২১ নভেম্বর, ২০১৫ ১০:১৭

পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের মতো বড় কাজ কেয়ামত পর্যন্ত চলতে পারে না

সা ক্ষা ৎ কা র

পূর্বাচল, ঝিলমিল ও উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের মতো বড় কাজ কেয়ামত পর্যন্ত চলতে পারে না

সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, রাজধানী ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ভালো সুয়্যারেজ সিস্টেম। প্রয়োজন ট্যানারি শিল্পকে দ্রুত সরিয়ে নেওয়া। একই সঙ্গে পুরান ঢাকার যেসব নদী, নালা, খাল ইতিমধ্যে দখল হয়েছে সেগুলো উদ্ধার করা। আর পুরান ঢাকার মানুষ চাইলে পুরনো ঐতিহ্য রক্ষা করে সেখানে আধুনিকতার ছোঁয়া দেওয়া যাবে। মন্ত্রী বলেছেন পূর্বাচল নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা। বলেছেন, পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের মতো বৃহৎ কাজ কেয়ামত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত চলতে পারে না। এগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। সব সুযোগ-সুবিধা রেখে পূর্বাচলকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বলেছেন, রাজধানী ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে পার্কিংয়ের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল, রেস্তোরাঁ, গেস্টহাউস উচ্ছেদ করা হবে। তাহলে নগরীর অনেক এলাকায় যানজট কমে যাবে। বুধবার মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে বসে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন, ঢাকা ঘিরে ৩৫ বছর মেয়াদি ড্যাপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল।

প্রশ্ন : রাজধানী ঢাকাকে বলা হচ্ছে বসবাসের অযোগ্য শহর। এটিকে কীভাবে আরও আধুনিক ও বসবাসের যোগ্য করে তোলা যায় সে বিষয়ে আপনার মন্ত্রণালয়ের কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। বিশেষ করে পুরান ঢাকাকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে কি না।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন : রাজধানী ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য বলে ইতিমধ্যে সবাই বলছে। সবাই তা-ই জানে। প্রথমত, রাজধানী ঢাকায় কোনো সুয়্যারেজ সিস্টেম নেই। অল সুয়্যারেজ ইজ গোয়িং টু স্টর্ম ওয়াটার। যেগুলো যাচ্ছে, এর সবই নদী, নালা ও খালে যাচ্ছে। পাগলায় একটি সুয়্যারেজ সিস্টেম প্লান্ট হয়েছে। কিন্তু সেখানে স্যুয়ারেজ সিস্টেম লাইন খুব বেশি যায়নি। তাহলে কী ট্রিটমেন্ট হচ্ছে সেখানে? দাসেরকান্দিতে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা দিয়ে চীনারা একটা প্লান্ট করেছে। কিন্তু সেখানেও একটা স্যুয়ারেজ সিস্টেম লাইন যায়নি। সেখানে স্যুয়ারেজ লাইন যেতে হবে। তাহলে সিস্টেম কাজ করবে। একই সঙ্গে ধানমন্ডি থেকে ট্যানারি উচ্ছেদের যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, সেটি যদি দ্রুত কার্যকর করা যায়, তাহলে ঢাকা শহরে থাকার একটি পরিবেশ হবে। আরেকটি বিষয় হলো, আমাদের জলাধারা আইন আছে। কিন্তু এ জলাধারা আইন কেউ মানছে না। ঢাকা শহরের যেখানে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট আছে, পুলিশ, সেনাবাহিনী আছে, সবাই আছে, কিন্তু বিত্তশালীরা জলাশয় ভরাট করে সেখানে আবাসিক এলাকা করছে। এমনকি বুড়িগঙ্গা নদী থেকে যেটি গিয়ে আদি বুড়িগঙ্গার সঙ্গে মিশে তুরাগ নদে পড়েছে, সেটিও ভরাট হয়ে গেছে। সেখানে একটি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে। একটি আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। মসজিদ ও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্ন, ঢাকা ঘিরে সার্কুলার রিভার ক্রুজিং করা, সেটি করতে গেলে যে বা যারা নদী ও খাল ভরাট করেছে, সেগুলো উদ্ধার করতে হবে। ভরাটের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। আমি সোমবার (১৬ নভেম্বর) উত্তরায় সারা দিন অফিস করলাম। সেখান থেকে বেড়িবাঁধ দিয়ে ফেরার পথে দেখলাম, সেখানে জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। একসময় সেখানে বিস্তীর্ণ জলাশয় ছিল। কিন্তু এখন মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে ৩০ থেকে ৫০ ফুট গভীর জলাশয় ভরাট করছে। সেই ভরাটের বালি তুরাগ নদেও পড়ছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে তো পরিবেশবান্ধব শহর হবে না। আমি মনে করি, যারা প্রাইভেট সেক্টরে আবাসন প্রকল্প করছেন, তারাও আবাসনের যেসব নীতিমালা আছে, অর্থাৎ লেক, খালি জায়গা, খেলার মাঠ, স্কুল, হাসপাতালসহ সবকিছু রেখে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলেন, তাহলে পরিবেশবান্ধব একটি শহর হবে। আর পুরান ঢাকাকে নতুনভাবে গড়ে তোলা যায়। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার বসবাসকারী মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা যদি এগিয়ে আসেন তাহলে রাজউক পুরান ঢাকাকে বাসযোগ্য করার জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন ধরুন, একটি এলাকা ধরলাম। সে এলাকায় এখন একটি গাড়ি যায়, দুটি যেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে আমরা রাস্তাঘাট প্রশস্ত করে দিলাম। এ জন্য একদিকে তো ভাঙতে হবে। এ জন্য জায়গা ছাড়তে হবে। তাহলে ড্রেনেজ সিস্টেমও উন্নত করলাম। জায়গা ছাড়লে যেখানে দোতলা আছে সেখানে আমরা হাইরাইজ বিল্ডিং করে দিলাম। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার বাসিন্দারা যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা পুরান ঢাকার যে ঐতিহ্য আছে, সেটি রক্ষা করে সেখানে একটি মডার্ন ছোঁয়াও দিলাম।

প্রশ্ন : রাজধানী ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলো, বিশেষ করে ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর মতো এলাকা পুরোপুরি বাণিজ্যিক রূপ পেয়েছে। আবাসিক এলাকার পার্কিংগুলোতে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এটি বন্ধে অর্থাৎ আবাসিক এলাকাগুলোকে আবাসিকের রূপ দিতে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নেবেন?

ইঞ্জি. মোশাররফ : এ ব্যাপারে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা কাজ করছি। ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকাগুলোতে যারা আমাদের কাছ থেকে নকশা অনুমোদন নিয়েছে, নিচে কার পার্কিং ও ওপরে বাসা করার জন্য, সেসব নকশা অনুসরণ না করে কার পার্কিংগুলোকে হয় গুদাম করেছে, নয় তো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলেছে। আর গাড়িগুলোকে রাস্তায় রাখছে। ইতিমধ্যে এগুলো উদ্ধারের জন্য আমরা কাজ করছি। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে আমরা গুলশান, বনানী, উত্তরাসহ আমাদের যেসব এলাকা আছে, সেসব আবাসিক এলাকায় যারা বাণিজ্যিক হোটেল, রেস্তোরাঁ, গেস্টহাউস করেছেন, এগুলো আমরা উদ্ধার করব। যেমন ধরুন আবাসিক এলাকা গুলশান, এটি কিন্তু প্রাইম এলাকা। দেখা যায়, সেখানে গাড়ির শো-রুম আছে। একটি আবাসিক এলাকার ভিতর চতুর্দিকে আবাসিক অথচ মাঝখানে একটা আটতলা বাড়িতে দেখা যায়, একটা রেস্তোরাঁ করেছে। এটি হয় না। পৃথিবীর কোথাও এ রকম নেই। আমরা এটি অবশ্যই বন্ধ করব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন। আমরা ধীরে ধীরে এ কাজগুলো ধরছি। আমরা এগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেব।

