জানতে চায় কী করছ? আমি বললাম, এখন আম খাব। তারপর আমার প্রশ্ন ছিল, আমাদের মধ্যে যদি কোনো সিরিয়াস কথা থাকে চলো বলি। তারপর স্মৃতি আমাকে বলল, ঠিক আছে আমি তাহলে একটু পরে নক দিচ্ছি।’ এর মধ্যে স্মৃতি আমার সম্বন্ধে অনেকের কাছ থেকে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে। তারপর দুই দিন একটানা কথা হয় ফোনে। ডান হাতে ফোন ধরে রাখতে রাখতে আমার ব্যথা হয়ে গেল হা... হা... হা...। আমাদের এই প্রেম শুরু হয় ২০১৪ এর মে মাস থেকে। তারপর আমি তাকে একটি শর্ত দিই। আমি আগে তোমার কাছে আসি, তোমাকে দেখি, ছবি তুলব, তারপর যদি ভালো লাগে আমরা এক হব। তারপর আমি ওর সঙ্গে একটি ফটোসেশন করি ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’ এর একটি মিউজিক ভিডিওর থিম নিয়ে। সবাই আমাদের ছবিগুলোর প্রশংসা করেছিল। তারপর ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর ও আর আমি বিয়ে করি। আরও একটি মজার বিষয় হচ্ছে, বিয়েটা কিন্তু আমার মতে হয়নি। ঘটনা হচ্ছে ২০, ২১ নভেম্বরও তার সঙ্গে আমার কথা হয়, আমরা এখনই বিয়ে করছি না। এ দেশে আমার একটি ক্যারিয়ার আছে। এ ছাড়া আমি বাংলাদেশ ছাড়া থাকতে পারব না। তখন স্মৃতি বলল, তুমি না আসতে পারলে আমি বাংলাদেশে চলে আসব।

আমি জানি সে এই দেশে এসে বেশি দিন থাকতে পারবে না। তারপর আমি বললাম, ‘তুমি ওখানেই থাক। এক সময় আমি আসব, এক সময় তুমি আসবে। বিভিন্ন ছুটির মধ্যে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।’ সব কথা বলে ওকে রাজি করিয়ে আমি ঘুমাতে যাই। সকালবেলা আমি ঘুম থেকে উঠে ফোনে মেসেজ দেখি, ‘আমি বিমানে, বাংলাদেশে আসতেছি।’ আমি তো অবাক। আমি মনে মনে ভাবছিলাম ‘ঠিক আছে দেশে আসছে, হয়তো কিছু দিন ঘুরে-ফিরে আবার বিদেশে পাঠিয়ে দেব। কিন্তু তা আর হলো না। যখন স্মৃতি আমাকে বলল, ‘চলো বিয়ে করি।’ তখন আর না করতে পারলাম না। অনেক ভালোবাসার গল্পের পর আমরা একটু কাজের কথায় ফিরতে চাই। এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্মৃতির অভিনয় নিয়ে জানতে চাই অভিনয় জীবনে হঠাৎ এই বিরতি কেন? একটু চুপ থেকে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘হয়তো আরও ভালো করে আসব বলে এই বিরতি নিয়েছি। কিন্তু এর মধ্যে আমি ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া নিয়ে অনেক পড়াশোনা করেছি। পিএইচডি করছি। বর্তমানে লন্ডনের একটি কলেজে ফিল্মের ওপর ক্লাস নিচ্ছি। পাশাপাশি বেশ কিছু সময় আমি বিবিসির সঙ্গে কাজ করেছি।’ আমরা জানি আপনি আবার অভিনয়ে ফিরছেন? একগাল হেসে স্মৃতি উত্তর দিলেন, ‘আমাকে ফেরানো হচ্ছে হা..হা..হা..। এরই মধ্যে মোহন খানের ধারাবাহিক নাটক ‘গাঙ্গচিল’-এ একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া মোহন খানের আরও একটি ঈদের ১০ পর্বের নাটকে কাজ করব এপ্রিল মাস থেকে। এটির শুটিং হবে লন্ডনে। এ নাটকে আমি আর প্রীতম জুটি হয়ে অভিনয় করব। এ ছাড়া লন্ডনে দৃকের একটি ধারাবাহিকে কাজ করার কথা আছে। সব মিলিয়ে বেশ কিছু নাটকে কাজ শুরু করব এ বছর।’ স্মৃতির কথা শেষ করে আমরা প্রীতম আহমেদের কাছে জানতে চাই- আমরা জানি, আপনার প্রতিটি গানের সঙ্গে আপনার জীবনের এক একটি গল্প মিশে আছে। জানতে চাই, তার জনপ্রিয় ‘ঘর’ গানটির গল্প নিয়ে। তিনি বললেন, আমি আসলে ওই সব গান করি না যেখানে আমার ব্যক্তিজীবন জড়িয়ে নেয়। আমার প্রতিটা গানের সঙ্গে মিশে আছে এক একটি গল্প। আর ‘ঘর’ গানটির গল্প হচ্ছে, আমরা একবার এক নৌবিহারে গিয়েছিলাম। আমাদের লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে মেঘনা নদী ঘুরে আবার সদরঘাটে যখন ফিরল সবাই ব্যস্ত নিজেদের পরিবার নিয়ে বাসায় যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমার তখন মনে হয়েছিল, আমি এখন কোথায় ফিরব। আমি তো ঘরে না ফিরলেও হয়। সেখান থেকেই এ গানটি তৈরি হয়।’ গুমোট পরিবেশ ঠিক করতে একটু হেসেই আবার প্রীতম আহমেদকে প্রশ্ন, এখন ঘরে ফিরতে ইচ্ছে করে? তিনি বলেন, ‘ঘরে ফিরব বলেই তো বিয়ে করলাম হা... হা... হা...।’ এরই মধ্যে আমরা জেনে গিয়েছিলাম প্রীতম আহমেদের একটি গান নিয়ে তৈরি হতে যাচ্ছে একটি চলচ্চিত্র। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গানটির নাম ‘তুমি এমন কেন?’ এটি পরিচালনা করছেন ফরহাদ আহমেদ। মার্চে শুটিং শুরু হওয়ার কথা। এই ছবিতে আমার নিজের অভিনয় করার কথা আছে।’ গল্প আর আড্ডায় যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তখন দিনের শেষ চায়ে চুমুক দিয়ে শেষ করি আমাদের গল্প।

সর্বশেষ খবর