১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১১:২৮

মাতৃভাষার গৌরব টিকিয়ে রাখতে হবে

কামাল লোহানী

মাতৃভাষার গৌরব টিকিয়ে রাখতে হবে
বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। জীবন দিয়ে এই মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠা করতে হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমাদের ভাষাপ্রীতি বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পত্রপত্রিকায় নানা কথাবার্তা হয়। বেশ ঘটা করে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরের কথা শুনি কিন্তু দুর্ভাগ্য কেন তারা প্রাণ দিয়েছিল তা হয়তো অনেকেই জানি না। ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জোর করে আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে উর্দুকে পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল সেটাও হয়তো জানি না। দুর্ভাগ্য আমাদের। বায়ান্নোর মাতৃভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরে পরবর্তী পর্যায়ে দেশে স্বাধীনতা এসেছে। অথচ এসব বড় অর্জন নিয়ে আমরা গভীর ভালোবাসা প্রকাশ করতে পারিনি। দিনে দিনে ভাষাপ্রেম, দেশপ্রেম কমে যাচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি সবসময় উচ্চবিত্তের সঙ্গে পাল্লা দিতে চায়। তারা তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ায়। সাধারণ দরিদ্র মানুষের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে নতুন প্রজন্ম মিশ্র এক সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছে। তারা ইংরেজি, বাংলা মিশ্রিত বাক্য ব্যবহার করছে। দেশের গণমাধ্যমগুলোও একই ভূমিকা পালন করছে। বেতার, টেলিভিশনের অনুষ্ঠানে ভাষা ব্যবহারে কোনো সামঞ্জস্যবোধ নেই। আজও দেশে সর্বজনগৃহীত ভাষারীতি প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন কৃষক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী উভয়ে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে। সেটি আমাদের দেশে সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে কারও উদ্যোগ নেই। আজ ২১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হচ্ছে অথচ এ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালতের ভাষা বাংলা করা সম্ভব হয়নি। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের নাম আজও ইংরেজিতে লেখা হয়। এগুলো সরকারি উদ্যোগে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনা, তথ্যচিত্র তৈরি করে বিশ্বব্যাপী প্রচারে আমাদের দূতাবাসগুলোকে সচেষ্ট হতে হবে। কাজ করতে হবে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা নিয়েও। কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সঙ্গে যারা জড়িত গণমাধ্যমগুলোকে মাতৃভাষা অনুশীলনে আরও সচেতন হতে হবে। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা এ জন্য আমাদের গর্ব। মাইকেল, বঙ্কিম, শরত্চন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এ ভাষার যে মহান মর‌্যাদা দিয়েছেন তার গৌরব আমাদের অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে। বাংলাভাষা চর্চার সুবর্ণ সময় গেছে ব্রিটিশ আমলেই। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা-মাধ্যমে পড়ার রেওয়াজ তখন ছিল না। আজ যখন বাংলার অধিকার অপ্রতিহত, তখন কিন্তু দুর্বলতায় নুয়ে পড়ছে এই ভাষা। আমাদের বোধ হয় গোটা পরিস্থিতি আজ আর একবার নতুন করে ভাবা দরকার।  
লেখক : সাংবাদিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর