২৮ অক্টোবর, ২০১৫ ১০:২২
পর্যবেক্ষণ

কূটনীতিকদের নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা

মে. জে. মো. আব্দুর রশীদ (অব.)

কূটনীতিকদের নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা

ডামাডোল পিটিয়ে নিরাপত্তার শঙ্কার ঝড় তুলে সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে পশ্চিমা বিশ্বের লাফঝাঁপ মূলত কেন্দ্রীভূত ছিল আইএস জঙ্গিদের পশ্চিমা স্বার্থে হামলাকে ঘিরে। পরপর দুজন নিরীহ বিদেশি নাগরিকের হত্যা থেকে সংশয় সত্যি হলো বিবেচনায় পশ্চিমা দেশের নতুন করে জারি করা ভ্রমণ সতর্কতা বাংলাদেশের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকে কিছু মাত্রায় হলেও ক্ষুণ করেছে। কূটনীতিকসহ বিদেশিদের নিরাপত্তার মাত্রা তীব্র করাতে স্বস্তি ফিরে এলেও পশ্চিমা বিশ্বের চারটি দেশের শঙ্কা কাটছে না কিছুতেই। বাংলাদেশের জঙ্গিদের দেশজ চরিত্র, সাংগঠনিক ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সংশ্লিষ্টহীনতার বিষয়টি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেশের অজানা নয়। জঙ্গির বিশ্বায়ন ঠেকাতে অনেক দেশের গোয়েন্দাদের সতর্ক নজর রয়েছে বাংলাদেশের জঙ্গিদের ওপর। আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্ক বিস্তারের ক্ষেত্রে বিদেশি গোয়েন্দারা আরও বেশি সচেতন।

ভ্রমণ সতর্কতা জারি ও স্ট্যাটাস পরিবর্তন সচরাচর হতেই থাকে যা দেশের মানুষ ঘুণাক্ষরে জানতেও পারে না। তদুপরি রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ার সফরে বিশেষ নিরাপত্তার চাদর থাকে বলে ছোটখাটো ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া হয় না। ভারতে একই ভ্রমণ সতর্কতার মুখে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার আয়োজন হয়েছে নির্বিঘেœ। দিপক্ষীয় সফর দুই দেশের সম্পর্কের আন্তরিক দিককেই নির্দেশ করে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সফর বন্ধের সিদ্ধান্ত যতই নিরাপত্তার অজুহাতে করা হোক তা বন্ধু দেশের কাক্সিক্ষত আচরণের মধ্যে পড়ে না। জঙ্গি হুমকির হঠাৎ করে বেড়ে ওঠা থেকে নিরাপত্তার ভীতি ও খেলা বাতিল কিছুটা পাতানো খেলার অবয়ব নেওয়াই তথ্যের বিশ্বস্ততা নিয়ে সবাই সন্দিহান। জাতীয় স্বার্থে তথ্য বিনির্মাণে পশ্চিমা গোয়েন্দাদের পারদর্শিতা সাদ্দাম উৎখাতে দেখা গেছে তবে সত্যতার স্থায়িত্ব ছিল নাতিদীর্ঘ।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে অতীতে বাংলাদেশে অনেক সহিংসতা হয়েছে, জামায়াতি সন্ত্রাস অনেক নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। প্রতিবারের ঘটনাপ্রবাহের চরিত্র ভিন্ন ছিল। এবারে ফাঁসিকাষ্ঠে অপেক্ষমাণ জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির দুই শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। সন্ত্রাসের চরিত্র ও মাত্রা নিয়ে দেশের মানুষ চিন্তিত থাকলেও বিদেশিদের জড়িয়ে ফেলা হবে এমন কেউ ভাবেনি। ভ্রমণ সতর্কতা জারি, নিরাপত্তার অজুহাতে ক্রিকেট অস্ট্রলিয়ার সফর বাতিল, দুই বিদেশি হত্যা ও আইএস-এর অস্তিত্ব আবিষ্কার, খ্রিস্টীয় যাজকের ওপর হামলা, পীর খিজির খানকে হত্যা, দায়িত্বরত পুলিশকে ছুরি মেরে খুন, সবই যেন এক কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা ঘটনা। অপশক্তির পূর্ব পরিকল্পিত নকশার অংশ হিসেবেই ভাবছেন। বিদেশি বন্ধুদের অপশক্তির ভিতরে দেখতে চায় না দেশের মানুষ। মুসলিমপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র বানানোর অপচেষ্টা অনেক আগের। জঙ্গিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সম্পৃক্ততা নতুন নয়। ভারতকে খোঁচাতে ভারতের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে ভূ-রাজনীতির অতীত ধারাকে আঁকড়ে ধরতে অস্থিতিশীল বাংলাদেশ বিশ্বের কোনো কোনো শক্তির কাছে বেশি কাক্সিক্ষত। বাংলাদেশ অনেক প্রত্যয় নিয়ে জঙ্গিবাদ বিস্তারকারীদের থাবার মুখে জঙ্গিবিরোধী সক্ষমতাকে ধরে রাখতে পেরেছে এবং স্থিতিশীলতা রক্ষা করে চলেছে নিঃসন্দেহে। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে ইসলামি উগ্রবাদের উপস্থিতি অস্বীকার করা যায় না আদর্শিকভাবে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের অনুগামীও রয়েছে। সেই আলোকে পশ্চিমা অমুসলিম দেশগুলোও ইসলামি উগ্রবাদ মুক্ত থাকতে পারেনি। পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই ছোট-বড় জঙ্গি হামলা হয়েছে, ফলে জঙ্গি ঝুঁকিমুক্ত দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তুলনামূলকভাবে জঙ্গি হামলার সংখ্যা ও নিহতের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে এখনো নিঃসন্দেহে নিরাপদ। বাংলাদেশে ইসলামি জঙ্গিবাদের নামে রাজনৈতিক অপশক্তির পরিকল্পিত সন্ত্রাস এবং পোষা জঙ্গির ঝুঁকি বেশি।

বাংলাদেশি মুসলমানদের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র অনেক পুরনো। সব ধর্মের শান্তিপূর্ণ ও পাশাপাশি সহাবস্থান থেকে জম্ন নেওয়া সম্প্রীতি দেশের সামাজিক বন্ধনকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছে অনেকদিন দিন থেকেই। দ্বিজাতিতত্ত¡কে ভিত্তি করে ১৯৪৭ সালে সৃৃষ্ট পাকিস্তানের পশ্চিমাংশীয় শাসকদের ধর্মীয় বিভাজন দিয়ে বাঙালি বশীকরণ নীতির কফিনে শেষ পেরেক মেরে জম্ন নেয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাংলার মাটি থেকে গজানো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশে চর্চিত শান্তির ইসলামের সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের অসহিষ্ণু ও সহিংস ইসলামের পার্থক্য ক্রমেই সুস্পষ্ট হতে থাকে। ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাণান্তকর চেষ্টা সত্তে¡ও বাঙালিকে ধর্মান্ধতা দিয়ে বশীকরণ করার ব্যর্থতা থেকে নতুন নতুন কৌশল রচিত হতে থাকে। তৈরি হয় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্ম নিয়ে সমাজ, ভিন্নধর্মীদের প্রতি অসহিষ্ণুতা, অনাদিকাল থেকে গড়ে ওঠা সভ্যতার অসাম্প্রদায়িক সামাজিক প্রথা ও রীতির ধর্মীয়করণ। বহুধর্মীয় সহিষ্ণু সমাজের সম্প্রীতি ভাঙতে শুরুতে ব্যবহার করা হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার কৌশল। ভিন্নধর্মীদের দেশত্যাগে বাধ্য করে একধর্মীয় রাষ্ট্র, বিজাতীয় ভাষা ও সংস্কৃতিকে স্থাপন করে নতুন জাতীয় সংহতি তৈরিতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসাম্প্রদায়িকতা ও শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থার রাজনীতি থেকে উত্থিত বাঙালি জাতীয়তাবাদের কাছে ধর্ম ও রাজনীতি সুমিশ্রিত পশ্চিম পাকিস্তানি টনিক অকার্যকর হয়ে পড়ায় সর্ব শেষে শক্তি ও হিংসা দিয়ে আনুগত্যে বাধ্য করার কৌশল নিয়ে মাঠে নামে। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজনীতির জায়গা হারানো শক্তিকে তৎপর দেখা গেছে ধর্ম দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের নতুন বলয় তৈরিতে। ’৭৫ পরবর্তী রাজনীতিতে সেই পুরনো দেশি ও বিদেশি শক্তির সখ্য বার বার দৃষ্টি কেড়েছে। ধর্মীয় রাজনীতির ভিত্তির দুর্বলতা ঠেকাতে ধর্মকে সশস্ত্র করে দানবীয় শক্তিকে শেষ সম্বল হিসেবে পাওয়ার ইচ্ছা থেকে বাংলাদেশে উগ্র ইসলামি মতাদর্শ নিয়ে জঙ্গিদল গঠিত হয়। হরকাতুল জিহাদ থেকে শুরু করে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম, হিজবুত তাওহিদ ইত্যাদি নামে একই উদ্দেশ্যে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন নামে জঙ্গিদল মাঠে আসে। ব্যক্তি, সমাজ ও রাজনীতি ধর্মান্ধকরণের পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক হিসেবেই রয়েই গেছে জামায়াতে ইসলামী ও তার মিত্ররা। বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা থেকে অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে সরিয়ে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পুনস্থাপনের প্রক্রিয়া থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের জম্ন। গৃহজাত জঙ্গিত্বকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করে আসল চেহারা লুকিয়ে সুরক্ষার বেড়া তৈরির চেষ্টা বলে মনে হয়। 

পশ্চিমা স্বার্থের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের আঘাতের আশঙ্কায় ঘুম হারাম হওয়া ঢাকার কূটনীতিকদের অলিক তথ্যের সত্যতা প্রমাণের চেষ্টা সুস্পষ্ট হয়ে পড়ায় বিশ্বের অনেক দেশ সন্তর্পণে পিছুটান দিয়েছে। পরাশক্তিরা অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে ইসলামি জঙ্গিবাদকে সস্তা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে তা আরও পরিষ্কার হয়ে গেছে জঙ্গিবাদবিরোধী যুদ্ধে ইঙ্গ মার্কিন আচরণের বৈচিত্র্য ও অনেক ক্ষেত্রে বৈপরীত্য থেকে। সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষের প্রাণনাশ, ভূমধ্য সাগরে সলিল সমাধি, বাস্তুচ্যুতি, নারী-শিশুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের মূল নায়ক আবু বকর আল বাগদাদি ও তার ইসলামিক স্টেট নামের দুঃসহ খিলাফতকে যুদ্ধের নামে সুরক্ষা দেওয়ার সুনিপুণ কৌশল উলঙ্গ করে দিয়েছে রাশিয়ার সামরিক হস্তক্ষেপ। মার্কিন জোটের বিমান হামলার নিশানা ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ও জেনারেলদের ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে এক হয়ে যুদ্ধের মাঠে দেখে বিস্মিত হয়েছে পৃৃথিবী। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আন্তর্জাতিক খেলাকে নিদর্শন ধরলে ইসলামিক স্টেটের পশ্চিমা স্বার্থবিরোধী লক্ষ্যবস্তু লোক দেখানো ও চোখ ধাঁধানো মাত্র। মানবাধিকার নিয়ে সোচ্চার পশ্চিমাদেশের বহুমুখী আচরণ সিরিয়ার মানবাধিকার রক্ষার চেয়ে লঙ্ঘনের ঘটনা বেশি ঘটিয়েছে। জঙ্গিবাদ শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনই করে জেনেও মানবাধিকার রক্ষার নামে জঙ্গিবাদকে সুরক্ষা দেওয়ার অনেক নিদর্শন বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি মতাদর্শীয় নেটওয়ার্কের  য়ুকেন্দ্র হিসেবে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের সুপরিচিতি রয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্তি পাওয়া দেশগুলোর সঙ্গে লন্ডনের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং দেশীয় রক্ষণশীলদের সঙ্গে গড়ে উঠেছে আÍন্তিক সম্পর্ক। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সত্যিকার ইসলামি আলেম ওলামাদের লন্ডনে দেখা যায় ইসলামের স্বর্গীয় বাণী নিয়ে মানবকুলকে শান্তি ও সম্প্রীতির দিকে আকর্ষিত করতে, আবার উল্টো দিকে পাওয়া যায় জঙ্গি ইসলামের প্রচারকদের বিশাল সমাবেশ। ধর্ম প্রচারের ছাতার নিচে চলে জিহাদি মতাদর্শ দিয়ে হিংসা ছড়িয়ে মানুষকে দিয়ে মানুষ কতলের রাজনীতি। সেবাদানের নামে অনেক দাতব্য সংগঠনের হেড কোয়ার্টার গড়ে উঠেছে সেখানে। দাতব্যের নামে সংগৃহীত হয় অগুনতি অর্থ যা সংগোপনে ব্যবহার হয় জঙ্গি প্রসার অথবা জিহাদি মতাদর্শ ছড়াতে। সিরিয়াতে যোগ দেওয়া বাঙালি যোদ্ধারা ব্রিটিশ নাগরিক এবং যুক্তরাজ্যে তাদের মগজ ধোলাই সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশে জঙ্গি বিস্তারে লন্ডনিদের অবদান চোখে পড়ার মতো। জঙ্গিবাদের ঝুঁকি কমাতে দেশভিত্তিক উৎকণ্ঠার চেয়ে বিশ্বভিত্তিক কৌশলের কার্যকারিতা নিয়ে ভাবলে সার্থকতার কাছে যাওয়া যাবে এবং নিরীহ মানুষ হত্যা বন্ধ হবে। অস্থিতিশীল রাষ্ট্র জঙ্গি উৎপাদনের সুতিকাগার ও বেড়ে ওঠার কারখানা। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার কর্মযজ্ঞ জঙ্গিবাদ সহায়ক বিবেচনায় অঙ্কুরেই বিনাশ করা উচিত।

বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশিদের স্বাভাবিক আচরণ থেকে নিরাপত্তা শঙ্কার উপস্থিতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। অনেক দেশ অহেতুক নিরাপত্তার শঙ্কা সৃষ্টিকে মনে করছেন অমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নিরাপত্তার শঙ্কা তত্ত¡ থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টিতে বন্ধুরাষ্ট্রের সহায়ক ভূমিকা কাম্য। বিদেশি হত্যা থেকে উৎকণ্ঠিত কূটনীতিকরা এখন জঙ্গিবাদের চেয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন জানতে তদন্তে কাদের সংশ্লিষ্টতা ভেসে উঠছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে দুই বিদেশি হত্যার পেছনে কাজ করেছে সুপরিকল্পিত অপরাজনীতি। কূটনীতিকদের নিরাপত্তা শঙ্কার রাজনৈতিক অপব্যবহার নিঃসন্দেহে তাদের বিব্রত করে তুলবে। জঙ্গি হামলার বদলে বিদেশিরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তপনার শিকারে পরিণত হলে বিশ্বমানের গোয়েন্দা সতর্কতার বিশ্বস্ততা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে। যদিও ইঙ্গ-মার্কিন গোয়েন্দারা তথ্য বিনির্মাণে বেশ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন সাদ্দাম উৎখাতে জনগণকে বোকা বানাতে। হামলার আশঙ্কার আহরিত তথ্য ঈদের ছুটিকালীন কফি টেবিল থেকে উৎসরিত হলে পেশাগত গোয়েন্দারা দক্ষতার প্রশ্নে স্বস্তিতে থাকবেন।

বিদেশি হত্যার তদন্ত যতই এগুচ্ছে রাজনৈতিক উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি এখন বেশ স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। বিদেশি হত্যা বাংলাদেশে পরাজিত শক্তির অনুশীলিত অপরাজনীতির ও ষড়যন্ত্রের ফসল হিসেবে প্রমাণিত হলে দেশের রাজনৈতিক প্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাবে ও বিদেশি বন্ধুদের কৌশলে দিক পরিবর্তনের সূচনা করবে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মোকাবিলায় অপরাজনীতি ও অপকৌশলের আশ্রয় অবধারিত ভুল চাল। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করতে হবে, উগ্রবাদী মতাদর্শকে রুখতে হবে শান্তির মতাদর্শ দিয়ে। ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ঝুঁকি অনেক বেশি, কারণ বিশ্বে খেলোয়াড়ি দেশের সংখ্যা বাড়ছে এবং মাঝারি শক্তিধরদের কৌশলী পদক্ষেপ শক্তির রাজনৈতিক ব্যবহারে নতুন ভারসাম্য জোগাচ্ছে।

লেখক : স্ট্রাটেজি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক। ইন্সটিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিস (আই ক্ল্যডস) এর নির্বাহী পরিচালক।


বিডি-প্রতিদিন/ ২৮ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর