২৩ অক্টোবর, ২০১৬ ১১:৫৭
সুনীলের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সুনীলের শেষ লেখা

বাংলাদেশ প্রতিদিনে সুনীলের শেষ লেখা

দুই বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় কবি ও কথা সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত 'বাংলাদেশ প্রতিদিন' পরিবারের সঙ্গে তার ছিল অন্যরকম সখ্য। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২০১২ সালের ঈদ সংখ্যায় তিনি লিখেছিলেন উপন্যাস 'মনের ভেতর বাহির'। এছাড়া অন্যান্য সময়ও তার লেখা প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের শেষ লেখাটি পাঠকের জন্য দেওয়া হলো।

'হুমায়ূন আহমেদ নেই— কথাটা বিশ্বাস হচ্ছে না। বাংলাদেশ প্রতিদিনের রাসেলের কাছ থেকে প্রথম দুঃসংবাদটি শুনি। বৃহস্পতিবার রাতে ফোনের ওই প্রান্ত থেকে তার বিষণ্ন কণ্ঠে ভেসে আসে ‘দাদা, আমাদের হুমায়ূন আহমেদ আর নেই।’ কথাটি শোনার পর কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে যাই। মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই কেঁদে উঠলাম। অশ্রু ধরে রাখতে পারিনি। আমাদের মধ্যে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। হুমায়ূন সবাইকে আপন করে নিতে পারত। একদম আপন। আমি তার অসুখের কথা জানতাম। সে যে মাঝখানে একবার ঢাকায় এসেছিল সে খবরও পেয়েছি। আশা করেছিলাম শীঘ্রই সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

কিন্তু সে যে সত্যি সত্যি না ফেরার দেশে চলে যাবে তা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। হুমায়ূন আহমেদের সহজ ও সাবলীল লেখার ভঙ্গি তাকে ঔপন্যাসিক হিসেবে যে জনপ্রিয়তা দিয়েছিল তা ঈর্ষণীয়। সত্যি কথা বলতে কী, সে আমাদের বাংলা ভাষার গর্ব। গত ৫০ বছরে যে কয়জন লেখক বাংলা সাহিত্যে জায়গা করে নিয়েছে সে তালিকার অনেক উপরে স্থান করে নিয়েছে হুমায়ূন। এমনকি কথাসাহিত্যে তার অবস্থান শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপরে। খুব সহজেই কঠিন ভাষাকে টুকরো করে পাঠকদের বোধগম্য করে তুলত। তার লেখার গভীরতা বিশাল। অনেক সময় অতি সহজ ও প্রাণোজ্জ্বল লেখার মধ্য দিয়েও বিজ্ঞান, দর্শন ও রসায়নের অনেক অজানা শব্দচয়ন ও বাক্যচয়ন প্রয়োগ করত। যা সমসাময়িক অন্য কোনো লেখকের মধ্যে দেখা যায় না। বাংলাদেশে অনেকে জনপ্রিয় লেখক রয়েছে। কিন্তু সে অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম। তার মধ্যে অনেক রস-জ্ঞান যেমন আছে, তেমনি অনেক বিষয়ে তার গভীর পড়াশোনার বিষয়টি বেশি ধরা পড়ে।

সবচেয়ে বড় কথা মানুষ হিসেবে সে ছিল হাসি-খুশি ও আড্ডাবাজপ্রিয়। তার অনেক স্মৃতি আমার মনে পড়ছে। যদিও সে বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তা ও পড়াশোনা এবং লেখার মধ্যে যে রস-জ্ঞান তা দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। হুমায়ূন আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল। অনেক জায়গায় আমরা একসঙ্গে বেড়াতে গিয়েছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। ঢাকায় গেলে তার বাড়িতে যেতেই হতো। নিউইয়র্কেও একবার একসঙ্গে ছিলাম আমরা। এ ছাড়া যখনই ঢাকায় যেতাম অন্য প্রকাশের মাযহার, হুমায়ূন ও আমি একসঙ্গে সময় কাটাতাম। গত বছরও তার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে তারা ঢাকা ক্লাবে আপ্যায়ন করে।

এ ছাড়া হুমায়ূনের আমন্ত্রণে আমার স্ত্রীকে নিয়ে তার স্বপ্নরাজ্য নুহাশ পল্লীতে গিয়েছি। খুব আনন্দেই সময় কাটিয়েছি সেখানে। প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সে বাংলাদেশের পাঠকের হূদয় জয় করে পশ্চিমবাংলায়ও এক বিশাল পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করেছিল। তার হিমু চরিত্রটি এখানেও তুমুল জনপ্রিয়। তার নন্দিত নরকে পড়ার পর মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বইটি খুবই ভালো লেগেছিল। এমনকি এখানকার দেশ পত্রিকায় বইটি সম্পর্কে একটি কলামও লিখি। তখন তাকে চিনতাম না। কিন্তু সেই কলামটির খবর সে ঠিকই পেয়ে গিয়েছিল।

তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সে আমাকে বলেছিল, নন্দিত নরক নিয়ে আমিই নাকি তার সাহিত্য জীবনে প্রথম সমালোচনা করি। যা তাকে প্রেরণা জুগিয়েছিল। এর পর থেকেই আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ থাকত। এপার বাংলায়ও সে সমান জনপ্রিয় ছিল। তার জনপ্রিয়তা এতই ছিল যে, দেশ পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় টানা আট বছর তার উপন্যাস ছাপা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনো লেখকের ভাগ্যে এই ভালোবাসা জোটেনি। এতেই প্রমাণ হয় তার ভক্তকুলের পরিধি কত বড়।'
 

 

বিডি-প্রতিদিন/ ২৩ অক্টোবর, ২০১৬/ আফরোজ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর