১৭ অক্টোবর, ২০১৫ ১২:১০

বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার নিলেন ফজলে হাসান আবেদ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার নিলেন ফজলে হাসান আবেদ

কৃষিক্ষেত্রের নোবেল প্রাইজ হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ বা বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার গ্রহণ করেছেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়ায় আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ফজলে হাসান আবেদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তৃতীয় জন রুয়ান। জুলাই মাসেই এ পুরস্কারের জন্য আবেদের নাম ঘোষণা করেছিল ফাউন্ডেশন। ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, বণ্টন ও বিশ্বের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষের ক্ষুধা দূরীকরণের 'অনন্য অবদানের জন্য' ফজলে হাসান আবেদকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রাক্কালে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আইওয়ার গভর্নর টেরি ব্র্যানস্টাডের সভাপতিত্বে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিমন্ত্রী টম ভিলসেক, আইওয়া সিনেটের প্রেসিডেন্ট প্যাম ইয়োকোম, আইওয়া হাউসের স্পিকার লিন্ডা আপমায়ার, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজের প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর কেনেথ কুইন ও মালাওয়ি প্রজাতন্ত্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জয়েস বান্ডা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রথমে স্যার ফজলে হাসান আবেদকে দেওয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। পরে পুরস্কার তুলে দেওয়ার জন্য নাম ঘোষণা করা হলে অনুষ্ঠান কক্ষে উপস্থিত প্রায় পাঁচশ অতিথি দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। এ সময় ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট কেনেথ কুইন বলেন, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা যখন নয়শ কোটি ছাড়িয়ে যাবে, তখন ক্ষুধাপীড়িত মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই হবে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই স্যার ফজলে হাসান আবেদ ও তার প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক নারী শিক্ষার বিস্তার, নারীর ক্ষমতায়ন ও পুরো প্রজন্মকে দারিদ্র্যমুক্ত করার একটি অসাধারণ মডেল উদ্ভাবন করেছেন। এই অনন্য কীর্তির জন্য এ বছর তিনিই এ পুরস্কারের যোগ্য ব্যক্তি। পুরস্কার গ্রহণের পর দেওয়া বক্তব্যে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে স্যার আবেদ বলেন, এ পুরস্কার শুধু আমার নয়। এটি ব্র্যাকের সেসব কর্র্মীর, যারা ৪৩ বছর ধরে নিরলসভাবে বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের এই সংগ্রামের প্রকৃত নায়ক সেই দরিদ্ররাই, অবশ্য সুস্পষ্টভাবে বললে প্রতিদিন দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা নারীরাই মূল নায়ক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গিয়ে আমরা শিখেছি, দেশ ও সংস্কৃতির পার্থক্য হতে পারে কিন্তু দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের বাস্তবতা, সংগ্রাম, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন সবসময় একই ধরনের। এ কারণে দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে আমরা হাজারের হিসেবে চিন্তা না করে লাখের হিসেবে চিন্তা করেছি। স্যার আবেদ বলেন, আগামী দশকে অবশ্যই দারিদ্র্য দূরীকরণের উপায়গুলো সেসব দরিদ্র মানুষের হাতে তুলে দিতে হবে। যদি তারা নিজেরাই তাদের পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে পারে তাহলে আর বিশ্বে দরিদ্রতা থাকবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। এ পুরস্কার পাওয়া সম্পর্কে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, আমি কতটা সম্মানিত বোধ করছি তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। মানুষের জন্য খাদ্য সহজলভ্য করতে এবং এর মান উন্নয়নে যারা কাজ করছেন, তাদের সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয়। ১৯৮৬ সালে নোবেলজয়ী নরম্যান বর্লুগ 'বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার' প্রবর্তন করেন। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে পুরস্কার ঘোষণার বিজ্ঞপ্তিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরকে জানানো হয়েছিল, বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং তাদের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিশ্বের সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ ব্র্যাকের সেবার আওতাভুক্ত। এশিয়া, আফ্রিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১১টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ব্র্যাক। এ সংস্থার কাজ অন্তত ১৫ কোটি মানুষের দারিদ্র্য দূর করতে সহায়ক হয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর