৩০ নভেম্বর, ২০১৫ ১০:৫৩

ধর্মের নামে খুন দ্বিগুণ অপরাধ

জুলকার নাইন

ধর্মের নামে খুন দ্বিগুণ অপরাধ
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন  মাসউদ বলেছেন, খুন করা একটি অপরাধ। আর যে কোনো ধরনের খুনখারাবি ইসলামে অত্যন্ত বড় অপরাধ। সেই ধর্মকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করে খুন করা আরেকটি অপরাধ। এ কারণে ধর্মের নামে খুনখারাবি দ্বিগুণ অপরাধ। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব মন্তব্য করেছেন।  
মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, ইসলাম অত্যন্ত উদার, সহিষ্ণু ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম পরমতসহিষ্ণু যে আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করে অন্যের দেব দেবীকে বা উপাস্য বস্তুকে গালিগালাজ করা বা অপমানসূচক কোনো বাক্য ব্যবহার করে সম্বোধন করতে নিষেধ করা হয়েছে। যুক্তিভিত্তিক সমালোচনা করা যেতে পারে। আল্লাহতায়ালা তো নিজের সমালোচনাও সহ্য করছেন। যারা তাকে মানছেন না, তাদেরও খাইয়ে-পরিয়ে রাখছেন। তিনি বলেন, ধর্মের নামে যারা খুনখারাবি করছেন তারা আসলে ধর্মকে মানে না। তারা আসলে ধর্মের নামে বিপদ। তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে। যারা ধর্মকে স্বীকার করে না, তাদের চেয়ে এরা মারাত্মক। তিনি বলেন, মসজিদে সেজদারত অবস্থায় মুসল্লির ওপর গুলিবর্ষণ বড় জঘন্য অপরাধ।  কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা যুদ্ধরত অবস্থাতেও ধর্মীয় ব্যক্তিদের (সন্ন্যাসী, পাদ্রি ইত্যাদি) হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। যুদ্ধরত অবস্থাতেও এটা নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে একজন ব্যক্তি যখন ইবাদতরত তখন তাকে হত্যা করাটা কত বড় অপরাধ তা সহজেই অনুমেয়। একজন জঘন্য খুনিও তো এ অবস্থায় কাউকে খুন করে না। মাওলানা মাসউদ মনে করেন, বাংলাদেশে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা গড়ে তোলার জন্য কিছু লোক তাদের অন্ধ রাজনৈতিক স্বার্থ এবং বাংলাদেশের প্রতি হিংসাবশত সাম্প্রতিক অপকর্মগুলো ঘটাচ্ছে। এর পেছনে পাকিস্তানের আইএসআইর ভূমিকা থাকার আশঙ্কা আছে। কারণ পাকিস্তানে যেসব ধরনের ঘটনা ঘটছে যেমন মসজিদে বোমা হামলা, বিদেশি হত্যা এসবই এখানে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে শিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের পারস্পরিক সহাবস্থান সম্পর্কে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ বলেন, কয়েকশ বছর ধরে এ অঞ্চলে সুন্নি ও শিয়া সম্প্রদায় পাশাপাশি অবস্থান করছে। আর বাংলাদেশে তো শিয়ার সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে হয়তো লাখের কিছু বেশি হবে শিয়াদের সংখ্যা। তারা তো সাধারণ জনগণের মধ্যে মূল সমাজের মধ্যে মিশে আছেন। কোনো বিশেষ অঞ্চলে বিচ্ছিন্ন গোত্র করে তারা কিন্তু হিংসা প্রকাশ করার মতো অবস্থানে নেই। তিনি বলেন, শিয়াদের কিছু উগ্রপন্থা, উগ্র বিশ্বাস আছে। এটাও কয়েকশ বছর ধরেই তারা করে আসছেন। বতর্মান পরিস্থিতিতে সব ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে বাংলাদেশের মুসলিমদের এখনই খুনোখুনির বিরুদ্ধে সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তিনি বলেন, যে অজগর মুখ তুলে দাঁড়িয়েছে তাকে এখনই খতম না করলে জাতির জন্য বড় বিপদ হতে পারে। আমাদের দেশে যারা ইসলামী ব্যক্তিত্ব আছেন তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে থাকেন। একজন ইমাম বা আলেম বিশেষত মানুষের জন্ম, মৃত্যু, বিয়েসহ সব সামাজিক সমাবেশে এবং সাপ্তাহিক জুমার খুতবায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখার সুযোগ পান। এসব স্থানে তারা ইসলামের প্রকৃত ব্যাখ্যা এবং ইসলাম যে শান্তি ও পরমতসহিষ্ণুতার ধর্ম তা ব্যাপকভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারেন। যারা ধর্মের নামে এসব করছেন তাদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে।  
তরুণদের মধ্যে যারা ইতিমধ্যেই উগ্র মতাদর্শের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন তাদের উদ্দেশে মাওলানা মাসউদ বলেন, যে পথ তোমরা মক্কা যাওয়ার জন্য ধরেছ, তা তো মক্কা যাচ্ছে না। এই পথ যাচ্ছে সাইবেরিয়ায়। অর্থাৎ তোমরা বেহেশতের রাস্তা ভেবে যে মত অবলম্বন করছ, তা কিন্তু দোজখের গর্তে গিয়ে পড়ছে। যারা তোমাদের বিভ্রান্ত করছে তারা বন্ধু নয়, শত্রু। এই যে প্যারিসে যে ধর্মের নামে কয়েকজনকে হত্যা করা হলো, এর মাধ্যমে কী ইসলামের কোনো উপকার হয়েছে, হয়নি। বরং কয়েকজনকে হত্যা করে পুরো ইউরোপের দেশে দেশে থাকা লাখ লাখ মুসলমানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে তাদের মৌলিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। ইউরোপের নিরপরাধ মুসলমান শিশুও এখন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। এটা করার অধিকার কোনোভাবেই সেই বিভ্রান্ত আইএস সদস্যদের নেই। এরা আসলে শয়তানের বার্তা বাহক।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর