৪ অক্টোবর, ২০১৬ ১১:৩৪

'র'-কে ঢেলে সাজতে আসরে স্বয়ং মোদি

জয়ন্ত ঘোষাল

'র'-কে ঢেলে সাজতে আসরে স্বয়ং মোদি

বালুচিস্তান তাসকে ব্যবহার করে আক্রমণাত্মক পাকিস্তান নীতি গ্রহণ নিতে চেয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জানতেনই না, দেশের অন্যতম শীর্ষ গোয়েন্দা বিভাগ রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র)-এ তো বটেই, এমনকি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও বালুচিস্তান নিয়ে আলাদা কোনও ডেস্ক নেই! বিষয়টি জানার পরে একই সঙ্গে বিস্মিত এবং ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। উরি হামলার ঘটনাকে সামনে রেখে তাঁর নির্দেশে র-কে এ বার ঢেলে সাজা হচ্ছে।

সাউথ ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একজন যুগ্ম-সচিব রয়েছেন, যিনি একই সঙ্গে পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং ইরানের দায়িত্বপ্রাপ্ত। বর্তমানে এই দায়িত্বে রয়েছেন গোপাল ওয়াগলে। 'র'-এর অধীনে অবশ্য পাকিস্তান নিয়ে একটি আলাদা বিভাগ আছে। তার দায়িত্বে আছেন একজন যুগ্ম-সচিব। গোয়েন্দা-প্রধান থাকাকালীন অজিত ডোভাল প্রস্তাব দিয়েছিলেন, র-এর অধীনে শুধু পাকিস্তান ডেস্ক থাকলেই হবে না। বালুচিস্তান, পঞ্জাব প্রদেশ, পেশোয়ার, পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার— সব মিলিয়ে আরও চারটি ডেস্ক হওয়া উচিত। বাজপেয়ী জমানায় কার্গিল যুদ্ধের পরে গঠিত সুব্রহ্মণ্যম কমিটির রিপোর্টেও এই সুপারিশই করা হয়েছিল। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এ নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। প্রধানমন্ত্রী আরও জেনেছেন, র-এর যে অফিসারেরা এখন সরাসরি পাকিস্তানের বিষয়টি দেখভাল করেন, তাঁদের অধিকাংশেরই দেশটি সম্পর্কে কোনও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা প্রায় নেই!

র-এর বর্তমান প্রধান তথা সচিব রাজেন্দ্র খন্না। তিনি নিজেই মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে স্বীকার করেছেন, পাকিস্তান সম্পর্কে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা তাঁর নেই! তিনি যে ভাবে পূর্বাঞ্চলের দেশগুলির সমস্যা সম্পর্কে জানেন, সে ভাবে পশ্চিমাঞ্চলটা জানেন না! রাজেন্দ্র খন্নার অধীনে পাঁচ জন যুগ্ম-সচিবের মধ্যে এলাকা (এরিয়া) ভাগ করা রয়েছে। এরিয়া-১ পাকিস্তান, এরিয়া-২ চিন এবং দক্ষিণ এশিয়া, এরিয়া-৩ পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকা, এরিয়া-৪ অন্য সব দেশ। এরিয়া-৫-এর অধীনে ইলেক্ট্রনিক বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, পাকিস্তান ডেস্ক-এর মধ্যে বালুচিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর দেখার জন্য আলাদা একটি ডেস্ক অবিলম্বে হওয়া উচিত।

র-এর যু্গ্ম-সচিব দীপক কল এক সময় পাকিস্তানে ছিলেন। ২০০৩-এর ১২ সেপ্টেম্বর তিনি ইসলামাবাদে যান। ২০০৬-এর অগস্টে পাকিস্তান তাঁকে হাইজ্যাক করে তুলে নিয়ে যায় বলে সরকারি সূত্রের খবর। দীর্ঘ টালবাহানার পর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, ইসলামাবাদ থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি যখন দেশে ফেরেন, তখন তাঁর সারা শরীরে ছিল কালশিটের দাগ! দীপক এখন পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত। কিন্তু সেটা খাতায়-কলমেই। এই মুহূর্তে পাকিস্তান-সম্পর্কিত কর্মকাণ্ড থেকে তাঁকে দূরে রাখা হয়েছে! গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, র-এর অভ্যন্তরীণ কলহের বলি হয়েছেন দীপক। অজিত ডোভাল নিজে এক সময় গোয়েন্দা প্রধান ছিলেন। এখন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। তিনিও এই ঝামেলা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছেন বলেই সূত্রের খবর।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের বক্তব্য, ভারত যে তাদের বেশি গুরুত্ব দেয় না, সেটা বোঝাতেই একজন যুগ্ম-সচিবের অধীনে পাকিস্তানের সঙ্গে ইরান এবং আফগানিস্তানকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, বিভাগের নাম পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ্যে বলা হোক বা না হোক, বিদেশ মন্ত্রকের পাকিস্তান ডেস্কের মধ্যে এলাকা ভিত্তিক বিভাজন অবিলম্বে করা দরকার। পাশাপাশি মোদি চাইছেন, গোয়েন্দা বিভাগকেও এমন ভাবে ঢেলে সাজতে, যাতে অজিত ডোভালের মতো পাকিস্তানের মাটিতে দাপিয়ে ‘অপারেশন’ চালিয়ে আসা অফিসারদের র এবং আই বি-তে নিয়ে আসা যায়।

চোর পালানোর পরেও যদি বুদ্ধি বাড়ে, মন্দ কী!


লেখক: সম্পাদক, দিল্লি আনন্দবাজার পত্রিকা

 

বিডি-প্রতিদিন/ ০৪ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর