রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়নের নেপথ্যে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম আবাহনী চ্যাম্পিয়নের নেপথ্যে

আন্তর্জাতিক ফুটবলে ঢাকার ক্লাবগুলোর সাফল্য খুব একটা নেই। দেশের বাইরে প্রথম শিরোপা জেতার কৃতিত্ব রয়েছে আরামবাগের। মোহামেডান, ঢাকা আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা, শেখ রাসেল এবং শেখ জামালও দেশের বাইরে  চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কিন্তু এসব টুর্নামেন্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি ছিল না। ১৯৯২ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিটিসি আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা আবাহনী। ফাইনালে তারা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানকে হারিয়ে দেয়। এবার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো চট্টগ্রাম আবাহনী। যেখানে ফুটবল ফেডারেশন পারছে না, সেখানে স্বল্পদিনে ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাব হিসেবে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের আয়োজন করে রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে চট্টগ্রাম আবাহনী। শুধু তাই নয়, নিজেদের টুর্নামেন্টে শিরোপাও জিতেছে স্বাগতিক ক্লাবটি।

ফাইনালে কিংফিশার ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে পিছিয়ে থেকেও ৩-১ গোলে জয়ী হয়েছে। ভারতের কোনো প্রখ্যাত দলকে হারিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী শিরোপা জিতে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ঢাকা আবাহনী গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়। অন্যদিকে ঢাকা মোহামেডান সেমিফাইনালে উঠলেও ইস্টবেঙ্গলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। ট্রফি ঘরে তুললেও টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম আবাহনীর শুরুটা হয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে। এই হারের পর চট্টগ্রাম আবাহনীকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। দুর্বার গতিতে একের পর এক ম্যাচ জিতে স্বপ্নের ট্রফি ঘরে তুললেন এমিলি, জাহিদরা।

ফুটবলে শিরোপা সীমাবদ্ধ থাকত ঢাকার ক্লাবগুলোর মধ্যেই। কিন্তু চট্টগ্রাম আবাহনী এত বড় টুর্নামেন্টে সাফল্য পেল কীভাবে? আশা করা হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনীর এ সাফল্য দেশের ফুটবলকে নতুনভাবে জাগিয়ে তুলবে। সাবেক ফুটবলাররা বলছেন, এ সাফল্য সামনে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় দলের অনুপ্রেরণা জোগাবে। কারণ চট্টগ্রাম আবাহনী শুধু ইস্টবেঙ্গল নয়, হারিয়েছে আফগান চ্যাম্পিয়ন বাজান ও পাকিস্তান সেরা করাচি ইলেকট্রিককে। কথা হচ্ছে চট্টগ্রাম আবাহনীর সাফল্যের রহস্যটা কী? এ ব্যাপারে আলাপ হচ্ছিল কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের সঙ্গে। ফুটবল ক্যারিয়ারে ইতি টেনে ১৯৯৬ সালে মানিক প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। মোহামেডান-আবাহনীর দাপট চুরমার করে ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা প্রথম লিগ শিরোপা জিতে তারই প্রশিক্ষণে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা বা মোহামেডানকে অনেক শিরোপা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু শেখ কামাল ক্লাব কাপের ট্রফিটাকেই তিনি তার কোচিং ক্যারিয়ারে সেরা প্রাপ্তিই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম আবাহনীর নিজস্ব খেলোয়াড়রা এ টুর্নামেন্টে খেললে হয়তোবা এত বড় সাফল্য আসত না। এক্ষেত্রে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের অবদান স্বীকার করতেই হবে। তাদের ক্লাব কর্তৃপক্ষ ১২ জন ফুটবলারকে আমাদের ক্লাবের হয়ে টুর্নামেন্ট খেলার অনুমতি দেন। সত্যি বলতে কি, এতেই টুর্নামেন্টে চট্টগ্রাম আবাহনী ফেবারিট দলে পরিণত হয়। স্বল্প দিনের প্রশিক্ষণ হলেও ক্যাম্প ছিল শৃঙ্খলাবদ্ধ। খেলোয়াড়রা প্রতিজ্ঞা করেছিল মাঠে তারা উজাড় করে খেলবে। শিরোপা জিততে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স প্রদর্শন করবে। ছেলেরা কথা রেখেছে। দেখেন দলে কোনো কোনো খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ওরা ঠিকমতো অনুশীলন করে না। এমনকি ডিসিপ্লিন মানতে চায় না। আমার ক্যাম্পে দেখলাম সবাই সিরিয়াস। পুরোপুরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে টুর্নামেন্ট খেলেছে। আমি ছেলেদের বোঝাতে পেরেছি তোমরা যার যার পজিশনে তারকা খেলোয়াড়। মাঠে পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারলে তোমাদের পক্ষে শিরোপা জেতাটা কঠিন কিছু হবে না। ছেলেরা সেরা খেলাটা খেলতে পেরেছে বলেই সাফল্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে। সবাই ভালো খেলেছে। কিন্তু জাহিদ ও কিংসলে এলিটা অসাধারণ খেলেছে। এলিটাকে নাকি ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমিতো দেখলাম পুরো টুর্নামেন্টে ও ছিল সিরিয়াস। ম্যান অব দ্য ফাইনাল, ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কারই জিতেছেন এলিটা। অতিথি খেলোয়াড় ছিল বলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে চট্টগ্রাম আবাহনী কর্তৃপক্ষ আলোচনায় বসেন। সেখানে খেলোয়াড়দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যদি খেলতে গিয়ে বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়ে যান এবং এই কারণে সামনের মৌসুমে কোনো ক্লাব না নিলেও চট্টগ্রাম আবাহনী সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক দিয়ে পরবর্তী মৌসুমের জন্য চুক্তিবদ্ধ করবে। আসলে শিরোপা জিততে যে ধরনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার সেটা স্বল্পদিনের প্রস্তুতিতেও পূরণ করা হয়েছে। এ জন্য আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। ফাইনালে পিছিয়ে থেকেও আমরা ৩-১ গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছি। এতেই বুঝতে পারেন টিমের স্পিরিট কেমন ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি এ ট্রফি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলকে উৎসর্গ করেছি। কারণ শেখ রাসেল খেলোয়াড় না দিলে আমাদের হয়তো ইতিহাস গড়া সম্ভব হতো না।

সর্বশেষ খবর