প্রশ্ন : এ রকম তো সব সময় বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

ইঞ্জি. মোশাররফ : আমরা এটি শুরু করেছি। আগামী রবিবার (২২ নভেম্বর) আমরা ঢাকার দুই সিটি মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করব। সেখানে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডাকছি। কারণ এসব হোটেল, গেস্টহাউস করতে গেলে হেভি লাইন দিতে হয়। হেভি লাইন তো আমি দিচ্ছি না। এটি দিচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ট্রেড লাইসেন্স দিতে হয়। সেটি কি আমি দিচ্ছি? না, সেটি দিচ্ছে সিটি করপোরেশন। আবার ওখান থেকে যে এনবিআর ট্যাক্স নিচ্ছে, সেটিও তো গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে দিচ্ছে না। তারা আবাসিক এলাকায় হোটেল করছে, আবাসিক এলাকায় একটি রেস্তোরাঁ করছে, আবাসিক এলাকায় গেস্টহাউস করছে-এনবিআর সেখানে কেন লাইসেন্স দিচ্ছে? অল আর রেসপনসিবল ফর অল দিস থিংগ্স।

প্রশ্ন : যানজট নিরসনে আপনাদের কোনো পদক্ষেপ আছে কি না?

ইঞ্জি. মোশাররফ : আমরা যদি এগুলো উচ্ছেদ করে ফেলি, তাহলে যানজট অর্ধেক ‘নাই’ হয়ে যাবে। যানজট কেন হয়। আমি যদি গুলশানের মতো আবাসিক এলাকার ভিতর কার পার্কিংয়ে গাড়ির একটা শো-রুম করি, তাহলে গাড়ি থাকবে কোথায়। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় থাকবে। তাহলে তো যানজট হবেই। একটা উদাহরণ দিই, যেমন গুলশান পিংক সিটি মেইন রোডের ওপর। তারা প্রথমে দুটো বেজমেন্টসহ ছয়তলা ভবনের অনুমোদন নিয়েছে। বেজমেন্ট কেন নিয়েছে? পার্কিংয়ের জন্য। পরে তারা আরও দুই তলার অনুমোদন নেয়। মোট আটতলা করবে। কিন্তু তারা একটি বেজমেন্টে দোকান দিয়েছে, আরেকটিতে কার পার্র্কিং করেছে। এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। আমরা এটি উচ্ছেদ করছি। তারা এক দিনের সময় নিয়েছে কোর্ট থেকে। আবার তারা আটতলার পারমিশন নিয়ে নয়তলা করেছে। এটিও অবৈধ। এই নবম তলা আমরা ভেঙে দেব। নইলে তাকে ডাবল চার্জ দিয়ে বৈধ করতে হবে। আরেকটি উদাহরণ দিই। এই যে আমারি হোটেল। এটি চলছে। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তারা অ্যাপার্টমেন্টের জন্য নিয়েছিল। কিন্তু তারা অবৈধভাবে সেখানে হোটেল করেছে। তাদের পারমিশন দিয়েছে এনবিআর, বিদ্যুৎ সবাই। লেইক শোর হোটেল, সিক্স সিজন হোটেল-এগুলো অবৈধ। কিন্তু তারা রাজউককে কোনো রকম কনভারশন ফি দেয়নি। এখন যদি তারা এগুলো চালাতে চায়, তাহলে রাজউককে ডাবল কনভারশন ফি দিতে হবে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে যেসব গেস্টহাউস করা হয়েছে, সেগুলো সব বন্ধ করে দেওয়া হবে। গুলশান, বনানীতে অনেকগুলো স্পা করা হয়েছে। এগুলোর অনুমতি কে দিয়েছে। কার কাছ থেকে তারা অনুমতি নিয়েছে। এগুলোও বন্ধ করা হবে।

প্রশ্ন : রাজধানীর কয়েক হাজার ভবন ভ‚মিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে আছে বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ভবনের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হবে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : যদি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন থাকে অবশ্যই সেগুলো ভেঙে ফেলা উচিত। আমার জানামতে, রাজধানীতে রাজউক যেসব ভবনের অনুমতি দিয়েছে, সেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখে ব্যবস্থা নেব।

প্রশ্ন : আপনারা তো পূর্বাচলকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন। কবে নাগাদ পূর্বাচল একটি পূর্ণাঙ্গ নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে বলে আপনি মনে করছেন? আর এখানে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকবে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : উই হ্যাভ গট থ্রি প্রজেক্ট অ্যান্ড উই হ্যাভ লস মেনি ইয়ারস, মেনি টাইমস। এই পূর্বাচলের বয়স ২০-২২ বছর হয়ে গেছে। এসব প্রকল্প কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলতে পারে না। কেয়ামত পর্যন্ত এটি চলবে, রাজউক চালাবে, আমি মন্ত্রী থাকতে এটি অ্যালাও করতে পারি না। আমার মেসেজ পরিষ্কার। শুধু পূর্বাচল নয়, উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তা-ই, ঝিলমিল প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তা-ই। আমি আমার সব মিনিস্ট্রিকে নিয়ে সোমবার উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পে সারা দিন অফিস করেছি। সেখানে যারা এ প্রকল্পে কাজ করছে, আমি তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছি, এ প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে। আমি এটিও জানতে চেয়েছি, কবে কখন প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প উদ্বোধন করতে পারবেন। তারা আমাকে ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধনের তারিখ দিয়েছেন। ওই দিনই প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন এবং মালিকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবেন। এই সময়ের আগেই এ প্রকল্পের সব রাস্তাঘাট, লেক, সব ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হবে। এক বা দুই সপ্তাহ পর আমি এক বা দুই দিন পূর্বাচলে অফিস করব মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তাকে নিয়ে। ওই সময় আমি পূর্বাচলের সব পয়েন্ট ভিজিট করব। যারা প্রকল্পের কাজ করছে তাদের কাছ থেকে আমি কমিটমেন্ট চাইব, তারা কবে প্রকল্পের কাজ শেষ করবেন। একজন লোক ৬০ বছর বয়সে জমি পেয়েছেন, ৮০ বছর বয়সে এসে মারা যাচ্ছেন। ২০ বছরেও তিনি তার জমি বুঝে পাচ্ছেন না। সুতরাং আমি ডেডলাইন দিয়ে দেব। এভাবে চলতে পারে না। একইভাবে ঝিলমিল প্রকল্পের ক্ষেত্রেও ডেডলাইন আদায় করব। ইতিপূর্বে এ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে এ রকম পদক্ষেপ কেউ নেয়নি। আর পূর্বাচল হবে একেবারেই একটি আধুনিক শহর। এ শহরের সবকিছু হবে আন্ডারগ্রাউন্ড। আপনি শুধু দেখবেন লাইটপোস্ট। এটি হবে গ্রিন সিটি। এখানে স্যুয়ারেজ লাইন আলাদা হবে। ওয়াটার ট্রিটমেন্ট আলাদা হবে। ওয়েস্ট টু এনার্জি আলাদা হবে। সেখানে গলফ কোর্স হবে। হোটেল হবে। পূর্বাচলে একটি আইকন বিল্ডিং হবে। ১১০ তলা ওই ভবনে কনভেনশন সেন্টার, হোটেল, সিনেপ্লেক্সসহ সবকিছু থাকবে। সেখানে ৬০ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট হবে। অ্যাম্বেসির জন্য কিছু জমি রাখা হয়েছে।

প্রশ্ন : নতুন করে কোনো প্লট দেওয়ার ইচ্ছা কি আপনাদের আছে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : নতুন সিটি করার পরিকল্পনা আছে। তবে জমি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সাধারণ মানুষের জন্য উত্তরায় ১৫ হাজার, পূর্বাচলে ৬০ হাজার ও ঝিলমিলে ১১ হাজার অ্যাপার্টমেন্ট করছি। তবে নগরবাসীর আবাসন সমস্যা সমাধান করতে হলে প্লটের পরিবর্তে অ্যাপার্টমেন্টের দিকে যেতে হবে। হাইরাইজ বিল্ডিং করতে হবে। আমরা এখন প্লটের পরিবর্তে অ্যাপার্টমেন্টকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছি। আর প্লট হবে না। আমরা সহজে এবং কম মূল্যে অ্যাপার্টমেন্ট দেব। উত্তরায় আমরা চার হাজার ৮০০ টাকা স্কয়ার ফুট ফ্ল্যাট দিচ্ছি।

প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী রাজধানী ঢাকার চারপাশে চারটি স্যাটেলাইট সিটি করার কথা বলেছিলেন। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ আছে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : আমরা আস্তে আস্তে ঢাকাকে স্যাটেলাইট সিটির দিকে নিয়ে যাব। প্রাইভেট ডেভেলপাররা নতুন নতুন সিটি করছেন। তবে সে রকম হচ্ছে না। স্যাটেলাইট শহর করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা ওয়াশিংটনের মতো করতে চাইছি। যেমন ওয়াশিংটন থেকে ভার্জিনিয়া সিটির দূরত্ব প্রায় এক ঘণ্টার। লোকজন সকালে ভার্জিনিয়া থেকে ওয়াশিংটন এসে কাজ করে বিকালে আবার ফিরে যান। আমরাও সেভাবে চিন্তাভাবনা করছি, যাতে মানুষ ঢাকা শহরে না থেকে কাজ করে কাছেই একটি শহরে চলে যেতে পারেন। সে জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

প্রশ্ন : রাজউক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ নিয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের শেষ নেই। এ দুই প্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষকে যথেষ্ট ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ          অবস্থা থেকে এ দুই প্রতিষ্ঠানকে বের করে আনতে আপনার কি কোনো উদ্যোগ আছে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : অভিযোগও আছে। কাজও হচ্ছে। এটি পরিবর্তনে সময় লাগবে। এটি হচ্ছে মনমানসিকতার ব্যাপার। মনমানসিকতা পরিবর্তন না হলে কিছু হবে না। অভিযোগ থাকবে, ভোগান্তিও থাকবে। এর মধ্য দিয়েই কাজ করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি এ অবস্থার উন্নতি করার।

প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, সারা দেশে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এ বাপ্যারে অগ্রগতি কত দূর?

ইঞ্জি. মোশাররফ : এটি আমরা করেছি। আমরা ইতিমধ্যে দেশের ৬০টি উপজেলায় আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করেছি। চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ অনেক জেলায়ই এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এসব জায়গায় পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলা হচ্ছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, যাতে লোকজন শহরমুখী না হয়।

প্রশ্ন : নতুন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপের অবস্থা কী? এটি কবে নাগাদ তৈরি হবে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : হ্যাঁ, নতুন ড্যাপের কাজ চলছে। এটি হবে ৩৫ বছর মেয়াদি। বিশেষজ্ঞরা এটি নিয়ে কাজ করছেন।

প্রশ্ন : শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত যে ফ্লাইওভার করার কথা, সেটির নকশায় তো পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন নকশায় কী করা হয়েছে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : এর নকশায় একটু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটি এখন হবে বিজয়নগর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত। এর কাজ শিগগিরই শুরু হবে। আশা করছি আগামী বছরের জানুয়ারিতে কাজ শুরু করতে পারব। এটি হলে পদ্মা সেতুর সঙ্গে রাজধানীর একটি কানেকটিভিটি হয়ে যাবে। আর ঝিলমিল প্রকল্পও ডিউরেবল বা টেকসই হয়ে যাবে।

প্রশ্ন : পদ্মা সেতু ঘিরে মাওয়া ও আশপাশ এলাকায় একটি নতুন শহর করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। আসলে এ রকম কি কোনো উদ্যোগ আছে?

ইঞ্জি. মোশাররফ : আসলে পদ্মা সেতু ঘিরে এটি অটোমেটিক হয়ে যাবে। তবে আমরা যদি একটি স্থান নির্বাচন করে কিছু করি, তাহলে একটি সুন্দর শহর হবে। প্রধানমন্ত্রী যদি ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাহলে এটিকে একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। আমার মনে হয়, ওই দিকে যদি জায়গা থাকে, তাহলে সরকার সেই জমি ব্লক করে সেখানে নতুন শহর গড়ে তোলার জন্য এখনই কিছু করতে পারে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাকে ধন্যবাদ।

ইঞ্জি. মোশাররফ : বাংলাদেশ প্রতিদিনকেও ধন্যবাদ।

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২১ নভেম্বর, ২০১৫/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর