৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৪:০৫

পরিবারের প্রেরণাই সাফল্যের ভিত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

পরিবারের প্রেরণাই সাফল্যের ভিত্তি

মাহফুজ আনাম

দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেছেন, ‘আমার স্বপ্নের সঙ্গে আমার পরিবারের উদ্দীপনা জড়িয়ে আছে। আমার আব্বা আবুল মনসুর আহমদ ১৯৪৬ সালে, এখন থেকে ৭০ বছর আগে, কলকাতার একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন। নাম ছিল ‘‘ইত্তেহাদ’’। আমাদের পরিবারে সাংবাদিকতার একটা নিজস্ব সংস্কৃতি ছিল। আব্বার সাংবাদিকতাটা আমি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। আমার এক বড় ভাই  (মাহবুব আনাম) বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক হয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী হচ্ছেন ডেইলি স্টারের আনসাং হিরোইন। আমি যখন জাতিসংঘে চাকরি করি, বিউটিফুল স্যালারি, ইন্টারন্যাশনাল লিভিং, তখন ডেইলি স্টারের কথা তাকে বললাম। তিনি বললেন, ‘‘যদি এটি তোমার স্বপ্ন হয়, তাহলে তোমার সঙ্গে আমি আছি

দেশের পাঠকপ্রিয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মাহফুজ আনাম তার সাংবাদিকতা জীবনের সাফল্য ও প্রেরণার উৎস হিসেবে নিজের পারিবারিক আবহকেই তুলে ধরেন। মাহফুজ আনাম ছিলেন তুখোড় বিতার্কিক। মুক্তিযোদ্ধা হতে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। হতে চেয়েছিলেন রাজনীতিবিদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই এসে পড়লেন সাংবাদিকতায়। পাঁচ বছরের মাথায় চলে গেলেন ইউনেস্কোতে চাকরি নিয়ে। প্রথমে প্যারিসে, পরে নিউইয়র্কে। টানা ১৪ বছর পর দেশে ফিরে এস এম আলীর সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করলেন দ্য ডেইলি স্টার। সেই কাগজের ২৫ বছর পূর্তি হলো সম্প্রতি।

নিজের সাংবাদিকতার বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি যখন প্যারিসে, এস এম আলী তখন ম্যানিলাভিত্তিক প্রেস ফাউন্ডেশন অব এশিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। প্রেস ফাউন্ডেশনের অনেক ফান্ডিং ইউনেস্কো করত। ওই রকম একটা ফান্ডিংয়ের মিটিংয়ে তিনি প্যারিসে গিয়ে শুনলেন যে এখানে নতুন একটা বাঙালি ছেলে যোগ দিয়েছে—নাম মাহফুজ আনাম। তিনি খোঁজ করে আমার রুমে এলেন। ওই প্রথম এস এম আলীর সঙ্গে আমার দেখা। এরপর তো বন্ধুত্ব হলো। পরে আমি যখন ব্যাংককে, এস এম আলী তখন কুয়ালালামপুর। তিনি প্রায়ই আসতেন, নানা কাজে আমি যেতাম। তিনি পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান টাইমস, ডনে কাজ করেছেন। হি ওয়াজ দ্য ম্যানেজিং এডিটর অব ব্যাংকক পোস্ট। তাকে বললাম, ‘‘আলী ভাই, আপনি তো কয়েক বছর পর রিটায়ার করবেন। চলেন, ঢাকায় গিয়ে একটা কাগজ করি। আপনি লিডারশিপ দেন।’’ এস এম আলী তো সঙ্গে সঙ্গে রাজি, ‘‘হ্যাঁ, খুব ভালো আইডিয়া।’’ তার সঙ্গে একটা প্রজেক্ট ডকুমেন্ট তৈরি করলাম। ছিয়াশি সাল থেকে কাজ শুরু হয়ে গেল। আলী ভাই এডিটর, আমি এক্সিকিউটিভ এডিটর।’

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘১৯৮৬ সালে এস এম আলীর সঙ্গে যখন আমার ইন্টেলেকচুয়াল এক্সচেঞ্জ হচ্ছে, তখন আমি রেগুলার অবজারভার পড়তে শুরু করলাম। তখন আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে অবজারভার রিয়ালি ইজ আ ডেড পেপার অ্যান্ড উই হ্যাভ আ গুড গ্রাউন্ড। মানে একটা ওপেনিং ছিল ফর এ গুড নিউজপেপার। আর অবজারভারের যেটা সবচেয়ে বড় ভুল ছিল, ডেইলি স্টার বেরোচ্ছে, অথচ অবজারভারের গুণগত কোনো পরিবর্তন নেই। অবজারভার কোনো নোটিসই করছে না। তখন অবজারভারে যদি ডায়নামিক লিডারশিপ থাকত, ডেইলি স্টার দেখে তারা নিজেরা যদি পরিবর্তন হতো, তাহলে আমাদের হয়তো আরও কষ্ট করতে হতো। এমনিতেই এ ধরনের একটি পত্রিকাকে হারাতে ডেইলি স্টারের প্রায় সাত বছর লাগছে। বোঝা যায়, মানুষ কাগজ যেটা পছন্দ করে, সেটা আঁকড়ে ধরে থাকতে চায়। খুব সহজে কিন্তু পাঠক বদলায় না! অবজারভারের ক্ষেত্রেও দেখলাম সাত বছর লাগল।’ ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘আমরা দুজন পেশাদার সাংবাদিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কাগজ বের করব। আমরা তখন মার্কেটে খুঁজে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তাদের বের করছি। তারা আলী ভাইয়ের মতো একটা বিরাট ব্যক্তিত্বের আহ্বানেই এসেছেন। খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে আমরা ইনভেস্টর সিলেক্ট করলাম, যারা ফিন্যানশিয়ালি স্ট্রং কিন্তু সাংঘাতিক সত্। এখানে এস মাহমুদ, যিনি আমাদের প্রথম ম্যানেজিং ডিরেক্টর, তার একটা বিরাট ভূমিকা ছিল। তিনি সবাইকে জড়ো করেছেন। আমাকে তিনি ছোটবেলা থেকে চিনতেন, খুব স্নেহ করতেন। এ সময় এরশাদের পতন হলো ৬ ডিসেম্বর। আর আমাদের কাগজ বের হলো ১৪ জানুয়ারি। আমরা ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংলিশ, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন আর জার্নালিজম থেকে ফ্রেশ ৩৫ জনকে রিক্রুট করলাম। এটিই হলো ডেইলি স্টারের পরবর্তী সাকসেসের অন্যতম ভিত্তি। আই গট নিউ ব্লাড, ননপলিটিক্যাল ব্লাড, প্রফেশনাল ব্লাড, ইগার টু লার্ন। তাদের মেজরিটি অংশ এখন আমার সঙ্গে আছে।’

মাহফুজ আনাম বলেন, ‘আমি ছিলাম এক্সিকিউটিভ এডিটর, এস এম আলী ভাই এডিটর। আলী ভাই যতবার দেশের বাইরে গিয়েছেন, তিনি কিন্তু অফিশিয়ালি আমাকে অ্যাক্টিং বানিয়ে গিয়েছেন। তিরানব্বইয়ের নভেম্বরে বোর্ড অব ডিরেক্টর ফরমালি আমাকে অ্যাপয়েন্ট করল। এ সময় আমি অ্যাক্টিং এডিটর ছিলাম। তিরানব্বইয়ের নভেম্বরে আমি ডেইলি স্টারের সম্পাদকের দায়িত্ব নিলাম। আমার সঙ্গে এই নতুন গ্রুপ। আমারও কিন্তু অভিজ্ঞতা ছিল না। আমি যখন সাংবাদিকতা ছেড়ে যাই, ওনলি অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর ছিলাম, বাহাত্তর থেকে সাতাত্তর—মাত্র পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। এস এম আলীর মতো পাহাড়তুল্য ব্যক্তিত্বের জায়গায় আমার মতো অনভিজ্ঞ ইয়াং ব্যক্তি, উইথ আ টিম, যাদের অ্যাভারেজ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা এক-দুই বছরের বেশি নয়।’ মাহফুজ আনাম বলেন, ‘জনগণের মধ্যে সত্ নিউজপেপার বলে আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। পাঠকরা দেখতে পারল সত্যিকার অর্থে একটি ইনডিপেনডেন্ট মাইন্ডেড নিউজপেপার। আমরা যখন আওয়ামী লীগকে গালি দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছে দিয়েছি, প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য হলে করেছি, বিএনপিকেও দিয়েছি। এতে আমাদের ক্রেডিবিলিটি বেড়েছে। আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি যে এ কাগজটা কোনো দলেরও নয়, কোনো গোষ্ঠীরও নয়। এ কাগজটা যা করে, নিজেদের অবস্থান থেকে করে। সাধারণত জনগণের পক্ষে আসে। সো ওইটাই এথিক্যাল নিউজপেপার।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর