৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১০:৩২
আ-মরি বাংলা ভাষা

২১ দিন কারা বরণ করেছি

প্রফেসর লায়লা নূর

২১ দিন কারা বরণ করেছি

১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সবার সঙ্গে আমতলায় গিয়েছিলাম শহীদ দিবস উপলক্ষে। ১৯৫২ সালের ওই দিন মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শহীদ হয়েছিল রফিক, বরকত, জব্বারসহ ছাত্র-জনতা। সে বছরও সিপাহিরা ট্রাকে করে সেখানে গিয়ে লাঠিচার্জ শুরু করে। কিছু ছেলে ধরে নিয়ে যায়। আমি ও আমার সহপাঠী হোসনেয়ারাকে ধরতে এলে আমি বলি, গায়ে হাত দেবেন না। কোথায় যেতে হবে বলুন। আমাদের আর্মির ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাগ থানায়। সেখানে সারা দিন বসিয়ে রেখে সন্ধ্যায় পাঠানো হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। কারাগারে আমাদের ২১ দিন আটকে রাখা হয়। আমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের প্রথম নারী শিক্ষক। সেখানে ১৯৫৭ সাল থেকে একটানা ৩০ বছর শিক্ষকতা করি। আমি ১৯৩৪ সালের ১ অক্টোবর কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করি। পিতা আবু নাসের মো. নুরুল্লাহ। মাতা সামছুন্নাহার মেহেদী। তিন বোন এক ভাইয়ের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। পিতা ছিলেন ভারতের বিহার রাজ্যের জামশেদপুরে অবস্থিত টাটা স্টিল কোম্পানির প্রকৌশলী। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা। কুমিল্লায় এসে আমি ১৯৪৮ সালে মেট্রিক পাস করি। ইন্টারমিডিয়েট, ডিগ্রি পাস করি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে। মাস্টার্স সম্পন্ন করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।  অন্য সব আন্দোলনের মতো ভাষা আন্দোলনেও ছাত্ররা নেতৃত্ব দিয়েছিল। এ দেশের মানুষ ছাত্রদের খুব বিশ্বাস করত। এখনকার মতো তখন ছাত্ররা হানাহানি আর অশুভ কাজে জড়িত থাকত না।  আমি বাংলা ভাষাকে উচ্চ আদালতে ব্যবহারের দাবি জানাই। যে ভাষার জন্য মানুষ রক্ত দিয়েছে সে ভাষাকে অবহেলা করা ঠিক নয়। আমার ফাঁসি হচ্ছে-অথচ আমি বিদেশি ভাষার জন্য বুঝতে পারছি না রায়ে কী লেখা হয়েছে! 


লেখক : ভাষাসৈনিক ও শিক্ষাবিদ।

অনুলিখন : মহিউদ্দিন মোল্লা


বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর